ঝড়ের কবলে শাবনূর

দীর্ঘদিন ধরেই সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন শাবনূর। কিন্তু ছবি না করলেও ভক্তদের কাছে তারা হয়েই জ্বলজ্বল করছেন তিনি। চলচ্চিত্র পরিবারের কাছেও অন্যরকম এক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি। যার নমুনা পাওয়া যায় তিনি যখন দেশে ফেরেন। শাবনূর যখনই দেশে ফেরেন, তখনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে নির্মাতারাও ভিড় জমান। গণমাধ্যম কর্মীদেরও অতি উৎসাহী হতে দেখা যায়...

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
শাবনূর।
শাবনূর। দেশীয় চলচ্চিত্রের অপরিহার্য এক তারকার নাম। অথচ তারকা কিংবা নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা কখনোই ছিল না তার। গুণী নির্মাতা এহতেশামের অনুরোধেই সিনেমাপাড়ায় পা রাখা। শাবনূরের মধ্যে নাকি শাবানা, ববিতার প্রতিচ্ছবি লুকিয়ে আছে! কিন্তু প্রথম 'চাঁদনী রাতে' ছবির ব্যর্থতায় অভিনয় থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তিনি। ছবির নায়ক ছিলেন সাব্বির। তারপরের গল্পটা যদিও চমকপ্রদ। নবাগত চিত্রনায়ক সালমান শাহ ও শাবনূরকে জুটি করে পরিচালক জহিরুল হক নির্মাণ করেন 'তুমি আমার' ছবিটি। আর এ ছবির মাধ্যমেই যেন জ্বলে ওঠেন শাবনূর। তারকা বনে যান রাতারাতি। সেই শুরু। তারপর যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন সেখান থেকেই সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন। সে সঙ্গে ঢাকাই চলচ্চিত্রে স্থায়ী একটা আসন গড়ে তোলেন তিনি। বর্তমানে অভিনয়ে নেই বললেই চলে। দীর্ঘদিন ধরেই সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন শাবনূর। কিন্তু ছবি না করলেও ভক্তদের কাছে তারা হয়েই জ্বলজ্বল করছেন তিনি। চলচ্চিত্র পরিবারের কাছেও অন্যরকম এক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন তিনি। যার নমুনা পাওয়া যায় তিনি যখন দেশে ফেরেন। শাবনূর যখনই দেশে ফেরেন, তখনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে নির্মাতারাও ভিড় জমান। গণমাধ্যম কর্মীদেরও অতি উৎসাহী হতে দেখা যায়। সম্প্রতি লম্বা এক সময় কাটিয়ে ফের অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন শাবনূর। সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই আবার আলোচনায় চলে এসেছেন এই নায়িকা। সোমবার পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে চিত্রনায়ক সালমান শাহর মামলা নিয়ে। সেখানে তারা দাবি করছে হত্যা নয়, আত্মহত্যা করেছেন সালমান শাহ। পিবিআই'র ডিআই?জি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, 'পিবিআই তদন্তে সালমান শাহকে হত্যার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পারিবারিক কলহ ও মানসিক যন্ত্রণায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।' প্রতিবেদনটিতে সালমান শাহ'র মৃতু্যর বেশ কিছু কারণ উলেস্নখ করেন পিবিআই প্রধান। এগুলো হলো- সালমান শাহ ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা, সামিরার সাথে দাম্পত্য কলহ, সালমান শাহর মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা। এছাড়াও জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেওয়া, সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনের অপূর্ণতাও কারণ। জানান, সালমান একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার বা আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় শাবনূরের নাম ওঠায় ফের সরগরম হয়ে উঠছে চলচ্চিত্র পরিবার। যদিও সালমান শাহর মৃতু্যর শুরু থেকেই শাবনূরকে ঘিরে নানা কানাঘুষা চলে আসছে চিত্রপুরীতে। তবে মৃতু্যর ২৪ বছর পর পিবিআই-এর এ প্রতিবেদনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাবনূর। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অস্ট্রেলিয়া থেকে শাবনূর বলেন, কীসের জন্য আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সালমান আমার সহকর্মী ছাড়া অন্য কিছুই ছিল না। এমনকি তাকে আমি ভাইয়ের মতো দেখতাম। সে আমাকে পিচ্চি বলে ডাকত। সালমান ও আমাকে জড়িয়ে এ ধরনের কথা কেউ যদি বলেও থাকে, সেটার আমি ঘোর বিরোধিতা করছি। সালমান শুধুই আমার নায়ক ছিল, সহশিল্পী ছিল, বন্ধু ছিল- এর বাইরে আর কোনো সম্পর্ক ছিল না। একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এত বছর পর এত বিশ্রী কথা বলার মানসিকতা কীভাবে সবার হয়, সেটাও আমি বুঝি না।' শাবনূর আরও বলেন, আমি তখন অবিবাহিত আর সালমান বিবাহিত। ওর স্ত্রীর সঙ্গেও আমার একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। শুটিংয়ে সালমানের স্ত্রী সব সময় আমাদের সঙ্গেই থাকত। প্রেমের সম্পর্কের কিছু একটা যদি হতো, এটা তখন সবাই বুঝতে পারত। এত বছর পর এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাকে জড়িয়ে নোংরা উক্তি করার ব্যাপারটি মোটেও ভালো লাগছে না। কিছু মানুষ আমাকে জড়িয়ে গুজব ছড়িয়েছে। এখনো ছড়াচ্ছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি, সামিরাকে অতিরিক্ত ভালোবাসত সালমান। সেই ভালোবাসার মধ্যে আরেকজন ঢোকার কোনো প্রশ্নই আসে না। এসব কথা কেন ছড়ানো হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না। এ ধরনের কিছু যদি আদৌ ঘটত, তাহলে কারও অজানা থাকার কথা নয়। কারও সঙ্গে বেশ কয়েক দিন কথা বলার একটা পর্যায়ে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়। সালমান আর আমি অনেকগুলো ছবিতে কাজ করেছি। সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সালমান আর আমার মন-মানসিকতা মোটেও ও রকম ছিল না।' শুধু এবারই নয়, এর আগে অসংখ্যবার সালমান শাহকে নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন শাবনূর। পাশাপাশি সালমান শাহর জন্মদিন ও প্রয়াণ দিবসেও তাকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ করেছেন শাবনূর। এই তো কয়েকদিন আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে সালমান শাহকে নিয়ে আরেক চিত্রনায়ক ও বর্তমানে সংসদ সদস্য ফারুকের একটি মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠে। যেখানে ফারুক বলছেন, 'সালমান শাহ কি এমন? হাজারো সালমান শাহকে বিট করে দিয়েছে শাকিব।' ফারুকের এমন মন্তব্য কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না শাবনূর। ঢাকাই ছবির গুণী এ অভিনেত্রী বলেছিলেন, 'আসলে সালমান শাহকে তুলনা করে আমাদের প্রিয় অভিনেতা ফারুক সাহেব কি বলেছেন সেটা আমার চোখে পড়েনি। শাকিব খানের সঙ্গে তুলনা করা হলে সেটা তার ব্যাপার। তবে আমি মনে করি, সালমান শাহ চলে গেছেন। সে আর আমাদের মাঝে নেই। তাকে কারও সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। সালমান ও শাকিব দুজনই আমাদের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক। মনে রাখতে হবে- দুজন দুই সময়কে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জীবনে অনেককে সহশিল্পী হিসেবে পেয়েছি। কিন্তু কেউ কেউ ছিলেন সহশিল্পীর চেয়েও বেশি কিছু। সালমান শাহ তাদেরই একজন। যে শুধুই আমার সহশিল্পী ছিলেন না। ছিলেন বন্ধু, সুহৃদ ও অনেক কিছু।' এর কয়েকদিন পরই ঢাকা ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান শাবনূর।