শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল মুক্তিকামী মানুষের প্রাণ

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী। বহু গুণে গুণান্বিত একজন সফল ব্যক্তি। বিশিষ্ট ডেন্টাল সার্জন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, টিভি উপস্থাপক, মাদক ও ধূমপানবিরোধী সংগঠন 'মানস'-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বারডেমের ডেন্ট্রিস্টি বিভাগের অধ্যাপক। শত ব্যস্ততার মধ্যেও কথা বলেছেন তারার মেলার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- মাসুদুর রহমান
নতুনধারা
  ২৬ মার্চ ২০২০, ০০:০০
ডা. অরূপ রতন চৌধুরী

তারার মেলা : এ বছর এমন এক সময় স্বাধীনতা দিবস এসেছে, যে সময় করোনার ভয়ে গোটা জাতি যেন পরাধীনতার শিকলে বন্দি হয়ে আছে। এ বিষয়ে কী বলবেন!

\হডা. অরূপ রতন চৌধুরী : প্রতি বছরই স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস এলে মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়ের দিনগুলো খুব মনে পড়ে। কত কষ্টের বিনিময়েই না আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পেরেছি। যাদের জীবনের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ স্বাধীন হলো তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। ভক্তি ভরে স্মরণ করি। এই দিনগুলো একদিকে সুখের হলেও অন্যদিকে বেদনার। এর সঙ্গে এবার যোগ হলো নতুন আতঙ্ক। করোনার কারণে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের বিষয়টি হয়তো প্রতিবারের মতো আনন্দমুখর হবে না।

তারার মেলা : মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার গল্পটি আপনার মুখে শুনতে চাই...

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: আমি তখন ঢাকা ডেন্টাল কলেজের প্রথমবর্ষের ছাত্র ছিলাম। ডেন্টাল কলেজ আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ তখন একসঙ্গে ছিল। একেবারেই তরুণ। বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। এখন এই বয়সের ছেলেরা এত সচেতন নয়। বাবা-মা, ভাই-বোন পরিবারের সবার মায়া ত্যাগ করে আমিও অন্যদের মতো নেমে পড়ি। সময়টা ছিল জুন মাসের প্রথম দিকে। ফিরে আসতে পারব কি না! সে আশা ছেড়ে দিই। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত অনেকেই যুদ্ধে চলে যান। অনেকেই যুদ্ধ থেকে আর ফিরে আসেনি। তারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। অনেকের নাম আমার মনে নেই। তবে তাদের কথা মনে আছে। কলকাতায় যাওয়ার উদ্দেশে আমি ঢাকা থেকে বের হয়ে পড়ি। একজন লোক আমাকে সাহয্য করেন। তার বাড়িতে আশ্রয় নিই। মুক্তি

তারার মেলা : মূলত কোন বিষয়টি আপনাকে যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল?

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ থেকেই আমাদের দেশের তরুণরা পাকিস্তানের নানা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আসছিল। তখন থেকেই নিজের মধ্যেও প্রতিবাদের উন্মাদনা কাজ করছিল। তবে শেখ মুজিবরের ৭ মার্চের ভাষণ ঐতিহাসিক ভাষণই আমাকে সব চেয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রতি। সেই ভাষণে গোটা দেশবাসী প্রতিবাদী হয়ে পড়ে। তরুণরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ না হলে আজ দেশ স্বাধীন হতো না। নয় মাস নয়, দেশ স্বাধীন হতে হয়তো ১৮ মাস কিংবা আরও অনেক সময় চার-পাঁচ বছরও লেগে যেত। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র নিয়ে আমি একটি বই লিখেছি। ২১ মার্চ প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারণে এখন প্রকাশ পাচ্ছে না।

তারার মেলা : যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কতটা অবদান রেখেছে বলে মনে হয়?

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মুক্তিকামী মানুষের একটি প্রাণ ছিল। একাত্তরে যুদ্ধের জন্য সেক্টর ছিল ১৪টি। যেগুলো থেকে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালিত হতো। আর 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' ছিল অঘোষিত একটি সেক্টর। দেড়-দুইশ' শিল্পী সেখানে কাজ করতেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে যুদ্ধের সব খবরাখবর জানানো হতো। যারা স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন তারা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতি উদ্‌গ্রীব হয়ে থাকতেন। 'পূব দিগন্তে সূর্য ওঠছে', 'কারার ওই লৌহ কপাট', 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি', 'তীর হারা এই ডেউয়ের সাগর' এ রকম অসংখ্য গান শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, পুরো দেশবাসীকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাদের উজ্জীবিত করেছে, প্রেরণা জুগিয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র না থাকলে হয়তো বাংলাদেশ এত সহজেই স্বাধীন হতো না।

তারার মেলা : কখন প্রথম শুনতে পেয়েছিলেন বিজয়ের খবর?

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : যুদ্ধের শেষ সময় পযর্ন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেই ছিলাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিজয়ের খবর শুনতে পাই। সবাই উলস্নাসে মেতে উঠি। পাশের মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনে একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাই। বিজয়ের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে শহিদুলস্নাহ তৎক্ষণাৎ একটি গান লিখে ফেলেন; আর সুর করে ফেলেন সুজেয় শ্যাম। সবাই মিলে গাইতে থাকি 'বিজয় নিশান উড়ছে ওই' গানটি।

তারার মেলা : স্বাধীনতার পর এ সময়ে প্রত্যাশার প্রাপ্তি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা কিংবা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন সৈনিক হিসেবে গর্ববোধ করি। একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বপ্ন দেখি। যেখানে সব ধমের্র লোকের বসবাস থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশের উন্নয়নের জন্য অধিক কাজ করে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর থেকে যদি এই ধারাবাহিকতা থাকতো তবে আমাদের দেশও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতো। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কোথা থেকে কোথায় এসেছে। আমরাও পারতাম কিন্তু রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি।

তারার মেলা : আপনার কি মনে হচ্ছে, তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠছে?

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সেভাবে বেড়ে ওঠছে না। আধুনিকতা ও প্রযুক্তির দিকে যেভাবে ঝুঁকছে দেশপ্রেমের দিকে তরুণ প্রজন্ম ততটা ঝুঁকছে না। দেশপ্রেম না থাকলে নিজের ও দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। তরুণরা অনেকেই মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হচ্ছে। এটা আমাকে ব্যথিত করে।

তারার মেলা : নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ...

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আমার পরিচালিত 'স্বর্গ থেকে নরক' মুক্তি পায়। মাদক সচেতনমূলক এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফেরদৌস ও নিপুণ। এরপর কয়েক বছর আগে সরকারি অনুদানের জন্য 'মাটির টানে' শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া পাইনি। অপেক্ষায় আছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিজের মধ্যে লালন করে এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আমাদের দেশে আছেন। ঠিক তেমনই একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প নিয়ে ছবিটির গল্প। সেই মুক্তিযোদ্ধা নীরবে নিভৃতে এই প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। দেশ প্রেমের পাশাপাশি এতে মাদকের বিষয়টিও থাকবে।

তারার মেলা : গানে ব্যস্ততা?

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী: আমি সাধারণত বিশেষ দিবস উপলক্ষে গান নিয়ে কাজ করি। গত বছরে ওপার বাংলার হৈমন্তী শুকলার সঙ্গে একটি রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানগুলো নিয়ে অ্যালবাম করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে এটি প্রকাশ পাবে আশা করছি।

তারার মেলা : সবশেষে করোনার প্রভাব নিয়ে কিছু জানতে চাই...

ডা. অরূপ রতন চৌধুরী : আমাদের দেশের জন্য করোনাভাইরাস অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ঘণবসতির কারণে ঢাকার জন্য একটু বেশিই বলা চলে। এ জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদের জন্যও নিরাপত্তার বিয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94096 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1