তামাক ছেড়ে সুস্বাস্থ্য গঠনের আহ্বান অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২১, ১৯:৩৫

যাযাদি রিপোর্ট

 

তামাক একটি নেশা সৃষ্টিকারী পণ্য। পৃথিবীর অর্ধেক শিশুই নিকোটিনপূর্ণ বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। সুস্থ পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য তামাককে বর্জন করতে হবে। ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে বুধবার সকালে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) আয়োজিত ‘তামাকের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও যুবসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে বক্তারা এ দাবি জানান। 

 

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সভাপতিত্ব করেন টিসিআরসির সভাপতি ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান ডাক্তার এস. কাদির পাটোয়ারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিনসহ প্রায় তিন শতাধিক জন ওয়েবিনারে অংশ নেন।

 

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ধূমপানের ফলে বিশ্বে প্রতিবছর ৫ দশমকি ৪ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ সংখ্যা ১১ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে। শুধু একটা তামাক পাতায় ১৯টি ক্যানসারের উপাদান থাকে। চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত মানব শরীরের এমন কোনো অংশ নেই, যা ধূমপানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি, ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা ধরনের ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি স্থায়ীভাবে অন্ধত্ব বরণ পর্যন্ত করতে হতে পারে ধূমপানের ফলে।

 

তিনি তার উপস্থাপনায় তামাকের বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্ষতি উল্লেখের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষতিও তুলে ধরেন। মূল উপস্থাপনা শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তামাক বর্জন করার ও তামাক নিয়ন্ত্রণে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

 

শুভেচ্ছা বক্তব্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এস কাদের পাটোয়ারী বলেন, ‘তামাকের কোনো ভালো দিক নেই। এরপরেও তামাকের ব্যাপারে কিছু ভুল ধারণা এবং পারিবারিক ও মানসিক নানা ধরনের হতাশার কারণে কিশোর-তরুণরা অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়ছে ধূমপানে। ধূমপান থেকেই আসলে সব রকম নেশার দিকে যাত্রা শুরু হয়। তিনি তরুণদেরকে তামাক থেকে দূরে থেকে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ার আহ্বান জানান।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক (বাংলাদেশ) অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের ব্যবসার প্রসার এবং টিকিয়ে রাখার জন্য নানাবিধ ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করে। এর ফলে মানুষ তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব ও দিকগুলো সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে এই কাজগুলো করা হয়, যাতে সাধারণ মানুষ তামাকপণ্যগুলোকে তেমন একটা ক্ষতিকর বলে মনে না করে। আমাদেরকে তাদের এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। তামাক বা নেশার দিকে ধাবিত না হয়ে, তরুণ যুবকরা যেন শারীরিক ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলেÑ সে বিষয়ে সুপরামর্শ দেন তিনি।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং মানুষরা বুঝে উঠতে পারছে না যে তারা টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাচ্ছে। তামাক পণ্যের উপরে প্রচুর করারোপ করা প্রয়োজন, যাতে তা তরুণদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ধূমপান করা কোনো স্মার্ট বিষয় নয়- এটা তরুণ প্রজন্মকে বুঝতে হবে। তামাকবিরোধী আন্দোলনকে সফল করতে গেলে তরুণদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এছাড়া রাষ্ট্রকেও বিশেষজ্ঞদের মতামত গুরত্ব সহকারে প্রয়োগে নিয়ে যেতে হবে। তিনি যোগ করেন, ধূমপায়ীরা সরকারি চাকরি পাবে না- এই মর্মে নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে তরুণদের মাঝে ধূমপানের প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।

 

টিসিআরসির প্রোগ্রাাম ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজার সঞ্চালনায় উক্ত ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল ও লোকাল পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। তরুণদের তামাক বর্জন করার আহ্বান জানিয়ে ও এবারের তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’ স্লোগানের মাধ্যমে ওয়েবিনারটি শেষ করা হয়।

 

যাযাদি/এস