নারী কোনো ভোগ্যপণ্য নয়

প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

তারার মেলা ডেস্ক
লেডি গাগা
একবার দু'বার নয়, ছয়বার গ্র্যামিজয়ী মার্কিন পপ তারকা লেডি গাগা। একযুগেরও বেশি সময় ধরে গানে অদ্ভুত সব ছন্দ উপস্থাপনা করে জাদুকরী এক মোহ সৃষ্টি করেছেন। শুধুই কি গান? স্বল্পবসনা হয়ে স্টেজে উঠে উদ্যম নৃত্যের জন্যও তার খ্যাতি রয়েছে। গাগার শো মানেই কয়েকশ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য, লাখো লোকের সমাগম। কার্যতই বিশ্ব সংগীতাঙ্গনে তার প্রভাব ও আধিপত্তের শেষ নেই। তবে নারী হওয়ার কারণে সেই গাগাকেও মুখোমুখি হতে হয়েছে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে সেসব নিয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। পাশাপাশি আহ্বান জানিয়েছেন নারী জাগরণের। এ সাক্ষাৎকারে গাগা বলেন, 'কোনো দিন স্বপ্নেও ভাবিনি যে আমার জীবনটা কখনো এই পর্যায়ে এসে পৌঁছাবে; কোনো দিন শুধুই নারী হওয়ার জন্য আমাকে বিশেষভাবে সম্মান জানানো হবে। এটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। জীবনে এমন একটা দিনের কথা ভাবতেও পারিনি। সত্যিই আমি অনেক সৌভাগ্যবান এমন একটি ইন্ডাস্ট্রির অংশ হতে পেরে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, নারীরা বিনোদন দেওয়ার কোনো ভোগ্যবস্তু নয়। আমরা সাধারণ একটা ছবি নই- যা দেখলে কারও মুখে হাসি ফুটবে বা কারও উত্তেজনা বাড়বে। আমরা আজীবন চলতে থাকা কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতার অংশও নই, যারা সব সময় সৌন্দর্য নিয়ে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই থাকবে। আমরা হলিউডের নারীরা একেকটা স্বতন্ত্র কণ্ঠ। আমাদের চিন্তাধারা গভীর, আমাদের পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী, বিশ্বাস দৃঢ়। আমরা কথা বলার আর প্রতিবাদ করার শক্তি রাখি, যখন আমাদের দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। একটু থেমে লেডি গাগা আরও বলেন, 'আমি আজ আমার সব ক্ষমতা ফেরত চাই। এই বিনোদন জগতেরই প্রভাবশালী একজনের দ্বারা আমি যৌন নিযার্তনের শিকার হয়েছিলাম। এখনো একজন নারী হিসেবে সেই নিযার্তনকারীর নাম বলার মতো সাহস আমার হয়নি। আমি আজও এ কারণে প্রচন্ড যন্ত্রণায় ভুগি, কোনো শক্তি পাই না, সাহস পাই না। কিন্তু আজ আমি ঠিক করেছি, আর না, আমি আমার হারানো সেই শক্তি ফেরত চাই। তাই আজ আমি ছেলেদের জন্য তৈরি এই উদ্ভট সু্যট-প্যান্ট পরেছি। আমি সবাইকে বোঝাতে চাই যে, আমার শক্তি এই পোশাকের চেয়েও অনেক ঊধ্বের্। ১৯ বছর বয়সে যৌন নিযার্তনের শিকার হওয়ার পর আমি একেবারে বদলে যাই। আমার ভেতরের একটা অংশ মরে যায় সেদিনই। এর কথা আমি কাউকে বলতে পারিনি। আমি সেই বদলে যাওয়াকে সবসময়ই এড়িয়ে গেছি। নিজেকে লজ্জায় কুঁকড়ে রেখেছি। ভেবেছি, দোষটা বুঝি আমারই ছিল। এমনকি আজও অনেক সময় সবার সামনে দাঁড়াতে আমার লজ্জা লাগে। মনে হয়, আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, সবই আমার দোষে। এমনও অনেক দিন যায়, যখন নিজেকে অপরাধী ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না। এই অনুভূতিগুলো আমি হলিউডের প্রভাবশালী কিছু পুরুষের কাছে অনেকবারই প্রকাশ করেছি, কিন্তু কেউ আমাকে কখনো সাহায্য করেনি। কিভাবে ন্যায়বিচার পেতে পারি আমি, সেই পথ কেউ কখনো আমাকে দেখায়নি। এমনকি আমার বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থায়ও কেউ আমাকে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়নি। তারা ভয়ে লুকিয়েছিল। ভেবেছিল, আমাকে ন্যায়ের পথ দেখালে হয়তো তাদেরও অনেক গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। তারা লুকিয়েছিল, তাই আমিও নিজেকে একটা সময় লুকিয়ে রাখতে শুরু করি।' মিডিয়া অঙ্গনে নারীদের যৌন নির্যাতনের কথা হ্যাসট্যাগ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখার প্রচলন চালু হয় হলিউডে। হ্যাসট্যাগ মিটু আন্দোলনের শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন এ গায়িকা। তার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সমাজের অনেক নারীকে অনুপ্রাণিত করেছে। গাগার দেখাদেখি, অনেকেই এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। মুখ ফুটে বলেছেন, নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেসব অন্যায়ের কথা। এ বিষয়েও কথা বলেন গাগা। তিনি বলেন, 'আমি অনেক দিন নিজেকে দাবিয়ে রেখেছিলাম। তবে একটা সময় যৌন নিযার্তনের মানসিক যন্ত্রণা ও অপরাধবোধ আমার শারীরিক ব্যথা আর অনেক রোগের কারণ হতে শুরু করে। সেই শারীরিক ব্যথা নিয়ে বাধ্য হয়ে আমাকে যেতে হয় চিকিৎসকের কাছে। সেই সময়ই প্রথম জানতে পারি, আমি পিটিএসডি (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅডার্র) আর ফিব্রোমিয়ালজিয়ায় ভুগছি। এই রোগ তোমার ভেতরের দুশ্চিন্তার ঝড়কে এতই বাড়িয়ে দেয় যে, এটা তোমার শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথার জন্ম দিতে শুরু করে। সেই ব্যথাকে কোনো ভাষা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।' ৮ মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে পপ গায়িকা সব নারীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'এটা ২০২০। পুরুষের সমান যোগ্যতা নিয়েও একজন নারীকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। দিনের পর দিন মানসিক আঘাত সহ্য করতে হয়। এ জন্য দায়িই আমরাই। আমরাই নিজেদের দমিয়ে রেখেছি। আর নয়। সবাই জাগ্রত হোন। এখনই জেগে ওঠার মোক্ষম সময়।' শুধু গানই নয়, ৩২ বছর বয়সী এ গায়িকা অভিনয়ের সঙ্গেও সম্কৃক্ত রয়েছেন। তিনি হলিউড ছবি 'ম্যান ইন বস্নাক-৩' ছবিতে অভিনয় করেছেন। এরপর ধারাবাহিকভাবে তাকে একাধিক ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেছে। এগুলো হচ্ছে- 'ম্যাশেট কিলস', 'মাপেটস মোস্ট ওয়ান্টেড' এবং 'সিন সিটি : অ্যা ডেম টু কিল ফর'। এ ছাড়া ছোটপদার্র হররধর্মী 'আমেরিকান হরর স্টোরি: হোটেল' পঞ্চম সিরিজে অভিনয় করেন গাগা। এতে তাকে একটি বিশেষ চরিত্রে দেখা গেছে।