নারী এখন প্রতিবাদ করতে শিখেছে

'প্রতিবন্ধকতা' আর নারী- দুটো যেন একে অপরের সঙ্গে সম্পৃত্ত। ঘর থেকে দু'পা বাড়ালেই প্রতিবন্ধকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ব্যবস্থায় আধুনিকায়নের মোড়ক পরলেও নারীকে নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। ফলে একজন চাকরিজীবী নারী কিংবা সেলিব্রেটি নারী, সমাজের বাঁকা দৃষ্টি থেকে কেউই সামগ্রিকভাবেই রেহাই পাচ্ছেন না। ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে এসব নিয়েই মনের আগল খুলে কথা বলেছেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। স্পষ্ট কথা বলা কিংবা কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই মুখের ওপর সত্যি কথা বলার জন্য তার আলাদা একটা পরিচয় আছে মিডিয়ায়। এবারের নারী দিবসে নারী ও নারীর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও বাস্তবতা নিয়ে কথা বললেন মেলা প্রতিবেদক রায়হান রহমানের সঙ্গে-

প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আশনা হাবিব ভাবনা
হেনস্তা হওয়া যেন নারীর নিয়মিত ঘটনা... নারী হিসেবে কেবল শোবিজ অঙ্গনেই নয়, সর্বক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিদিনই কেউ না কেউ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, কেউ না কেউ মেয়েদের বুক চেপে দিচ্ছে। কলেজের ছাত্রী হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অথবা কর্মজীবী; নারী হিসেবে 'হ্যারাজমেন্ট' হওয়া নিয়মিত ঘটনা। কোথাও হয়তো কম, কোথাও একটু বেশি। যখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ যায় তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি হয়। আবার কেউ কেউ মানসম্মান খোয়ানের ভয়ে মুখ বোজে সহ্যও করে নেয়। ফেসবুকের কমেন্ট অপশন বন্ধ করে দিয়েছে... কদিন বাদেই পহেলা বৈশাখ আসবে। এ আয়োজনে সবাই চাইবে নিজেকে রাঙাতে। হয়তো আমি বের হবো আমার কোনো প্রিয়জনের সঙ্গে। সঙ্গে গাড়ি থাকবে, ড্রাইভার থাকবে। কিন্তু এমন অনেক মেয়ে আছে, তার সঙ্গে যাওয়ার মতো কেউ নেই। দেখা গেল, বৈশাখ পালন করতে গিয়ে মেয়েটি ধর্ষিত হয়ে বাড়ি ফিরল। সব জায়গাতেই আমাদের অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকতে হয়। বিশেষকরে কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাধ্য হয়ে আমার ফেসবুকের কমেন্ট অপশন বন্ধ করে দিয়েছি। প্রতিটা সেলিব্রেটির ছবির নিচে একেকজন কী সব উল্টাপাল্টা মন্তব্য করে। এমনও হয়েছে, কিছু কুলাঙ্গার ছবির নিচে কমেন্ট করেছে, 'মাল', 'সেক্সি'। আমরা আসলে কোন দিকে যাচ্ছি? নারীরা এখন কথা বলতে পারে.. নারীর স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন জনের ভিন্ন মতামত থাকতে পারে। আমার কাছে নারীর স্বাধীনতার ব্যাখ্যা এক রকম, একজন পার্লারে চাকরি করা মেয়ের কাছে হয়তো অন্যরকম। ব্যক্তিগতভাবে বলব, আমি স্বাধীন। হাজারটা প্রতিবন্ধকতা এলেও সেটা মোকাবিলা করার মতো প্রস্তুতি আমার থাকে। আমার সে ধরনের মানসিক শক্তিও আছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমি আর্থিকভাবে সচ্ছল। ফলে একটি কাজ আমাকে করতেই হবে- এমন নয়। সেটা আমার ভালো লাগলে করি, ভালো না লাগলে করি না। লেখা হোক, কিংবা অভিনয়, কেউ আমাকে কাজ করাতে বাধ্য করতে পারে না। তবে ২০২০-এ দাঁড়িয়ে যদি প্রশ্ন হয়, নারীরা কতটুকু এগিয়ে গেছে? সে ক্ষেত্রে আমার উত্তর হবে, অনেক দূর এগিয়ে গেছে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, নারীরা এখন কথা বলতে পারে। সব কিছু মাথা পেতে নেয় না। একটা সময়তো বেশির ভাগ নারীরা কথাই বলতো না। তাদের প্রতিবাদ করার কোনো সাহস ছিল না। দেখা যেত দিনের পর দিন স্বামীর নির্যাতন সহ্য করছে মুখবুঝে। কিন্তু সে সুযোগটা এখন আর নেই। মেয়েরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে তারা মুখ খুলছে। একজনের দেখা দেখি অন্যজনও কথা বলার সাহস পাচ্ছে। কদিন আগেই হ্যাসট্যাগ মিটু নিয়ে পুরো দুনিয়ায় আলোড়ন তৈরি হলো। এর নেপথ্য কারণ হলো, এখনকার মেয়েরা আর্থিকভাবে নিজেকে সচ্ছল করে তোলছে। পারিবারিক সচ্ছলতা চেয়ে নিজেকে সচ্ছল করা খুব বেশি জরুরি। মানতেই হবে, যখন একজন নারী আর্থিকভাবে সচ্ছল তখন তার কথা বলার সাহস তৈরি হয়। তিনি তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন। নারীকে অবজ্ঞা করার যৌক্তিকতা নেই.. আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, মেয়েদের সাংসারিক কাজকে কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় না। দেখা গেল, একজন স্ত্রী বা একজন মা চাকরি করেন না। তবে তিনি সংসারে নিয়মিত কাজ করছেন। আর যেহেতু এই কাজের বিনিময় তার কোনো উপার্জন হচ্ছে না, ফলে সংসারে তার কোনো আধিপত্য থাকে না। এ ধারা থেকে আমাদের বের হতে হবে। যে মেয়েটি কাজ করছে তারও যেমন অধিকার আছে, যে কাজ করছে না তারও সমান অধিকার আছে। আজকের দিনে নারীকে অবজ্ঞা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এতে সমাজ রাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থে লোকসান। এবং অন্যান্য... এবারের নারী দিবস উপলক্ষে কোনো বিশেষ নাটকে কাজ করার সুযোগ হয়নি। নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে নারী দিবসের নাটকে কাজ করতে পারিনি। আর 'ভয়ঙ্কর সুন্দর' করার পর মনে হয়েছে, এর চেয়ে ভালো কোনো চিত্রনাট্য পেলে আবারও বড় পর্দায় কাজ করব। নচেৎ করব না। এর মধ্যেই বেশ কিছু চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য এসেছে। তবে আমার মনে ধরেনি।