উন্মুক্ত দেশের আকাশপথ

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ

প্রকাশ | ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০৯:৪৯

ম লাইজুল ইসলাম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আবারও করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। চীন, রাশিয়াসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি পার্শবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এদিকে, করোনার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে এভিয়েশন ও পর্যটন খাতে। এই খাতদুটিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনে ইতোমধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে আকাশপথ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অবস্থায় সারাবিশ্বের সঙ্গে দেশের আকাশপথ উন্মুক্ত করে দেওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। কিন্তু তাতে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য হলে দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই বিদেশ থেকে আগতদের স্বাস্থ্যবিধি পালনে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। ভ্রমণে বিদেশি নাগরিক ও প্রবাসীরা বাংলাদেশে এলে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিনে কিভাবে নজরদারি হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন বিভাগের সদস্য গ্রম্নপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী এম জিয়া উল কবির বলেন, 'আমরা এটি দেখভাল করি না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভালো বলতে পারবে। বিমানবন্দরের আগমনের পর কোয়ারেন্টিন ইসু্য পুরোপুরি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।' তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরে ফ্লাইট চলাচলে ইতোমধ্যে শতভাগ আসন পূর্ণ হতে শুরু করেছে। কার্গো ভিলেজেও কাজ পুরোদমে চলছে। বেশ সরব কার্গো বিভাগ। বিশ্বের যেসব দেশ থেকে ফ্লাইট আসে বা আমাদের এখান থেকে যায় সেসব রুটেও বেশ সাড়া পাচ্ছি। যত বাধা-নিষেধ উঠবে, তত যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন বলেন, দেশের ভেতরে করোনার প্রকোপ কমে গেছে। বিশ্বেও করোনার সংক্রমণ কমেছে। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টেশনিক্যাল কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদেশিদের বাংলাদেশে আসার যে বিধিনিষেধ ছিল তা তুলে নেওয়ার। তাই আমরা বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিয়ে বিধিনিষেধ তুলে নিতে সিভিল এভিয়েশনকে বলেছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা শনাক্তের হার আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে বিষয়টি জেনেও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কতটা যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে এই মুখপাত্র বলেন, যেসব দেশে বিদেশিদের আগমন নিষেধ সেখানেও করোনার প্রকোপ বাড়ছে। তাই সব কিছু বন্ধ করে দিলে করোনার সংক্রমণ বন্ধ করা সম্ভব না। স্বাস্থ্যবিধি মানলেই হবে। টিকা গ্রহণ না করা ব্যক্তিদের দেশে ঢুকতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কি ঠিক হয়েছে এমন প্রশ্নে রোবেদ আমিন বলেন, ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করলে কোভিড ছড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও আমাদের দেশে ঘটেছে। যা শুধু আমাদের দেশেই না বিশ্বের অনেক দেশেই ঘটেছে। এটা বাস্তবতা। তাহলে কি সব খুলে দেওয়া বা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া ঠিক হলো? এ ব্যাপারে স্বাস্থের মুখপাত্র বলেন, যারা পালিয়ে যাবে তাদের ধরে এনে আমরা কোয়ারেন্টিন করি। এ প্রক্রিয়াটি জটিল কিন্তু অসম্ভব না। করোনার প্রকোপ আরও বাড়লে কি সিদ্ধান্ত নেবেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্বের কোন দেশে কী হলো তা আমাদের জানার বিষয় না। শুধু ভারতে বৃদ্ধি পায় কি না তা দেখতে হবে। যদিও ভারতের কিছু প্রদেশে করোনার শনাক্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সীমান্তের পাশে ভারতের কোনো প্রদেশে যদি কারোনা বৃদ্ধি পায় তবে সীমান্ত ও আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে। কারণ ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সীমান্ত দিয়ে মানুষের মাধ্যমে আমাদের দেশে ছড়িয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে এখন যারা ইউরোপ থেকে টিকা না নিয়ে আসবে তারা ৭ দিন বাদ্ধতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করবে। আর এটা বাস্তবিক ভাবেই কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। বাংলাদেশ বিমানের সাবেক পরিচালক ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ নাফিজ ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ উন্মুক্ত করাটা খুবই জরুরি ছিল। এই করোনায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টর এভিয়েশন ও টু্যরিজম। তবে কিছু বিষয়ে সবার নজর রাখতে হবে। কোয়ারেন্টিন, কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট ও স্বাস্থ্যবিধি। যারা দেশে ভ্রমণের জন্য আসবে সেই যেই হোক বিদেশি বা দেশি অব্যশই তার ক্ষেত্রে এই তিনটি বিষয় কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, যেসব হোটেলে বিদেশিরা উঠবে সেখানো কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হবে। দর্শনীয় স্থানে গেলে সেখানের প্রশাসনকেও এই সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। যদি সব কিছু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু এগুলোর ব্যত্যয় ঘটলে দেশের অবস্থা আবারও খারাপ হতে পারে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের নিজস্ব নিয়ম মিলিয়ে মোট ৩৫টি নির্দেশনা আমরা পালন করে উড়োজাহাজ পরিচালনা করছি। এখন যুক্ত হয়েছে ৭২/৪৮/২৪ ঘণ্টার আরটি পিসিআর। তারপরও আমরা যাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের সেফটি পণ্য সরবরাহ করি। এতদিন কোনো সমস্যা হয়নি। আশা করি ভবিষ্যতেও সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, করোনার কারণে বিশ্বের সব এয়ারলাইন্স আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এই মুহূর্তে সব উন্মুক্ত হওয়াতে সারা বিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলো ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে আমরা যারা এয়ারলাইন্স পরিচালনা করি তারাও চেষ্টা করছি ঘুরে দাঁড়াতে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ২৪ তারিখ থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশের নাগরিক বাংলাদেশে ভ্রমণ বা আগমন করতে পারছেন। বাংলাদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেবিচক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর যে বিধিনিষেধ ছিল তাও তুলে নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে যে নির্দেশনা দেওয়া ছিল তাই পালন করেছে বেবিচক। তারা সব উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে ও দেশকে সার্কুলার দিয়ে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশে প্রবেশে সব বাধা কেটে গেল বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের।