বরিশালে দশম শ্রেণির ছাত্রের চিকিৎসকের সহায়ক রোবট ‘মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ উদ্ভাবন

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩৬

বরিশাল অফিস

 

মহামারি করোনার সংক্রমণ নিয়ে গোটা বিশ্ব যখন উদ্বিগ্ন তখন রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকের সহায়ক হিসেবে ‘রোবট’ উদ্ভাবন করেছে বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার ভদ্রপাড়া এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার সরদারের ছেলে শাওন সরদার সোলাইমান। সে উপজেলার গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির ছাত্র । এ রোবট করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরামর্শও দিতে পারবে।

 

বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সবাই। এ পরিস্থিতিতে সংক্রমিত হওয়ার আতঙ্কে অনেকেই করোনায় আক্রান্ত রোগীদের কাছে যেতে দ্বিধা করছেন। আবার যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে বহু স্বজন, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তও হচ্ছেন। আর এমন সব পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকের সহায়ক হিসেবে ‘রোবট’ উদ্ভাবন করেছে আগৈলঝাড়া উপজেলার ১০ শ্রেণির ছাত্র শাওন সরদার সোলাইমান। বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী জানায়, ২০২০ সালের মার্চ মাসে যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হয়, তখন বিভিন্ন হৃদয়বিদারক দৃশ্য ও ঘটনা জানতে পারেন। যেমন আক্রান্ত হলে মায়ের কাছে সন্তান যাচ্ছে না, বাবা-মাকে ফেলে রেখে যাচ্ছে সন্তানরা। তখনই সিদ্ধান্ত নেন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবার জন্য একটি ‘রোবট’ তৈরি করবেন। এরপর অনলাইনে ‘রোবট’ উদ্ভাবনের ভিডিও দেখে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টের সিস্টেম ডেভেলপ করতে শুরু করেন।

 

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওয়া শাওন আরও জানান, ২০২০ সালের মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে রোবট বানানোর কাজে হাত দেন। ধীরে ধীরে নিজেই এর ডিজাইন তৈরি করেন এবং নাম দেন ‘মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট’। এখন রোবটটি  তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে, এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সহায়ক সেবাগুলো দিতে পারে সেই প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছেন। এতে করে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।  এ রোবট করোনায় আক্রান্ত রোগীর বেডের পাশে গিয়ে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারবে। আবার রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ওঠানামা দেখা, রোগীর অবস্থান থেকে দূরবর্তী কোথাও চিকিৎসক থাকলে তাকেও সরাসরি দেখাতে পারবেন। রোবটের পাঠানো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রোগীকে নতুন কোনো পরামর্শ দিলে বা করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে রোবট তা বলে দেবে। হাত খরচের টাকা জমিয়ে প্রায় ১৮ হাজার টাকায় এ মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট নামক রোবটটি তৈরি করেছেন শাওন। 

 

তার বাবা দেলোয়ার সরদার জানান, নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর নিজ থেকেই শাওন বলতো সে রোবট বানাবে, তখন তার কথায় তেমন একটা গুরুত্ব দিত না কেউ। তবে সে স্কুলে যাওয়ার হাত খরচের টাকা জমাত আর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করত। এখন তো একটি রোবট তৈরি করে ফেলেছে, যেটি কথাও বলছে। কম্পিউটার না থাকায় সিস্টেমের সব কাজ মোবাইল দিয়ে করতে হয় বলে জানিয়ে শাওন বলেন, এখন পর্যন্ত যা পেরেছে তা নিজের চেষ্টায় এসেছে।

 

উল্লেখ্য, শুধু শাওন সরদারই নয় ঐতিহ্যবাহী গৈলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের আরও দুজন ছাত্র ইতোমধ্যে ‘রবিন’ ও ‘বঙ্গ’ নামে দুটি স্বয়ংক্রিয় রোবট উদ্ভাবন করেছে। যা নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে।

 

আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম জানান, যারা রোবট নিয়ে কাজ করছে তারা সহায়তার আবেদন করলে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সহায়তার চেষ্টা করা হবে।

 

যাযাদি/এস