বিলি আইলিশ

১৮তেই বাজিমাত

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
বিলি আইলিশ
সবেমাত্র বয়সটা আঠারো পেরিয়েছে। অবশ্য তার আগেই ইলেক্ট্রোপপের গায়িকা ও গীতিকার হিসেবে জুটেছে তারকা খ্যাতি। মার্কিন মুলুক ছাপিয়ে তার গাওয়া 'ওশেন আইস' ও 'ডোন্ট স্মাইল এট মি' গান দুটি বেজেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। এমনকি দেশের শপিংমলগুলোতে প্রায়শই শোনা যায় 'ওশেন আইস' গানটি। গত বছর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কেবল ভিডিও স্ট্রিমিং সাইট থেকেই আইলিশের 'ওশেন আইস' গানটি শোনা হয়েছে ৪৪ মিলিয়নবার। পপ গায়িকা হলেও গানের শব্দ প্রয়োগে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন সমকালীন অনেককেই। তার গানে উঠে এসেছে বাস্তবতা, সম্পর্ক ও বিচ্ছেদের করুণ অবয়ব। গত রোববার পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। তবে ভোল পাল্টে গেল লস অ্যাঞ্জেলেসের স্ট্যাপলস সেন্টারে। এ দিন প্রদান করা হয় বিশ্ব সংগীত জগতের সবচেয়ে বড় পুরস্কার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড-২০২০। সব হিসাবনিকাশ উল্টে আইলিশ শীর্ষ ৪ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার জিতেছেন। বাঘা বাঘা সব সংগীতশিল্পীকে অবাক করে দিয়ে বর্ষসেরা অ্যালবাম, বর্ষসেরা গান, বর্ষসেরা রেকর্ডলেবেল ও সেরা নবাগত শিল্পীর পুরস্কার বগলদাবা করেছেন। এক কথায় গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডসের ৬২তম আসর ছিল বিলি আইলিশময়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকায় আইলিশই ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সি। আর রেকর্ড গড়ে প্রতিটি বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন তিনিই। গ্র্যামি অনুষ্ঠানের অতিথিরা তো দূরের কথা, বিলি নিজেই বুঝতে পারেননি তার হাতে উঠতে যাচ্ছে এতগুলো সেরা পুরস্কার। তাই পুরস্কার জেতার পর শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছেন বারবার। এমনকি সেরা অ্যালবাম হিসেবে বিলির 'হোয়েন উই ফল অ্যাস্স্নিপ, হোয়্যার ডু উই গো'র নাম যখন উচ্চারিত হয়, তখন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিল তার। পুরস্কার হাতে নিয়ে তাই বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন, 'আমার মনে হয়, আমি নই, এই পুরস্কারের যোগ্য দাবিদার ছিলেন আরিয়ানা গ্রান্ডে।' এখানেই শেষ নয়, তার 'ব্যাড গাই' হয়েছে বর্ষসেরা গান। যদিও এ গানের কৃতিত্ব ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছে বড় ভাই ফিনেস ও কনেলের সঙ্গে। অহ। আরেকটা কথা, সেরা পপ ভোকাল অ্যালবামের পুরস্কারও উঠেছে বিলি আইলিশের হাতেই। ক্ষুদে এই জীবনে অনেক কিছুই জিতেছেন বিলি আইলিশ। যদিও একটা সময় তাকে 'ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে'ও ভুগতে হয়েছিল। বার্লিনের একটি ঘরে রাত দিন এক করে কান্না করতেন বিলি। অবসাদ আর একাকিত্ব তার জীবনকে এতটাই ভয়ঙ্কর করে তুলেছিল, একপর্যায় আত্মহত্যা করবেন বলেও ঠিক করেছিলেন। তবে মা, তেমনটা হতে দেননি। পরম মমতায় আগলে রেখেছেন মেয়েকে। সম্প্রতি নিজের সম্পর্কে এমনই কিছু তথ্য দিয়েছেন মার্কিন পপ শিল্পী। কদিন আগে 'সিবিএস দিস মর্নিং' নামের একটি টিভি অনুষ্ঠানে এসে ভক্তদের উদ্দেশে বলেন, 'আমার যেসব ভক্তরা অন্ধকার সময় পার করছে তাদের সাহায্য করতে চাই। তাদের কাঁধে হাত রেখে আমি বলতে চাই, দয়া করে নিজের যত্ন নাও। নিজের প্রতি দয়াবান হও। নিজেকে আঘাত করা থেকে বিরত থাক। কারণ, একটা সময় আমিও এমন দিন কাটিয়েছি।' ২০১৫-১৬ সালের মাঝামাঝি তারকা খ্যাতি জুটে তার কপালে। এত অল্প বয়সে বিশ্বব্যাপী তারকা খ্যাতি তার ব্যক্তিগত জীবনকে বেশ প্রভাবিত করে। খ্যাতির বিড়ম্বনায় হারিয়ে যায় কাছের বন্ধু। একটা সময় বার্লিনের হোটেল কক্ষে একা একা কাঁদতেন তিনি। বিষয়টা এমন, সব থেকেও কিছু নেই। এমনও হয়েছে, রাতে শো করতেন আর দিনে দরজা বন্ধ করে অঝরে কান্না করতেন। তবে মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি এখন স্বাভাবিক। বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। হয়ে উঠেছেন আগের চেয়ে আরও সরেস। 'ইফ আই ওয়ানা অ্যান্ড মি' গানে জীবনের এসব কথা তুলেও ধরেছেন তিনি। এখন অবশ্য সময় পেলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তদের ভালোবাসার মন্ত্র শেখান বিলি আইলিশ। বিষণ্নতাগ্রস্ত ভক্তদের মাঝেমধ্যেই কাউন্সিলিংও করান মার্কিন পপ গায়িকা। সংগীতাঙ্গনের পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়েও বিলি সচেতন। প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের হাইল্যান্ডে বিলির জন্ম। তার বাবা ম্যাগি বিয়ার্ড ও মা পেট্রিক দুজনেই ছিলেন অভিনয়শিল্পী। পাশাপাশি মা টুকটাক গান গাইতেন। মূলত মা-বাবার অনুপ্রেরণায় গানের জগতে আসেন। মাত্র আট বছর বয়সে স্থানীয় একটি গানের দলে যোগ দেন বিলি। গানের প্রথম পাঠ সেখানেই। পরে ২০১৫ সালে 'ওশেন আইস' নামের একটি গান প্রকাশ হলে দুনিয়াব্যাপী তার জনপ্রিয়তা বাড়ে। প্রতিবছরই কোনো না কোনো সেরার পুরস্কার হাতে উঠছে তার। সেই ধারাবাহিকতার চিত্র ছিল এবারের গ্র্যামি পুরস্কারেও।