বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী

শোবিজেও বিশেষ সাজ

যুগে যুগে পৃথিবীতে এমন কিছু মহান ব্যক্তির আবির্ভাব হয়- যারা চির অম্স্নান হয়ে থাকেন। জাতি তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আজীবন। প্রেরণায় অগ্নিশিখা হয়ে জ্বলজ্বল করেন তারা। সেলুলয়েডের ফিতায় ধরে রাখতে সেসব মনীষীকে নিয়ে নির্মিত হয় গান, নাটক ও চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের প্রাণপুরুষ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হবে। এ জন্য দেশের অন্যান্য অঙ্গনের মতো শোবিজ অঙ্গনেও চলছে নানা প্রস্তুতি। বছরটিকে মুজিববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে নাটক, সিনেমা ও গানের মানুষ। তাকে নিয়ে নির্মিত হচ্ছে অসংখ্য গান, নাটক ও চলচ্চিত্র। মুজিববর্ষের এ সময়ে সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রতিটি আসরে মুখরিত হয়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের তারার মেলার প্রধান প্রতিবেদন সাজানো হলো তাকে ঘিরেই। এ নিয়ে লিখেছেন- মাসুদুর রহমান

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শোবিজ অঙ্গনের এই দৌড়ঝাঁপ কেবল এ বছর থেকে নয়, গত বছর থেকেই শুরু হয়েছে। তবে সবার আগেই নাম আসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত বায়োপিকের। এর মধ্যে বলিউড নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকটি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে। এর নামও রাখা হয়েছে 'বঙ্গবন্ধু'। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার এই চলচ্চিত্রটির জন্য বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। এই বাজেটের ৬০ ভাগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ও ৪০ ভাগ ভারতের। বাংলা ভাষায় নির্মিত হচ্ছে ছবিটি। তবে পর্দায় হিন্দি সাব-টাইটেল থাকবে। বায়োপিকটি নির্মাণে পরিচালক শ্যাম বেনেগালের সহযোগী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন দয়াল নিহালানি। চিত্রনাট্য করেছেন অতুল তিওয়ারি ও শামা জায়েদি। শিল্প নির্দেশনার দায়িত্ব পেয়েছেন নীতিশ রায়। কস্টিউম ডিরেক্টর হিসেবে আছেন শ্যাম বেনেগালের মেয়ে পিয়া বেনেগাল। ছবিটির জন্য শ্যাম বেনেগাল কয়েক দফা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। ইতোমধ্যে অডিশনের মাধ্যমে সিনেমাটির শিল্পী বাছাইও করা হয়েছে। এক গেজেটের মাধ্যমে সিনেমাটির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। এই বায়োপিকে উঠে আসবে বাংলাদেশের অভু্যদয় থেকে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নির্মম ট্র্যাজেডি। তারুণ্য থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং পরবর্তী সময়ের মুজিবের দেখা মিলবে ছবিতে। আগামী ১৭ মার্চ থেকে এ ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর ৯০ ভাগের শুটিং হবে বাংলাদেশে। এই মুজিববর্ষেই অর্থাৎ ২০২১ সালের ১৭ মার্চের আগেই আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি দেওয়া হবে ছবিটি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত হতে যাচ্ছে শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'শেখ রাসেলের আর্তনাদ'। যেখানে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার চরিত্রে অভিনয় করবেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী। এটি পরিচালনা করবেন সালমান হায়দার। এখানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য রাসেলের গল্প উঠে আসবে। এ ছবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করবেন বঙ্গবন্ধুর মতো দেখতে আলোচিত সেই অরুক মুন্সি। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা চরিত্রে অপর্ণা ও শেখ রেহানা চরিত্রে আশনা হাবিব ভাবনা ও শেখ রাসেল চরিত্রে রোহান, শেখ কামাল চরিত্রে ইউসুফ, শেখ জামালের চরিত্রটি করবেন সাব্বির। গত ৬ মার্চ দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে 'চল যাই'। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উক্তিকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে ছবিটি। এতে অভিনয় করেছেন- আনিসুর রহমান মিলন, তাসনুভা তিশা, লুসি তৃপ্তি গোমেজ, হুমায়রা হিমু, সাব্বির হাসান, হৃতিকা ইসলাম, নাভিদ মুনতাসির, শিশুশিল্পী শরীফুলসহ অনেকে। খালিদ মাহবুব তূর্যর গল্প ও চিত্রনাট্যে 'চল যাই' নির্মাণ করেছেন মাসুমা রহমান তানি। \হশেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে রাজশাহী কলেজ। আগামী ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর দিন কলেজের অনুষ্ঠানে সেটি প্রদর্শিত হবে। 'বুনন' নামের এই চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার আরুক মুন্সী। তার চেহারাই বেশ মিল রয়েছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। তিনি পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে চুল, গোঁফ রাখেন বঙ্গবন্ধুর মতো। নাট্যজন মাহমুদ হোসেন মাসুদের গল্পে গল্পটি রচনা করেছেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হবিবুর রহমান। চলচ্চিত্রটি নির্বাক, শুধু দৃশ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে গল্পের শুরু হয়েছে। এর চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন মাইনুল ইসলাম টিপু। চিত্রগ্রহণ করেছেন শাহরিয়ার চয়ন। ফজলে আজিম জুয়েল নির্মাণ করেছেন টেলিফিল্ম 'আমার বাবার নাম'। মূলত বঙ্গবন্ধুর দেশে প্রত্যাবর্তনের কয়েকদিন আগের গল্প নিয়ে এটি নির্মিত হয়েছে। জুয়েল মাহমুদ নির্মাণ করেছেন 'চিরঞ্জীব মুজিব'। মুজিববর্ষের ১২টি নাটক প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে আফরোজা সুলতানার প্রযোজনা ও মাসুম রেজার রচনায় নির্মিত হয়েছে নাটক 'ভালোবাসার দলিল'। এতে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু, শর্মীমালা, রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ। ফজলে আজিম জুয়েল এবং মাহফুজা আক্তারের প্রযোজনায় থাকছে আরও দুটি নাটক। এ ছাড়া শিগগিরই অন্য নাটকগুলোর শুটিং সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছে বিটিভি কর্তৃপক্ষ। মুজিববর্ষ উপলক্ষে নির্মিত হয়েছে টেলিফিল্ম 'বঙ্গবন্ধু কর্নার'। এর রচনা ও পরিচালনা করেছেন রানা মাসুদ। এতে অভিনয় কেেরছন মৌসুমী হামিদ, প্রাণ রায়, আরমান পারভেজ মুরাদ, সোহেল খান, আলম সোহাগ প্রমুখ। সম্প্রতি এটি চ্যানেল আইতে প্রচারিত হয়েছে। পর্দার বাইরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মঞ্চেও নাটক নির্মিত হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের ৪৯২ উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে মঞ্চনাটক ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছে আনসার-ভিডিপির সদস্যরা। গত ৫ জানুয়ারি বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ এ ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার একদা চলমান প্রচেষ্টার সময়কালীন গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে মঞ্চ নাটক 'বাঘ'। নাসরিন মুস্তাফার রচনায় এর নির্দেশনা দিয়েছেন ড. আইরীন পারভীন লোপা। মঞ্চদল দৃশ্যকাব্যের ৩য় প্রযোজনা এটি। মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় মঞ্চে আনে নাটক 'শ্রাবণ ট্র্যাজেডি'। নাটকের পান্ডুলিপি রচনা করেন আনন জামান। লোক নাট্যদল মঞ্চে আনে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও সমাপ্ত স্বাধীনতা'। এর নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। পিছিয়ে নেই গানের জগৎও। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু গান প্রকাশ করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। চলছে আরও একগুচ্ছ গানের প্রস্তুতি। চলতি বছরের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নতুন একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কুমার বিশ্বজিৎ। 'হে বন্ধু বঙ্গবন্ধু' শিরোনামের এই গানের কথা লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সংগীতায়োজন করেছেন মানাম আহমেদ, সুর করেছেন তরুণ গায়ক ও সংগীত পরিচালক কিশোর। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে 'বাংলার শিরোনাম' গানে কণ্ঠ দেন রবি চৌধুরী। এ গানের কথা লিখেছেন শুক্লা পঞ্চমী ও সুর করেছেন মুরাদ নূর। সম্প্রতি গীতিকার শেখ মোহাম্মদ হাসানূর কবীরের গান 'গা রে গা তুই বঙ্গবন্ধুর গান'। গানটি দ্বৈতকণ্ঠে গেয়েছেন অণিমা মুক্তি গমেজ ও শিল্পী আবু বকর সিদ্দিক। মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সিনিয়র ও তরুণ প্রজন্মের ১০ জন শিল্পী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য করা এ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন- বাপ্পা মজুমদার, শওকত আলী ইমন, আঁখি আলমগীর, অনুপমা মুক্তি, দিলশাদ নাহার কণা, সোমনূর মনির কোনাল, পুলক অধিকারী, মৌমিতা তাশরিন নদী, রাজিব ও অপু। গানের কথা লিখেছেন হারুন রশীদ। আর সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন শওকত আলী ইমন। 'বঙ্গবন্ধু তুমি-ই বাংলাদেশ' শিরোনামে সংগীতশিল্পী তৌহিদ ইথুন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একশটি ভাষায় গান করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তৌহিদ ইথুনের নিজের লেখা এই গানে সুর দিয়েছেন তরুণ ও উদীয়মান সুরকার জাদু রিছিল। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন গায়িকা অবন্তী সিঁথি।