ঝালকাঠিতে ডায়রিয়া রোগীর চাপ : নেই পর্যাপ্ত বেড ও স্যালাইন

প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩১

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছেন নারী-শিশুসহ শত শত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে গত সাত দিনে ৮০৪ জন চিকিৎসা নিয়েছে এবং সোমবার দুপুর ১টা থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেড় শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন জেলা হাসপাতালে। একইভাবে জেলার নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল থেকে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন।

 

এ অবস্থায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা না থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা অনেকে সাধারণ ওয়ার্ড, ওয়ার্ডের মেঝে ও করিডরসহ হাসপাতালের সিঁড়িতে ঠাঁই নিতে বাধ্য হয়েছে। তার ওপর সরকারি এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটে রোগীদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। নেই পর্যাপ্ত সেলাইন ও ওষুধ।

 

ডায়রিয়া প্রতিরোধে ঝালকাঠি স্বাস্থ্য বিভাগ ও হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় এবং উপজেলা পর্যায়ের ওষুধের দোকানগুলোতে স্যালাইনের সংকট থাকায় আক্রান্ত রোগী ও তাদের পরিবার আশঙ্কায় ও চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।  

 

ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগীর জন্য ১৩টি বিছানা রয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীরা হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলা সদর হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও রোগী বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল হাসান বলেন, এ মাসের শুরু থেকে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হঠাৎ গরম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকার কারণে এমনটি হতে পারে বলে তিনি ধারণা করেন।

 

নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মুনিবুর রহমান জুয়েল বলেন, ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে আমরা যথাযথ চেষ্টা করছি। ইডিসিএল থেকে স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ কম থাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

 

রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স স্বপ্নিল সমু জানান, প্রতিদিন যে হারে ডায়রিয়া রোগী আসছে তাতে ডাক্তার-নার্সসহ আয়াদের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৩৭ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও গত এক সপ্তাহ ধরে এভাবে রোগীর চাপ বেরেই চলছে বলে জানান।

 

কাঠালিয়ায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ব্যপক আকারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ২৪ ঘন্টায় (রবিবার বিকাল ৪টা থেকে সোমবার দুপুর ১টা) অর্ধশত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি  হয়েছে। গত এক সপ্তাহে কাঠালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৭ জন রোগী ভর্তিসহ তিন শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। মেডিকেল অফিসার ডা: ইমরান খান জানায়, প্রয়োজনীয় স্যালাইন সংকট, ডায়রিয়া সংশ্লিষ্ট সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও মেট্রোনিডাজল ইনজেকশনসহ অন্যান্য ওষুধ না থাকায় ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসায় দারুন সমস্যা হচ্ছে।

 

এ ব্যাপারে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, অন্য সময়ের চেয়ে এবছর ডায়রিয়া আক্রান্তের হার অনেক বেশি। করোনা ও ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে ইতোমধ্যে ডাক্তার ও নার্সরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঔষধ ও সেলাইন সংকট আছে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় তারা একটু হিমশিম খাচ্ছে বলেও জানান।

 

এদিকে জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী, সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী, সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাফর আলী দেওয়ান সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ইউনিট পরিদর্শন করেন। জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় স্যালাইন ও ডায়রিয়ার ওষুধ সরবরাহের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি প্রদান করা হয়েছে বলে জানান।

 

যাযাদি/এস