প্রিয়দর্শিনী এবার 'বঙ্গমাতা'

অনেকে তাকে দ্বিতীয় 'শাবানা' বলে ডাকেন। যদিও বর্তমানে নামের আগে 'প্রিয়দর্শিনী' বিশেষণটিই যোগ করা হয়। তবে 'শাবানা' কিংবা 'প্রিয়দর্শিনী' শুনলে আনন্দের পাশাপাশি অনেকটা বিব্রতও হন তিনি। বিনয়ের সঙ্গে বলেন, 'বিষয়টি যদিও অনেক ভালো লাগার, উচ্ছ্বাসেরও। কিন্তু তারপরও মনে মনে ভাবি, প্রশ্ন করি, আমি কী আসলেই এমন কেউ হতে পেরেছি!' হঁ্যা, বলা হচ্ছে চলচ্চিত্রের সফল তারকা মৌসুমীর কথা। ক্যারিয়ারের রজতজয়ন্তী পার করা চিত্রনায়িকা মৌসুমী এখনো সাবলীল অভিনয় দিয়ে দর্শকমহলে বিনোদন দিয়ে যাচ্ছেন। সমসাময়িক অন্য নায়িকারা যেখানে চরিত্র সংকটে পড়ে চলচ্চিত্র ছেড়ে বিকল্প পথ খুঁজছেন, মৌসুমী সেখানে একের পর এক ভিন্নধর্মী ছবিতে অভিনয় করে যাচ্ছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ঐতিহাসিক একটি চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছেন এ লাস্যময়ী। লিখেছেন- জাহাঙ্গীর বিপস্নব

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মৌসুমী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত হচ্ছে শিশুতোষ চলচ্চিত্র 'রাসেলের আর্তনাদ'। বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের সিনেমা নিয়ে হাজির হবেন পরিচালক সালমান হায়দার। তবে তিনি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে সিনেমা তৈরি করছেন না। তার সিনেমার কেন্দ্রবিন্দু বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেল। আর এখানেই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চরিত্রে অভিনয় করছেন মৌসুমী। এরই মধ্যে সিনেমার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। জনপ্রিয় তারকারা যুক্ত হয়েছেন সিনেমাটির সঙ্গে। যে চরিত্রে তারা অভিনয় করবেন সেই চরিত্রের সাজ- পোশাকের ছবি ফেইসবুকে শেয়ারও করেছেন তারকারা। সিনেমাটিতে অভিনয় করবেন প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা মৌসুমী। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা চরিত্রে অভিনয় করছেন ছোট ও বড়পর্দার দুই মেধাবী অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ ও আশনা হাবিব ভাবনা। বঙ্গবন্ধুর বড় পুত্র শেখ কামাল চরিত্রে রয়েছেন ইউসুফ, মেজ পুত্র শেখ জামালের চরিত্রটি করছেন সাব্বির। এতে শেখ রাসেল চরিত্রে পর্দায় হাজির হবে শিশু শিল্পী রোহান। আর বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করছেন তার কাছাকাছি চেহারার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া অরুক মুন্সি। তবে সবার নাম ছাপিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে মৌসুমীর নাম। এরকম এক বিখ্যাত চরিত্রে অভিনয় নিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য জোর প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। মৌসুমী বলেন, এক জীবনে অনেক চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু বঙ্গমাতার চরিত্রটি আমার জন্য সবচেয়ে বড় একটা চ্যালেঞ্জ বলা যায়। আমার কাছে এটা অনেক বড় একটি দায়িত্ব। এমন একজন মহান নারীকে বড়পর্দায় জীবন্ত করে তোলাটা খুব চ্যালেঞ্জের। আমি সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজটি করব। আপাতত চরিত্রটিতে ঢোকার জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।' খানিকটা দম নিয়ে মৌসুমী আবার বলতে শুরু করেন, 'কাজটি আমার জন্য যথেষ্ট কষ্টের হবে। কারণ, ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে সবাই চেনেন। তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। এমন একটি চেনাজানা চরিত্র ফুটিয়ে তোলা একদিকে যেমন কষ্টের, তেমনি আনন্দের। কাজটি ঠিকমতো করতে পারলে দর্শকের অনেক ভালোবাসা আমি পাব, সেটা নিশ্চিত। আবার কাজটি কোনোভাবে খারাপ হলে তার দায়ভারও বহন করতে হবে। এ জন্য আমি প্রথম থেকেই সিরিয়াসলি কাজটি করতে চাই। আশা করছি, ভালো কিছুই হবে।' এটা ভিন্ন ধরনের এক প্রচেষ্টা উলেস্নখ করে মৌসুমী বলেন, 'এতদিন যত চরিত্র করেছি, নিজের মতো করে চরিত্রটিকে চিন্তা করে তৈরি করেছি। কিন্তু এখানে চিন্তাভাবনার সুযোগ নেই। ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের বাস্তব চরিত্রকে ধারণের চেষ্টা করতে হচ্ছে। এটা অন্য ধরনের জার্নি। আমার সারা জীবন এই সিনেমার কথা মনে থাকবে।' তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সিনেমাটিতে অনেক জনপ্রিয় তারকা রয়েছেন। অপর্ণা, ভাবনার কাজ আমি দেখেছি। তারা খুব বুঝে অভিনয় করে। তাদের সঙ্গে কাজটি করার জন্য অপেক্ষা করছি।' চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের দুই যুগ পার করে এলেন। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে ভাবলে কেমন লাগে? প্রশ্ন তুলতেই এক নিঃশ্বাসে বলতে শুরু করেন তিনি। বলেন, 'আসলে আমরা খুব অল্প সময়ের জন্যই পৃথিবীতে এসেছি। আমার মনে হয়, এই তো সেদিনই কাজ শুরু করলাম। অথচ দুই যুগ হয়ে গেছে। ভাবতেই পারছি না এতগুলো বছর কীভাবে কাটিয়ে এলাম! তবে এই সময়ে এসে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয়। যেভাবে সময় পার করতে চেয়েছি সেভাবেই কাটাতে পেরেছি। এখনো সম্মান নিয়েই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। সবার কী অফুরন্ত ভালোবাসা পাচ্ছি।' দুই যুগের ক্যারিয়ারে কোনো কাজটি মনে দাগ কেটে রয়েছে? মৌসুমীর জবাব, 'এ পর্যন্ত অনেক ছবিতেই কাজ করেছি। একেকটি চলচ্চিত্র একেক কারণে মনে দাগ কেটে আছে। তাই একটি বা দুটি চলচ্চিত্রের নাম বললে বেশ নিষ্ঠুরতাই হবে বলে আমার মনে হয়। এতটা নিষ্ঠুর নিজের অভিনীত চলচ্চিত্রের প্রতি হওয়া যাবে না। তবে প্রথম ভালোবাসাই সবার কাছে সেরা ভালোবাসা মনে হয়। আমার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারের প্রথম কাজটিই আমার জন্য আশীর্বাদ। তাই এখনো কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির দৃশ্যগুলো মনে ভেসে ওঠে।' সবশেষে মৌসুমী বলেন, 'সত্যিকারের একজন শিল্পী অভিনয়ের পথচলায় নিজেকে কখনই পরিপূর্ণ মনে করেন না। আর এ অপরিপূর্ণতা নিয়েই কিন্তু এক সময় এ পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান। শিল্পীর মনে নতুন নতুন চরিত্রে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়। আমারও সেই অতৃপ্তি আছে, চ্যালেঞ্জিং আরও নতুন চরিত্রে কাজ করার ক্ষুধা আছে। হঁ্যা, এটা সত্যি, একটি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে কাজ করে সাময়িক সময়ের জন্য ক্ষুধা নিবারণ হয়, কিন্তু পরে আবার সেই ক্ষুধা সৃষ্টি হয়। শিল্পীর মন এমনই। যে বয়সে যে চরিত্রে কাজ করা প্রয়োজন তা করতে না পারলেও আজীবন ক্ষুধা থেকে যায়। আমি এমনভাবে চলচ্চিত্রে কাজ করে এসেছি, যে সময়ে যে বয়সে, যে চরিত্রে অভিনয়ের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, করার চেষ্টা করেছি। যে কারণে আমার বয়স, মনমানসিকতার সঙ্গে মানানসই হয়, এমন চরিত্রে কাজ করেছি। সেসব কাজ দিয়ে দৃষ্টান্ত রাখার চেষ্টা করেছি। তবে পূর্ণতা পাবে যদি দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, সমাজের অসহায় মানুষের জন্য কিছু করতে পারি।'