শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালে রোগীদের ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ অবস্থা!

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৩০

ঢাকার হাসপাতালে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ অবস্থা। যারা হাসপাতালে আসছে তাদের বেশির ভাগেরই শ্বাসকষ্ট। ভর্তির পর একজন রোগীকে কমপক্ষে আট-দশ দিন হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে। কারো কারো আরো বেশি লাগছে। ফলে বেড খালি হয় কম। প্রতিদিন যা খালি হয়, এর চেয়ে অনেক বেশি রোগী থাকে ভর্তির জন্য। বেড না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে রোগীদের। শ্বাসকষ্ট থাকায় এসব রোগীর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

হাসপাতালসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরবরাহকৃত অক্সিজেনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সামনে আরো কঠিন হয়ে পড়বে। এ জন্য তাঁরা হাসপাতালে নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের তাগিদ দিচ্ছেন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, অক্সিজেনের সংকট নেই। আর ১৪ এপ্রিল ঢাকার মহাখালীতে এক হাজার ৫০০ বেডের কভিড সেন্টার চালু হলে রোগী ভর্তি নিয়ে সংকট কেটে যাবে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, সংক্রমণ প্রতিরোধ করা না গেলে হাসপাতালে রোগী সামাল দেওয়া যাবে না, যতই বেড বা যন্ত্রপাতি বাড়ানো হোক। আর সংক্রমণ ঠেকাতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করিডরে রোগী ও স্বজনে ঠাসাঠাসি। যেমন ভিড় আউটডোরে, তেমনি ভর্তি রোগীদের। মেডিসিন বিভাগে ভিড় যেন উপচে পড়ছে। অনেকেই ছুটছে করোনা পরীক্ষার জন্য, আবার কেউ পরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতে এসেছে চিকিৎসকের কাছে। কারো অল্প জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথা, আবার কারো হালকা শ্বাসকষ্ট। জরুরি বিভাগে যারা আসছে, তাদের বেশির ভাগেরই শ্বাসকষ্ট। ওই হাসপাতালের করিডরে সামসুল ইসলাম নামের কেরানীগঞ্জের আটি বাজারের এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘বাসার তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বাবার বয়স ৭২ বছর, আগে থেকেই অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস। আক্রান্ত হওয়ার দুই দিন পর্যন্ত কিছুটা ভালো ছিল, কিন্তু এর পর থেকেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। ডাক্তাররা প্রথমে আইসিইউয়ের কথা বললেও এখানে আইসিইউ খালি না থাকায় শুধু অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কিছুই করার নাই। প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে খরচ চালানোর অবস্থা নাই। যা হওয়ার হবে।’

আইসিইউ না হলেও ভাগ্যজোরে ওই রোগীর কপালে একটি সাধারণ বেড ও অক্সিজেন জুটলেও কিছুক্ষণ পরে আসা মমতাজ বেগম নামের ষাটোর্ধ্ব এক রোগীর আর জায়গা হয়নি এই হাসপাতালে। তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় স্বজনরা তাঁকে এখানে নিয়ে এসেছিল মোহাম্মদপুর থেকে। কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকেই তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় কোনো বেড খালি না থাকায়। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে দ্রুত অন্য কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের করোনা ইউনিটে মোট বেডসংখ্যা ২০০ (জেনারেল ১৯০ ও আইসিইউ ১০টি)। কী করব, আমাদের তো কিছু করার নেই। গতকালও (মঙ্গলবার) কয়েকটি বেড খালি ছিল, কিন্তু রাতের মধ্যেই তা ভরে গেছে। গতকাল কোনো বেডই খালি নেই; না আইসিইউ, না জেনারেল বেড। আর যারা এসেছে তাদের রিলিজ দিতে কমপক্ষে আট-দশ দিন লাগছে। প্রতিদিন হয়তো দু-চারটি বেড খালি হচ্ছে, কিন্তু রোগী আসে কয়েক গুণ বেশি। তাদের ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া তো উপায় নেই।’

ওই পরিচালক বলেন, ‘এখন যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তারা সবাই শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসে। আমরাও শ্বাসকষ্টের রোগীকেই অগ্রাধিকার দিই ভর্তির ক্ষেত্রে। কারণ তাদের অবস্থা খুব খারাপ থাকে, ফলে তাদের বাঁচানো সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়ে।’

মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। হাসপাতালে কিন্তু ঠাঁই হচ্ছে না। যাদেরই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে তারাই হাসপাতালে আসছে। এমন এক অবস্থার দিকে আমরা যাচ্ছি, যেখানে কিন্তু অক্সিজেন সাপোর্ট চালিয়ে যাওয়াও কঠিন হবে। কারণ অনেকেরই প্রতি মিনিটে ৬০-৭০ লিটার করে অক্সিজেন লাগছে। একেকজন রোগীর যদি দিনে সাত-আট ঘণ্টাও একই ফ্লোতে অক্সিজেন লাগে, তাহলে সব রোগী সামাল দেওয়া এক পর্যায়ে গিয়ে অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

অবশ্য তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে যদি প্রতিটি হাসপাতালে নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা যায়, তবে হয়তো কাজটা সহজ হতে পারে। তা না হলে অন্যদের মাধ্যমে অক্সিজেন রিফিল করে কুলানো যাচ্ছে না। কখনো কোনো হাসপাতালে প্রয়োজনমতো অক্সিজেন রিফিল করা না গেলে বড় বিপদ হয়ে যাবে।’

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে