সাহসী কন্যা আইরিন সুলতানা

ঢাকাই চলচ্চিত্রের নতুন ক্রেজ আইরিন সুলতানা। একসময়র্ যাম্প মডেলিং করলেও বর্তমানে চলচ্চিত্র নিয়েই তার দারুণ ব্যস্ততা ও ধ্যান-ধারণা। পাশাপাশি সরব ওয়েব সিরিজেও। অভিনয়ের পাশাপাশি খোলামেলা পোশাকের দরুন সাহসী মেয়ে বলেও আখ্যায়িত করা হয় তাকে। সম্প্রতি একটি ওয়েব সিরিজে খোলামেলা দৃশ্যে আইরিনের অভিনয় বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন- মাসুদুর রহমান

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আইরিন সুলতানা
শোবিজ অঙ্গনে যে কজন আলোচিত মডেল কিংবা অভিনেত্রী রয়েছেন, তাদের মধ্যে আইরিন সুলতানাও একজন। তবে দুয়েকটি দিক থেকে তিনি আবার অন্যদের চেয়ে একধাপ এগিয়েই রয়েছেন বলা যায়। সবাই যেখানে রাখঢাক রেখে অভিনয় করেন, আর মুখে বলেন গল্প ও চরিত্রের প্রয়োজনে যে কোনো পোশাকেই হাজির হতে আপত্তি নেই, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় উল্টা চিত্র। আইরিন সেখানে কথার বরখেলাপ করেন না। গল্প ও চরিত্রের প্রয়োজনে সে পোশাকের ক্ষেত্রে সাহসিকতার পরিচয় দিলেও সেটাকে মোটেও অশ্লীল বা আপত্তিকর বলা চলে না। তবে ্পর্দার বাইরে মাঝে মাঝেই ঝড় তোলেন তিনি। এ জন্যই তাকে সাহসী কন্যা বলে মন্তব্য করেন সবাই। গত ১২ মার্চ লাইভ টেকনোলজির অনলাইন পস্ন্যাটফর্ম সিনেস্পটের অ্যাপে আইরিন অভিনীত 'ধোঁকা' নামের একটি ওয়েব সিরিজের প্রথম পর্ব প্রচারিত হয়। অনন্য মামুন পরিচালিত এই ওয়েব সিরিজের শুরুতেই সাহসী পোশাকে হাজির হয়ে অনেকটা হইচই ফেলে দেন তিনি। অবমুক্তির আগেই ওয়েবে নিজের উপস্থাপনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় পড়েন আইরিন। 'ধোঁকা'র টিজারে সুইমিংপুলের নীল জলের পাশে আবেদনময়ী আইরিনকে দেখা যায় খোলামেলা দৃশ্যে। এ নিয়ে তুমুল সোরগোল পড়ে যায় চারিদিকে। খবরের পাতায় চলে আসে আইরিনের নাম। দর্শক ও পাঠক মহলেও এর ঝাপটা লাগে। শুরু হয় নানান কথার নানা সুর। তবে এসব কথামালার কোনো গুরুত্ব নেই আইরিনে কাছে। অনেকটা সাহসী কণ্ঠেই বলেন, 'ধোঁকা'য় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এখানে আমার চরিত্রের নামও আইরিন। প্রথমে সাধারণ এক মেয়ে হিসেবে দেখবে দর্শক। পরে দেখা যাবে মেয়েটি মাফিয়া গার্ল। সে এবং তার ভাই মিলে মাফিয়াদের একটি দল চালায়। দেশের বাইরে বড় হয়েছে মেয়েটি। এমন একটি মেয়ে, যে কখনো বাংলাদেশে যায়নি। তার পোশাক যেমনটা হওয়া স্বাভাবিক, তেমন পোশাকে আমি এই ওয়েব সিরিজে কাজ করেছি। চরিত্রের প্রয়োজনে এখানে আমাকে এতটুকু করতে হয়েছে। হয়তো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পোশাকটি কারো কাছে দৃষ্টিকটু মনে হতে পারে। তবে, আহা মরি এমন অশালীন পোশাক নয়। আমার মনে হয় আগে ওয়েবটা দেখুন তারপর ভালো-মন্দ মন্তব্য করুন। গল্পের প্রয়োজনে যেমন একজন তারকাকে মুচি কিংবা পাগলের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। তেমনই অর্ধ পোশাক, থ্রি-কোয়াটার পোশাকেও সাজতে হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বড় বড় তারকারা বিভিন্ন সিনেমায় নানান পোশাকে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে রূপদান করেছেন। এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখা উচিত।' 'ধোঁকা' আইরিনের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়েব সিরিজ। এর আগে সৈকত নাসির পরিচালিত 'ট্র্যাপড' নামে একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছিলেন। সেখানেও খোলামেলা দৃশ্যে দেখা গেছে এই অভিনেত্রীকে। বারবার সাহসী পোশাকে নিজেকে উপস্থাপন নিয়ে আইরিন বলেন, 'ওয়েব সিরিজটির টিজার প্রকাশের পর এ নিয়ে নেগেটিভের পাশাপাশি অনেকে পজেটিভ মন্তব্যও করেছেন। নেগেটিভ মন্তব্যের জবাবে কেউ কেউ লিখেছেন 'তোমার ভালো না লাগলে না দেখলেই তো হয়', 'এটা হতেই পারে' এরকম অনেক পজেটিভ মন্তব্য করেছেন অনেকে। আমার মনে হয় যারা নিয়মিত নাটক-সিনেমা দেখেন, দেশ-বিদেশের-শোবিজাঙ্গন সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাদের কাছে বিষয়টি স্বাভাবিক। আমি আসলে কুরুচিপূর্ণ কিছু করতে চাই না। জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়ার মতো যাচ্ছেতাই সারির অভিনেত্রীও আমি নই। আমার মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোও তা বলে না।' নিজেকে নিয়ে আলোচনার বিষয়টি প্রত্যেকেই ইতিবাচক হিসেবেই দেখলেও সমালোচনার বিষয়টি সাধারণত কেউ মেনে নিতে চান না, প্রতিবন্ধকতা মনে করেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন কেউ কেউ। সাহসীরাই কেবল সমালোচনার মোকাবিলা করেন। আইরিনকে নিয়ে সমালোচনার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার পথে পেছন থেকে কিছুটা বাধা আসবেই। এতে আমি নিজেকে দুর্বল মনে করি না। প্রত্যেক সফল ব্যক্তিকেই অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে উপরে উঠতে হয়েছে। আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনাও থাকবে। এটাই নিয়ম। আমাকে নিয়ে সমালোচনার বিষয়টি পজেটিভ হিসেবেই মনে করি।' ডিজিটাল পস্নাটফর্মের নতুন সংযোজন ওয়েব সিরিজ। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এর গুরুত্ব বাড়ছে। আমাদের দেশে এটি দর্শকদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে তা জানতে চাওয়া হয় আইরিনের কাছে। জবাবে আইনি বলেন, 'অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ওয়েব সিরিজের গুরুত্ব বাড়ছে। আমাদের দেশে শহর কেন্দ্রিক এর চাহিদা বাড়ছে। তরুণ প্রজন্ম ওয়েব সিরিজ দেখছেন। গ্রামে এখনো এর প্রভাব পড়েনি। তবে সময়ের ব্যবধানে গ্রামেও এর চাহিদা বাড়বে। এর মাধ্যমে অনেক ভালোভালো কাজ হচ্ছে। এতে শিল্পী, নির্মাতাদের অনেক সুবিধাও রয়েছে। অনেক বড় বড় তারকারাই এখন ওয়েব সিরিজে কাজ করছেন।' আইরিনের কাছ থেকে জানা গেল, 'ট্রাপড' ও 'ধোঁকা'র বাইরে আরও কিছু ওয়েব সিরিজের প্রস্তাব পেয়েছিলেন আইরিন। কিন্তু গল্প, চরিত্র পছন্দ না হওয়া এবং সময়ের অভাবে সেগুলোতে কাজ করা হয়নি তার। আইরিনের ক্যারিয়ারে দশটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। সর্বশেষ ছবি 'পদ্মার প্রেম'। কলকাতার প্রোডাক্টশনে নির্মিত এ ছবিটি গত বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের মুক্তি পেয়েছিল। তার আগে কলকাতায় মুক্তি পেয়েছিল 'পদ্মার প্রেম'। এ ছবিটি করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন কলকাতার ছবিতেও তার চাহিদা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে আইরিন শেষ করেছেন কলকাতার আরেকটি ছবির কাজ। 'শিবরাত্রি' নামের এ ছবিটি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। তবে পরিচালক চাইছেন ছবিটি প্রথমে কোনো চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পাওয়ার পর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেয়া হবে। এটি বাংলাদেশেও মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আইরিন। অন্যদিকে 'কাউন্ট ডাউন' নামে কলকাতার আরেকটি নতুন ছবি হাতে রয়েছে এই নায়িকার। খুব শিগগিরই এর শুটিং শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আইরিন এ নিয়ে বলেন, 'গত মাসেও আমি কলকাতায় গিয়েছিলাম অন্য একটি কাজে। তখন পরিচালক পার্থ সারথী ভট্টাচার্য্যর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। একটি ফান্ডের জন্য কাজটি শুরু হচ্ছে না।' আইরনি অভিনীত বাংলাদেশি দুটি চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। একটি বুলবুল জিলানীর 'রৌদ্রছায়া' অন্যটি অরণ্য পলাশের 'গন্তব্য'। এ দুটি ছবি ছাড়াও 'আহারে জীবন' ও 'সেভ লাইফ' ছবি দুটির কাজ চলছে। আইরিন বলেন, 'আহারে জীবন' ছবির কাজ প্রায় শেষের দিকে। আর মাত্র ৬/৭ দিন শুটিং করলেই দৃশ্যায়ন শেষ হবে। অন্যদিকে 'সেভ লাইফ' ছবির কাজ অনেক টুকু বাকি রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকান্ড ও এই বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হচ্ছে ছবিটি।'