বলিউডে মাতাল হাওয়া

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলিউডের হাওয়া যেভাবে মাতাল হয়ে উঠছে, তাতে যেন হলিউডকেও হার মানাচ্ছে। একসময় হলিউডে যেসব বিষয় ভাত-মাছের মতো ছিল, সেগুলো এখন বলিউডে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে তো মন্তব্য করছেন, অসম প্রেম, বিয়ের আগেই মা হওয়া, অবাধ মেলামেশা এমনকি সিনেমায় রগরগে যৌনতা, নগ্নতা- সব কিছুতেই একধাপ এগিয়ে এখন বলিউড। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই যেন উত্তাল হাওয়া আরও বেগবান হয়ে উঠছে। খোলামেলা প্রবণতার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরেই বলিউডের ছবিতে শোভা পাচ্ছে রগরগে চুম্বন দৃশ্য। সেইসঙ্গে নগ্ন বিছানার দৃশ্যায়নও। এগুলো নিয়ে জলঘোলাও কম হয়নি। সিনেমার বাইরে তারকাদের ব্যক্তি জীবনেও এসেছে নতুন জোয়ার। হলিউডের মতো এখানেও দেখা যাচ্ছে অসম প্রেমের অবাধ বিচরণ। পাশাপাশি থেমে নেই 'মি-টু ঝড়'ও। সবমিলিয়ে অনেকটাই টালমাটাল বলিউড। লিখেছেন- জাহাঙ্গীর বিপস্নব

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অসম প্রেম ও বিয়ে... পর্দায় যেমন পরকীয়া, চুম্বন আর অসম প্রেমের অবাধ বিচরণ দেখা যাচ্ছে, বাস্তব জীবনেও তেমনই দেখা যাচ্ছে বলিউড তারকাদের ক্ষেত্রে। মালাইকা অরোরা আর অর্জুন কাপুরের কথাই ধরা যাক, আরবাজ খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর পরই নিজের চেয়ে অর্ধেক বয়সী প্রেমিক অর্জুনের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তারপর তাদের প্রেম এতই প্রকাশ্য হয়ে গেছে যে, অনেকে ধরেই নিয়েছেন তারা স্বামী-স্ত্রী। এমনকি একসঙ্গে দেশে এবং দেশের বাইরেও ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন লম্বা সফরের জন্য। কদিন পর পরই শোনা যাচ্ছে, তারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন। তবে আদৌ বিয়ে করবেন কিনা তারা- এটা নিয়ে এখনো মুখ খোলেননি কেউ। এদিকে বয়সে ১৫ বছরের ছোট মডেল রোহমান শালের সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন বলিউড অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন। রোহমানের সঙ্গে মন দেয়া-নেয়ার কথা স্বীকার করে সুস্মিতা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে যাচ্ছেন নিয়মিতই। এবার সরাসরি না জানালেও নতুন যে খবরের দিকে ইঙ্গিত দিলেন সুস্মিতা- তা হলো, রোহমানের সঙ্গে বাগদান সেরেছেন তিনি! সম্প্রতি সুস্মিতার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ছবি তাই বলছে। অন্য দিকে নিজের চেয়ে ১০ বছরের ছোট মার্কিন গায়ক নিক জোনাসকে বিয়ে করে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। তবে বয়সের বিস্তর ফারাকের কারণে মাঝে মাঝেই নানান রসালো মন্তব্য ও কটাক্ষের শিকার হতে হচ্ছে প্রিয়াঙ্কাকে। এই তো কদিন আগেই এক অনুষ্ঠানে প্রিয়াঙ্কাকে নিকের মা বলে মন্তব্য করে তুমুল হইচই ফেলে দেন এক অতিথি। বিয়ের আগেই মা... বিয়ের আগে মা হওয়ার বিষয়টি এক সময় হলিউডেই শোভা পেত। কিন্তু এই জোয়ার এখন বইছে বলিউডে। কয়েক বছর ধরেই এমনটি হয়ে আসছে বলিউড তারকাদের। অনেক নায়িকা আবার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর তাড়াহুড়া করে বিয়ে করে ফেলেছেন প্রেমিককে। তারপর সবাইকে জানাতেন মা হওয়ার খবর। কিন্তু গত বছর থেকে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে এখানে। বিয়ের আগেই মা হওয়ার খবর অনেকটা আনন্দচিত্তেই জানান দিচ্ছেন কেউ কেউ। এই যেমন অ্যামি জ্যাকসনের কথাই ধরা যাক। কিছুদিন আগে বিয়ে না করেই গর্ভাবস্থায় নিজের বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন এ বলিউড অভিনেত্রী। সন্তান জন্মদানের পর বাচ্চার ছবিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করে আলোচনায় এলেন তিনি। ছবিতে দেখা গেছে, সন্তানকে স্তন্যপান করাচ্ছেন তিনি। এ সময়ে প্রেমিক জর্জকে অ্যামির কপালে চুম্বনরত অবস্থায় দেখা যায়। সন্তান জন্মের পর্ব শেষ হওয়ায় এবার জর্জের সঙ্গে সংসার পাতবেন বলেও জানান অ্যামি। যদিও এ বছরই তাদের বিয়ের কথা থাকলেও সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তারা। গুঞ্জন রয়েছে, আগামী বছর জর্জের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবেন এই অভিনেত্রী। অ্যামির মতোই সম্প্রতি বিয়ে ছাড়াই মা হলেন বলিউড অভিনেত্রী কালকি কোয়েচলিন। ইসরায়েলি বয়ফ্রেন্ড গাই হার্শবার্গের মেয়ে সন্তানের মা হলেন এ অভিনেত্রী। অ্যামির মতো কালকিও গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ছবি শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর আগে কারিনা কাপুরের রেডিও শো 'হোয়াট ওমেন ওয়ান্ট'- এ কালকি জানিয়েছিলেন, তার গর্ভধারণের বিষয় পুরোপুরি অপরিকল্পিত। 'আমি প্রথমে বিশ্বাস করিনি। আমি গিয়ে পরীক্ষা করাই, খবর জানতে পারার পর আমি আমার পার্টনার গাইকে জানাই- ও শুনে দারুণ খুশি হয়েছিল। আমার গোটা বিষয়টার সঙ্গে মানিয়ে নিতে এক-দু'দিন সময় লেগেছিল', জানান কালকি। তিনি আরও বলেন, 'আমি ভেবেছিলাম হয়তো এক-দুবছর পর আমারা সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করব। তবে আচমকাই পুরোটা ঘটে গেল।' 'মি-টু' ঝড়... এটাও হলিউডের অনুকরণ। হলিউডের নায়িকারা যখন একের পর এক নিজেদের অতীত যৌন হেনস্তা তুলে ধরে শোরগোল ফেলে দেন, তখনও বলিউডের কেউ আত্মসম্মানের ভয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু হলিউডে যখন 'মি-টু' ঝড় স্তিমিত হয়ে আসে, ঠিক তখনই হইচই পড়ে যায় বলিউডে। বলিউড অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত মুখ খোলার পর 'মি-টু' ঝড়ের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইন্ডাস্ট্রিতে। একে একে বলিউডের অনেক অভিনেত্রী, গায়িকা হেনস্তা নিয়ে কথা বলছেন। শুধু পরিচালক, প্রযোজক, গায়ক ও অভিনেতারা 'মি-টু' ঝড়ের কবলে পড়েছেন না, পড়েছেন বলিউডের রথী-মহারথীরাও। বলিউডের নামি প্রযোজক এবং টি-সিরিজ কোম্পানির মালিক ভূষণ কুমারের নামও জড়িয়ে পড়ে এই অভিযানে। জনপ্রিয় নির্মাতা সাজিদ খানের বিরুদ্ধেও যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। এর পরই তাকে 'হাউসফুল-৪' ছবির পরিচালকের পদ থেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর একে একে হয়রানি ও ধর্ষণ নিয়ে মুখ খোলেন কঙ্গনা রানাউত ও নয়নী দীক্ষিত, কাজল, মাধুরীসহ বলিউডের অনেক নায়িকা। যদিও বর্তমানে 'মি-টু' ঝড় অনেকটাই থেমে গেছে। তারপরও মাঝে মাঝে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন অনেক নামি-দামি তারকারাই। এতে শুধু জলঘোলা ছাড়া অন্য কিছুই হচ্ছে না। সিনেমায় অবাধ যৌনতা... বলিউডের ছবি এখন একশ' কোটির ঘর পেরিয়ে তিনশ কোটি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। এসব ছবি নিয়েও কম মাতামাতি হয় না। এ ধরনের ছবি ছাড়াও বলিউডে স্বল্প বাজেটের ছবি তৈরি হয়। অপরাধ, রহস্য, ধোঁয়াশা পরিস্থিতি আর যৌনতার মিশেল ঘটিয়ে ভৌতিক থ্রিলার ছবির ঘটনা তৈরি করা হচ্ছে। এ ধারা বলিউডে শুরু হয় 'রাজ' ছবির মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় জিসম, মার্ডার, হেট স্টোরির মতো স্বল্প বাজেটের ছবিগুলো বলিউডে বেশ ভালোই ব্যবসা করে। বলিউডের ইতিহাসে যৌনতাকে কেন্দ্র করে অনেক ছবি তৈরি হয়েছে আবার ভৌতিক থ্রিলার ছবিও কম তৈরি হয়নি। কিন্তু এখন এসব মিলিয়ে ঘটনাহীন, তারকাবিহীনভাবেই ভৌতিক থ্রিলার তৈরি করা হয়। এ ধরনের ছবি মানেই ভয়ের সঙ্গে যৌনতার অদ্ভুত একা মিলন ঘটে। স্বল্প বাজেটে এ ধরনের ছবিগুলো চারগুণ-পাঁচগুণ অর্থ উপার্জন করে। এ ধরনের ছবিতে গল্পের রেশও থাকে না। জিসম টুর উদাহরণই ধরা যাক। সাত কোটি রুপি বাজেটের এ ছবিটি রাতারাতি ২১ কোটি রুপি আয় করে নেয়। এ ছবিতে অভিনয় করে পর্নো তারকা সানি লিওনি বলিউডের নায়িকা হিসেবে আবির্ভূত হন। এসব ছবির জন্য বড় বাজেট, ভালো গল্প, নামি অভিনেতার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। বলিউডে এ ধরনের ছবিগুলো একটা আলাদা জায়গা দখল করে নিচ্ছে। রাজ, মার্ডার, জিসমের মতো ছবিগুলো বলিউডে একটা নতুন যুগের সূচনা করেছে। জিসম, মার্ডারের মতো ছবিগুলোতে নারীর অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন আকাঙ্ক্ষাকেই তুলে ধরা হয়েছে। আর এসব ছবিতে অভিনয় করে অনেকে তারকা বনে গেছেন। খোলামেলা আর বিকিনি জোয়ার... পর্দার চেয়ে পর্দার বাইরেই যেন বেশি খোলামেলা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলিউডে। যে কোনো অনুষ্ঠান, কিংবা সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া মানেই যেন নায়িকাদের খোলামেলা পোশাক এবং সেইসঙ্গে ভাইরাল হওয়ার ঘটনা। এমনকি বাসায় কিংবা বাথটাবে নায়িকাদের গোছলের দৃশ্যও নিজেরা শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিভিন্ন ফটোশুটেও দেখা দিচ্ছেন তারা টপলেস কিংবা বিকিনি পোশাকে। সম্প্রতি বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন সাদা রঙের নেকলাইন পোশাক পরে। স্বামী নিক জোনাসও ছিল তার সঙ্গে। এরপরও নেকলাইন পোশাক পরার জন্য তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন প্রিয়াঙ্কা। একই কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বলিউড অভিনেত্রী ভূমি পেডনেকর। সম্প্রতি নিজের টুইটারে গোলাপি রঙের নেকলাইন পোশাক পরা বেশ কিছু ছবি শেয়ার করেন অভিনেত্রী ভূমি। ভূমির ওই ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে তাকে নিয়ে তুমুল সমালোচনা। এই ধরনের পোশাক পরে ছবি তোলার কারণে তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। সম্প্রতি নেহা শর্মা তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে সুপার হট একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে শুরু হয়েছে সংস্কারি নেটিজেনদের নানান কথা। একজন লিখেছেন, 'সংস্কার থেকে সৌন্দর্য প্রকাশ পায়, এ ধরনের খোলামেলা পোশাক থেকে নয়'। আর এক নেটিজেন এর প্রশ্ন করে বসেছেন, 'ছবি নেই হাতে বুঝি একদম'? অপর একজন লিখেছেন, 'কিছুতো লজ্জা পান ম্যাডাম'। আর এক নেটিজেন একধাপ এগিয়ে লিখেছেন, 'সস্তায় প্রচার পাওয়ার জন্য ভারতীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্য নষ্ট করা হচ্ছে।' যদিও কিছু মানুষ নায়িকার সৌন্দর্যের প্রশংসা করেছেন। তবে এসব কিছুতেই গায়ে মাখেননি নায়িকা। বরং ছবি পোস্ট করা অব্যাহত রেখেছেন। আবার কিছুদিন আগে বাবার সঙ্গে একটি সিনেমার অনুষ্ঠানে খোলামেলা পোশাকে হাজির হয়ে তীব্র সমালোচনার কবলে পড়তে হয় সোনাম কাপুরকে। সব মিলিয়ে বলিউড যেন ক্রমেই লাগামহীন ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে।