বিনোদন দুনিয়ায় আত্মহত্যার প্রবণতা

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাহাঙ্গীর বিপস্নব গস্নামার জগৎটা বাইরে থেকে যতটা উচ্ছ্বাস কিংবা উৎসবমুখর মনে হয় ভেতরের জগৎটা কিন্তু ততটা আনন্দমুখর নয়। বরং সাধারণ জগতের চেয়ে এই জগতের মানুষরাই বেশি হতাশ, বিষাদ আর অবসাদে ভোগেন। ফলে ক্রমশ আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে বিশ্ব শোবিজ অঙ্গনে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক মডেল, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং গায়ক-গায়িকা মানসিক কষ্ট থেকে রক্ষা পেতে বেছে নিয়েছেন আত্মাহুতির পথ। তাদের অধিকাংশই তরুণ-তরুণী ও আবেগতাড়িত। মাদক, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক কলহ, অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে উঠতি মডেল সেলিব্রেটিরাই বেশি আত্মহত্যা করছেন। সালমান শাহর পর বাংলাদেশে মিতানূর, মঈনুল হক অলি, রিসিলা বিনতে ওয়াজের, নায়লা, সুমাইয়া আজগর রাহাসহ অনেকেই জীবন দিয়েছেন আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। সর্বশেষ বিতর্কিত মডেল জ্যাকুলিন মিথিলার পর দেশীয় শোবিজে এই প্রবণতা কমে গেলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের শোবিজ তারকাদের আত্মহত্যার প্রচলন হঠাৎ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে গত দু'বছর যাবত ভারতের অনেক উঠতি ও জনপ্রিয় সেলিব্রেটি আত্মহত্যা করেছেন। চলতি বছর দিয়েই শুরু করা যাক। সবেমাত্র ২০২০ শুরু হলো। এর মধ্যেই ভারতে বেশ কয়েকজন উঠতি তারকা মারা গেছেন আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে। সর্বশেষ গত ফেব্রম্নয়ারির মাঝামাঝিতে আত্মহত্যা করেছেন কর্নাটকের গায়িকা সুস্মিতা রাজ। মারা যাওয়ার আগে তিনি একটি সুইসাইড নোট লিখে যান- যা এখন পুলিশের হাতে। আত্মঘাতী হওয়ার আগে সোমবার ভোরে মা ও ভাইকে হোয়াটসঅ্যাপ করেন সুস্মিতা। সুইসাইড নোটে তিনি স্বামী শরৎ কুমার ও তার শ্বশুরবাড়ির পরিবারকে দায়ী করেন। গত ২ ফেব্রম্নয়ারি আত্মহত্যা করেছেন ভারতের উঠতি মডেল-অভিনেত্রী সুবর্ণা যশ। ওইদিন রাতে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান শহরের মোহনবাগের নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। ঘটনার পর পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সুবর্ণাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার আগের মাস জানুয়ারির শেষের দিকে আত্মহত্যা করেছেন ভারতের আরেক অভিনেত্রী সেজল শর্মা। তবে কেন এই আত্মহত্যার পথ অভিনেত্রী বেছে নিলেন সেসম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, হয়তো নিজের ব্যক্তিগত কারণের জন্যই এই চরম সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী। ২০১৯ সালের নভেম্বরে আত্মহত্যা করলেন দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী গো হারা। জনপ্রিয় কে-পপ গ্রম্নপ কারার সদস্য ছিলেন গো হারা। ২০০৮ সালে তিনি পপ গ্রম্নপটিতে যোগ দেন। যদিও পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন এই তারকা। মৃতু্যর আগের সপ্তাহেও একাধিক জায়গায় পারফর্ম করেন ২৮ বছর বয়সী এই কে-পপ স্টার। গত বছরের অক্টোবরে মানসিক অবসাদের জেরে মৃতু্য হলো দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় পপ তারকার! পুলিশ সূত্রে খবর, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বছর পঁচিশের ওই জনপ্রিয় পপ তারকার মৃতদেহ। কী কারণে ওই পপ তারকার মৃতু্য হয়েছে, সে বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে মানসিক অবসাদের জেরেই সুলিও নামে ওই পপ তারকা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে পুলিশের তরফ থেকে। নারী স্বাধীনতা এবং তাদের অধিকার নিয়ে সব সময়ই সরব ছিলেন সুলিও। ইনস্টাগ্রামসহ সোশ্যাল নেটওয়ার্কেও ছিলেন তিনি বেশ জনপ্রিয়। যার কারণে বিভিন্ন সময় তাকে নেটিজেনদের একাংশের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে বলে খবরে জানা যায়। একই মাসের ১৬ অক্টোবর সকালে বান্দরবান শহরে বালাঘাটার নিজ ঘরের সিলিংফ্যান থেকে উদ্ধার করা হয় বাংলাদেশি আইডল পঙ্কজ দেবনাথের ঝুলন্ত মরদেহ। জানা গেছে, রমা সম্প্রদায়ের এক মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল তার। প্রেমিকার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। এর জের ধরে আত্মহত্যা করলেন ২৯ বছর বয়সী এই গায়ক। তার আগের মাস সেপ্টেম্বর ২০১৯-এ আত্মহত্যা করেন জনপ্রিয় পর্নো তারকা জেসিকা জেমস। লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজের বাসার শয়ন কক্ষেই ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় জেসিকার মৃতদেহ। ৪০ বছর বয়সী জেসিকা কেন আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিলেন সে বিষয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে সেখানকার স্থানীয় পুলিশ। সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, লস অ্যাঞ্জেলেসের সান ফার্নান্দো ভ্যালিতে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন জেসিকা। গত কয়েকদিন ধরে বাড়িতে ছিলেন না তার স্বামী। তার মধ্যেই আচমকা স্ত্রীর মৃতু্যর খবর পান জেসিকার স্বামী। স্ত্রীর মৃতু্যর খবর পাওয়ার পরই বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। জেসিকার রহস্যজনক মৃতু্যতে তার স্বামীকেও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি সকালে নিজের ঘরে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলিউড অভিনেতা রাহুল দীক্ষিতের নিথর দেহ। জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে মুম্বাইতে আসেন রাহুল। ধীরে ধীরে মুম্বাইয়ের মাটিতে পাকাপাকিভাবে কাজ শুরু করেন। যদিও বেশ কিছুদিন ধরে ভালো কাজ পাচ্ছিলেন না টেলিভশনের এই জনপ্রিয় নায়ক। সে কারণেই মানসিক অবসাদ নাকি অন্য কিছু খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গত বছরেই আত্মাহুতির পথ বেছে নেন মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফ। তার আগের বছর ২০১৮ সালেও মানসিক যন্ত্রণায় স্বেচ্ছায় মৃতু্যর পথ বেছে নেন বলিউডের বেশ কয়েকজন সেলিব্রেটি। তাদের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলেন- তামিলের জনপ্রিয় দুই অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা ও রিয়ামিক্কা। যদিও টিভি সিরিয়ালের কিংবা বলিউডের উঠতি অভিনেতা অভিনেত্রীদের এই হতাশা জনিত মৃতু্যবরণ নতুন নয়।