'বঙ্গমাতা' পূর্ণিমা

ক্যারিয়ারে নতুন সংযোজন

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
দিল আরা হানিফ রিতা (পূর্ণিমা)
ঢাকার চলচ্চিত্রে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের নাম পূর্ণিমা। আসল নাম দিল আরা হানিফ রিতা। পূর্ণিমাই হয়তো একমাত্র অভিনেত্রী, যিনি খুব অল্প বয়সেই বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা হয়েছেন। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে অভিষেক হয় তার। ২৩ বছর আগে ১৯৯৭ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত 'এ জীবন তোমার আমার' দিয়ে শুরু হয় তার সিনেমা যাত্রা। এরপর থেকে অভিনয়ের পাশাপাশি লেখাপড়াও চালাতে থাকেন নায়িকা পূর্ণিমা। তবে দিন যত যেতে থাকে পূর্ণিমার তত জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, এক পর্যায়ে পড়ালেখায় ঠিক মতো মনোযোগী হতে পারেন না পূর্ণিমা। তার পরের গল্পটা আরও মসৃণ। ২০০৩ সালে বহুল আলোচিত 'মনের মাঝে তুমি' দিয়ে দুই বাংলায় হুলস্থুল ফেলে দেন তিনি। অশ্লীলতার কড়াল গ্রাসে দেশীয় চলচ্চিত্র যখন অন্ধকারে পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছিল, লজ্জা ও অপমানে নির্মাতারা যখন শখের চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিতে চাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই চলচ্চিত্রে ঝলমলে আলোর ঝিলিক ছড়ান পূর্ণিমা। সেই থেকে নিজের বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয় আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ঝলমল এক তারকা হয়েই জ্বলছেন তিনি। চলচ্চিত্রের গন্ডি পেরিয়ে যেখানেই তিনি পা দিয়েছেন, সেখানেই দু্যতি ছড়িয়েছেন। নাটকে অভিনয়, বিজ্ঞাপন, উপস্থাপনা ও রিয়েলিটি শোর বিচারক হয়েও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। শুধু তথাকথিত বাণিজ্যিক সিনেমাতেই নয়, সাহিত্যনির্ভর ছবিতে অভিনয় করেও সুনাম অর্জন করেন পূর্ণিমা। কবিগুরুর গল্প নিয়ে চাষী নজরুল ইসলামের 'সুভা' ছবিটিই তার অন্যতম প্রমাণ। একই পরিচালকের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'মেঘের পরে মেঘ' দিয়েও নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। এবার তার ক্যারিয়ারে যোগ হচ্ছে অন্যরকম এক সংযোজন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে চলচ্চিত্র 'চিরঞ্জীব মুজিব', যা নির্মাণ করছেন জুয়েল মাহমুদ। এতে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা চরিত্রে অভিনয় করছেন পূর্ণিমা। আর বঙ্গবন্ধু চরিত্রে থাকছেন আহমেদ রুবেল। গত সপ্তাহে মানিকগঞ্জ থেকে এর শুটিং করে এসেছেন পূর্ণিমা। ছবিটি তার ক্যারিয়ারের অন্যরকম এক মাইলফলক হিসেবে মনে করছেন তিনি। এ বিষয়ে অনেকটা উচ্ছ্বাসের সঙ্গে পূণির্মা বলেন, 'এটা একটি ঐতিহাসিক চরিত্র। তবে এখানে আমার উপস্থিতি কম পরিসরে। কিছুটা ক্যামিওর মতো। বঙ্গবন্ধুর যৌবনকালের সময়টুকুতে দেখা যাবে আমাকে। তিনি তখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে সারাদেশে আন্দোলন করে বেড়ান। আর আমি ঘর সামলাই। অল্প সময়ের হলেও খুব চ্যালেঞ্জিং একটা চরিত্র। এখানে আমাকে ইয়াং বয়সে দেখা যাবে। আশা করছি এ চলচ্চিত্রটি দেখে দর্শক অনেক কিছু জানতে পারবেন।' পূর্ণিমা জানান, ছবিতে তার অংশের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে অন্যদের শুটিং। ছবিতে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। চলচ্চিত্রটির নির্মাতা জুয়েল মাহমুদ বলেন, 'অনেকদিনের আশা ছিল ঐতিহাসিক গল্প নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করার। প্রথমেই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা চরিত্রটি নিয়ে বেশি ভেবেছি। অভিনেত্রী পূর্ণিমাকে আমার এ চরিত্রের জন্য মানানসই মনে হয়েছে। আশা করছি পূর্ণিমা অভিনীত চরিত্রটি দর্শকের ভালো লাগবে।' এ চলচ্চিত্রটি ছাড়াও পূর্ণিমা সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের লেখা উপন্যাস 'গাঙচিল' অবলম্বনে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। বাণিজ্যিক ধারার এ ছবিটি নির্মাণ করছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। এতে পূর্ণিমার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস আহমেদ। ছবিতে পূর্ণিমাকে দেখা যাবে মোহনা চরিত্রে। পূর্ণিমা বলেন, 'উপন্যাস-সাহিত্যনির্ভর গল্পে এখন কম ছবি নির্মিত হয়। মৌলিক গল্পের ছবি দর্শক পছন্দ করেন। সেটা মাথায় রেখেই ছবিটি করছি। পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে আবার চলচ্চিত্রে ফিরছি। আমি চাচ্ছিলাম এই ধরনের গল্পে কাজ করতে। ছবিতে একজন এনজিওকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। আশা করছি ছবিটি দর্শকরা ভালোভাবে গ্রহণ করবেন।' পূর্ণিমা ১৯৮১ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। তার বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তার পারিবারিক নাম দিল আরা হানিফ ও ডাক নাম রিতা। ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেন। ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন। তার মেয়ের নাম আরশিয়া উমাইজা। বর্তমানে তিনি সংসারকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সংসারকে ঘিরেই তার সকল চিন্তা-চেতনা। সম্প্রতি তিনি ওমরাহ পালন করে দেশে ফিরেছেন। পূর্ণিমা বলেন, অভিনয় আমার শখের জায়গা। তবে সংসারকে বাদ দিয়ে কখনোই অভিনয়ে পুরোপুরি ঝুঁকে যাওয়া সম্ভব নয়। সংসার সামলানোর পর যতটুকু সময় কিংবা সুযোগ হয়, ততটাই অভিনয়ে ব্যয় করব। এভাবেই কাটাতে চাই বাকি জীবন।'