কারবালা: ১০ মুহাররম হৃদয়স্পর্শী সত্য
প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০৫ | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:৩৬

১৪৪৭ হিজরির মুহাররম মাস আমাদের দ্বারে কড়া নাড়ছে। এই মাস এলেই মুসলিম বিশ্বে নানা বয়ান, আলোচনা, মাহফিল, ওয়াজে উঠে আসে ‘দশই মহররম’-এর মাহাত্ম্য। বিভিন্ন মসজিদে মাইক বাজে এই দিনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কী কী কুদরতি ঘটনা ঘটিয়েছেন।
আদম (আ.)-এর তওবা কবুল, নূহ (আ.)-এর নৌকা ভিড়েছিল জুদি পাহাড়ে, ইব্রাহিম (আ.) মুক্তি পেয়েছিলেন আগুন থেকে, ইউনুস (আ.) বের হয়েছিলেন মাছের পেট থেকে, মুসা (আ.) পেরিয়েছিলেন লোহিত সাগর।
এসবই সত্য ঘটনা, কুরআন-হাদীসে এর উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এই সত্যের আড়ালে যে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক, ইতিহাস-নির্ধারক ও ঈমান-জাগানিয়া ঘটনা রয়েছে, সেটিই যেন আজ ছাপিয়ে যাচ্ছে অনেকের দৃষ্টির বাইরে।
কারবালার কষ্টকে পাশ কাটানোর প্রবণতা: একটি আতঙ্ক!
অনেকেই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বোঝাতে চায় ‘দশই মহররম কারবালার জন্য নয়, বরং তা পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের ঘটনা স্মরণে পালনীয়।’
তারা কখনও ইচ্ছাকৃত, কখনও অনিচ্ছাকৃতভাবে কারবালার ঘটনা ও আহলে বাইতের আত্মত্যাগকে উপেক্ষা করতে চায়, যেন সেটি শুধুই ইতিহাসের একটি 'ছোট' ঘটনা। অথচ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মোড়বদলের জায়গা হলো কারবালা!
কারবালার প্রান্তরে খলিফার নয়, বরং সত্য ও মিথ্যার, আত্মত্যাগ ও ক্ষমতার, ঈমান ও ফিতনার মাঝে হয়েছিল এক চরম সংঘর্ষ।
এখানেই প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণের টুকরা, জান্নাতের যুবকদের নেতা, তার নাতি হুসাইন ইবনে আলী (রা.) মাথা উঁচু রেখে বলেছিলেন: "মৃত্যু আমাদের জন্য লাঞ্ছনা নয়, বরং শাহাদাত আমাদের গৌরব!"
কারবালা ছিল ইসলামের পুনর্জাগরণ, নয় শুধুই শোক। দশই মহররম একটি আত্মসমীক্ষার দিন। হ্যাঁ, পবিত্র নবীদের ঘটনা আমাদের ঈমান দৃঢ় করে, কিন্তু কারবালার ঘটনা আমাদের ঈমানকে জাগ্রত ও চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।
কারবালা হলো এক আদর্শিক আন্দোলন, যার বীজ ছিল সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যে সংগ্রাম ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
ইসলামের প্রাণ ফিরে পায় যখন ইমাম হুসাইন (রা.) বলেন
"আমি বের হয়েছি উম্মতের মধ্যে সংস্কারের উদ্দেশ্যে।"
তাহলে প্রশ্ন জাগে:
আজ যারা কারবালাকে গুরুত্বহীন করে তুলে ধরতে চায়, তারা কি আহলে বাইতের সাথেই বেঈমানি করছে না?
যারা কারবালার হৃদয়বেদনাকে পাশ কাটিয়ে ‘কুদরতি ঘটনাবলি’র ভিড়ে একে গুম করতে চায়, তারা কি ইসলামের আত্মাকে অসাড় করে তুলছে না?
আহলে বাইতের ভালোবাসা ছাড়া ইসলাম অপূর্ণ। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, “যে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা রাখে না, তার মধ্যে ইসলামের আসল স্বাদ নেই।”
কারবালার মূল শিক্ষা—জালিমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, সত্যের জন্য জীবন দেওয়া এবং ইসলামকে আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাঁচিয়ে তোলা।
আজ যদি আমরা কারবালাকে শুধুই ‘একটি শোক’ হিসেবে দেখি, তবে ভুল করব। এটা যেন আমাদের জন্য ঈমান পুনর্জাগরণের প্রতিজ্ঞা হোক "হুসাইন (রা:) তুমি বীর, হকপন্থার রাহবার!"
চূড়ান্ত বার্তা:
দশই মহররমের মাহাত্ম্য কেবল ‘মাছের পেট থেকে মুক্তি’ নয়, বরং চিরকালিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মহান আহ্বান।