প্রণয়ের নৌকায় ভাসছি দুজন

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও নুসরাত ইমরোজ তিশা
গল্পের শুরুটা আলোচনার টেবিলে। একটি নাটকের জন্য নির্মাতা ফারুকীর সঙ্গে বসেছিলেন তিশা। এক কথা দু'কথায়, তিশাকে মনে ধরে পরিচালক সাহেবের। অবশ্য তিশাকে দেখার পর ভালো না লাগার কারণও নেই। এরপর তিশাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি কাজও করেছেন ফারুকী। তবে ভালোবাসার কথা সরাসরি বলার সাহস ছিল না তার। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। একবার তো সাহস করে বলেই ফেললেন, 'তোমার ফটোকপি কাউকে পেলে, আমি বিয়ে করতাম।' ততদিনে তিশার বোঝতে বাকি নেই, ফারুকীর মনে কি চলছে। তিশাও কম যান না। নায়িকা বলে কথা! এত সহজেই কি আর মন চুরি করতে দেবেন? বুঝেও না বোঝার ভান করতেন। আর মনে মনে অপেক্ষা করতেন, ওপাশের মানুষটি কখন ট্রিগারে চাপ দেবেন। কখন মুখ ফুটে বলবেন, 'আমি তোমাকে ভালোবাসি।' বলবেন-ই বা কিভাবে? তখনো তিশা ফারুকীকে ভাইয়া বলেই সম্বোধন করত। একবার ফারুকী তিশাকে উদ্দেশ করে বললেন, 'তোমার যদি বড় বোন থাকত, তাহলে আমি তাকে বিয়ে করতাম।' জবাবে তিশাও সাফ জানিয়ে দিলেন, 'হঁ্যা ভাইয়া, আমার কোনো বড় বোন থাকলে আপনার মতো একজনের সঙ্গেই বিয়ে দিতাম।' নায়িকার এমন স্বভাব সুলভ কথায় রীতিমত ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেতেন নির্মাতা। তবে হাল ছাড়েননি। এমনকি হাত গুটিয়ে বসেও থাকেননি। নিজের এমন উড়ো উড়ো প্রেমের গল্প অবলম্বনে নির্মাণ করেছেন 'সিক্সটি নাইন' নামের একটি নাটক। সেখানে তিশা আর ফারুকীর প্রেমের প্রতিফলন প্রতিটি পরতে পরতে দেখানো হয়েছে। সে কথা ফারুকী স্বীকারও করেছেন অকপটে। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তিশাকে সরাসরি বলে বসলেন, 'এই মেয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। করবা বিয়ে?' ফারুকীর মুখে এমন কথা শুনে খুশি হওয়ার বদলে তিশার অনেক রাগ হলো। রাগের মাথায় বলেই বসলেন, 'আর একবারও যদি বিয়ের কথা বলছো, তাহলে আমি জীবনে বিয়েই করব না।' ম্যাডামের হাতে এমন ঝাড়ি খেয়ে পরিচালক সাহেবের হুঁশ ফিরল। মাথায় আসতে শুরু করল একের পর এক দুশ্চিন্তা। দেখা গেল বিয়ের পর দুজনের মিল হচ্ছে না। ওর একটা পছন্দ আমার অন্যটা। সম্পর্কটা টিকবে তো? ততদিনে অবশ্য দু'পরিবারকে জানানো হয়ে গেছে বিয়ের কথা। তারাও রাজি। ফারুকীর পরিবারের লোকজনেরও তিশাকে ভালো লাগতো। কারণ, প্রেমের শুরু থেকেই ফারুকীর বাসায় আসা যাওয়া ছিল তিশার। সব দুশ্চিন্তা, জল্পনা ও কল্পনাকে পাশ কাটিয়ে অবশেষে ১৬ জুলাই, ২০১০ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন এ দুটি মানুষ। অন্য পাঁচ-দশটা দম্পত্তির মতো নয় তিশা ফারুকীর সংসার। তাদের গল্পটা একদমই গন্ডির বাইরের। দুটি মানুষ শুরু থেকেই দু'ধরনের। বিয়ের আগে তো নয়ই, বিয়ের পরেও একজন অন্যজনের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি। এমনকি কাজকম্মেও বাগড়া দেননি। মোদ্দা কথা, বিয়ের পর রং পাল্টে যায়নি তাদের ভালোবাসার। তিশার মতে, 'ফারুকী ক্রিয়েটিভ মানুষ। আমি ওকে ওর মতোই থাকতে দিয়েছি। আমার জন্য আলাদা কোনো প্রেসার নিতে দেইনি। কিংবা আমার সিদ্ধান্তও তার ওপর কখনো চাপিয়ে দেইনি। এটাই আমাদের অন্যরকম ভালোবাসা।' ফারুকীর কণ্ঠেও একই সুর। 'আমি আর তিশা একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে দুটি মানুষ এক হওয়ার সিদ্ধান্ত নেইনি। দুটি মানুষের শতভাগ মিল কখনোই হবে না। যদিও আমরা দুজনই দুজনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল।' দশ বছরের সংসার জীবনে তার প্রতিফলন হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে। কে কাকে আগে চমকে দেবেন, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। এমনকি তাদের ঝগড়াঝাটিও হয়। এ নিয়ে নাম্বারিং করলে তিশার নম্বর থাকবে একটু উপরে। তবে তিশা রেগে গেলে ফারুকী সঙ্গে সঙ্গে সরি বলেন। যদিও সেটা সরাসরি নয়। ফারুকীর ভাষায়, 'তিশা রেগে গেলে আমি ওর চারপাশে ঘুরঘুর করতে থাকি। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করি। জানতে চাই ওর কাজের খবর কি। পরিবারের খবর কি। তিশা তখন বুঝতে পারে যে আমি সরি বলা জন্যই এমনটা করিছ। ও হেসে দেয়।' এ জুটির বিশেষ দিবস নিয়েও থাকে আলাদা পরিকল্পনা। কাজের ফাঁকে একটু সময় বের করে বিশেষ দিনগুলো উদযাপন করতেও বেশ পটু তারা। কখনো আবার কাজ করতে করতেই বিশেষ দিনগুলোকে বিশেষভাবে পালন করেন। তেমনই বিশেষভাবে পালিত হতে যাচ্ছে ফারুকী-তিশার এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ফারুকীর 'শনিবার বিকেল' ছবিটি ১৫-১৬ ফেব্রম্নয়ারি প্রর্দশিত হবে প্যারিসের একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। এতে অংশ নিতে যাবেন দুজনেই। দূরের পথ হওয়ায় পেস্ননে চড়ে উড়াল দিতে হবে ১৪ তারিখেই। মানে ভালোবাসা দিবসে। এ নিয়ে তিশা বলেন, 'ভালোবাসা দিবস যেভাবেই উদযাপন করি না কেন? সবচেয়ে বড় বিষয়, ভালোবাসার মানুষটি পাশে থাকলে আমার কাছে প্রতিটি দিনই ভালোবাসা দিবস।'