বিশেষ জন্মদিন বলে কথা!

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
মামুনুর রশীদ
প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে যারা সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের মধ্যে সবার উপরেই এ মানুষটির নাম উচ্চারিত হয়। পাশাপাশি তিনি নাটকের সংলাপ, অভিনয়ের মুন্সিয়ানা আর অনবদ্য নাট্য পরিচালনার মধ্য দিয়ে ঢাকাই নাটককে করেছেন সমৃদ্ধ। ১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রম্নয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এ নাট্যব্যক্তিত্ব। মজার বিষয় হচ্ছে ৭২ বছর বয়সে পা রাখলেও লিপ ইয়ারের কারণে এবার তার ১৮তম জন্মদিন পালিত হবে। তবে একদিন নয়, টানা তিনদিনব্যাপী পালিত হবে তার জন্মদিন। বিশেষ জন্মদিন বলে কথা। নিজের জন্মদিন নিয়ে এই অভিনেতা বলেন, 'চার বছর পর পর জন্মদিন আসে আমার জীবনে। চার বছর জন্মদিনের আনন্দ না পাওয়ার যে আক্ষেপ, সেটি অনন্য হয়ে আসে, যখন জন্মদিন পাই। আপনাদের এত ভালোবাসার যোগ্য আমি কি না, জানি না। দোয়া করবেন সবসময় যেন আপনাদের এই ভালোবাসা ও বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে যেতে পারি।' অনেকটা কৌতুকের স্বরে তিনি বলেন, 'খুব মজা পাই যখন দেখি, বৃদ্ধদের তালিকায় চলে গেলেও জন্মদিনে আমি এখনো তরুণ। বয়স আমার ৭২, কিন্তু জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে মাত্র ১৮তম।' এদিকে নাট্যজন মামুনুর রশীদের জন্মদিন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে আজ থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে 'দ্রোহ দাহ স্বপ্নের নাট্য আয়োজন' শিরোনামের ছয় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন। এ উৎসবে মামুনুর রশীদ রচিত পাঁচটি নাটকের মঞ্চায়ন হবে। পাশাপাশি থাকবে সংগীত পরিবেশনা, নৃত্য, সেমিনার, প্রদর্শনী, গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, সংবর্ধনা ও থিয়েটার আড্ডা হবে। আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। সংগীত, নৃত্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি থাকবেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং ভারতের থিয়েটার ও চলচ্চিত্র সমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হবে। স্বাগত বক্তব্য থাকবে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। থাকছে নৃত্য পরিবেশনাও। এটি করবেন সাদিয়া ইসলাম মৌ ও তার দল। সংগীত পরিবেশন করবেন বুলবুল ইসলাম, অণিমা রায় ও শারমীন সাথী ইসলাম। সরোদ বাজাবেন ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান। আগামীকাল সকাল ১০টায় সেমিনার হলে 'নাট্যচর্চা, সাধ নাকি স্বপ্ন' বিষয়ে থাকবে সেমিনার। মূল বক্তা শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বেলা সাড়ে ৩টায় 'যেভাবে বেড়ে উঠি' শিরোনামে বক্তব্য দেবেন মামুনুর রশীদ। এরপর জাতীয় নাট্যশালায় পার্বতীপুরের ইয়াংস্টার থিয়েটার মঞ্চায়ন করবে 'রাষ্ট্র বনাম' নাটকটি। এদিন পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চায়ন করবে মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় নাটক 'রাঢ়াঙ'। ২৯ ফেব্রম্নয়ারি সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নাট্যশালায় মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় আরণ্যক নাট্যদলের নতুন প্রযোজনা 'ফেসবুকে'র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে। ১ মার্চ একই নাটকের দ্বিতীয় প্রদর্শনী হবে। ২ মার্চ জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চায়িত হবে মামুনুর রশীদের রচনা ও ফয়েজ জহিরের নির্দেশনায় বাংলা থিয়েটারের প্রযোজনা 'চে'র সাইকেল'। ৩ মার্চ জাতীয় নাট্যশালায় মামুনুর রশীদের রচনা ও নির্দেশনায় 'সংক্রান্তি' নাটকের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপনী হবে। মামুনুর রশীদ কেবল নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালকই নন স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের মঞ্চ আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। তার হাত ধরেই অনেক অভিনেতা, অভিনেত্রী মঞ্চ নাটকে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। ১৯৬৭ সালে মামুনুর রশীদ তদকালীন পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে শুরু করেন। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হোন। যুদ্ধকালীন তার লেখা নাটক 'পশ্চিমের সিঁড়ি' কলকাতার রবীন্দ্র-সদনে মঞ্চায়নের চেষ্টা করেন; কিন্তু তার আগেই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীনতা অর্জন করায় নাটকটি আর তখন মঞ্চায়িত হয়নি। ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে তিনি তৈরি করেন তার আরণ্যক নাট্যদল। এই দল থেকে তৈরি হয়েছে অসংখ্য নাট্যকর্মী। তিনি টিভি নাটকের জন্যও কাজ করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য চিত্রনাট্য। তার নাটকর্মে সমসাময়িক সমস্যা, সমাজের অসঙ্গতি, নিচু শ্রেণির মানুষে সংগ্রামী জীবন বারবার উঠে এসেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সামাজিক ইসু্য নিয়ে নাটক রচনা ও নাট্য পরিবেশনার জন্য বাংলাদেশের নাট্য জগতে মামুনুর রশীদ অন্য এক নাম। গন্ধর্ব নগরী, ওরা কদম আলী, ওরা আছে বলেই, ইবলিশ, এখানে নোঙর, গিনিপিগ, অববাহিকা, মানুষ, পাবলিক, ইতি তোমার আমি, সুন্দুরী, এখানেই নোঙরসহ অসংখ্য নাটকের স্রষ্টা এই নাট্যজন। নাট্যশিল্পের প্রতি তার ভালোবাসা শুরু হয় টাঙ্গাইলের নিজ গ্রামে যাত্রা ও লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় পরিচয়ের মাধ্যমে। মামুনুর রশীদ বহুবার বলেছেন গ্রামের যাত্রা ও লোকজ সংস্কৃতি তার নাট্যভাবনাকে খুবই প্রভাবিত করেছিল। নাট্যকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে একুশে পদক দেওয়া হয় মামুনুর রশীদকে।