শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কোভিডের মুখে খাওয়ার প্রথম ওষুধ এসেছে বাংলাদেশের বাজারে

যাযাদি ডেস্ক
  ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১৯:০৪
আপডেট  : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ২০:২৩

বাংলাদেশের বাজারে এসেছে কোভিড চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার প্রথম ওষুধ মলনুপিরাভির।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এই ওষুধটি 'এমোরিভির ২০০' নামে মঙ্গলবারই বাজারে এনেছে বলে বিবিসি জানতে পেরেছে।

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের বরাত দিয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে, বুধবার নাগাদ তাদের তৈরি মলনুপিরাভির বাজারে চলে আসবে।

আর স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা দু-তিনদিনের মধ্যেই ওষুধটি বাজারে নিয়ে আসতে পারবে।

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিপনন বিভাগের পরিচালক আহমেদ কামরুল আলম বিবিসিকে জানান, তারা প্রতিটি পিলের দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে রাখবেন বলে পরিকল্পনা করছেন।

তিনটি প্রতিষ্ঠানকেই মলনুপিরাভির উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের অনুমোদন এরই মধ্যে দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওষুধটির জরুরি ব্যবহার ও উৎপাদনের অনুমোদন দেয়ার কথা জানান।

তিনি জানান, "কোভিডের চিকিৎসায় জরুরি ব্যবহারের জন্য অ্যান্টি-ভাইরাল হিসেবে মুখে খাওয়ার ওষুধ মলনুপিরাভিরকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।"

মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান এই ওষুধটি প্রস্তুত ও বাজারজাত করার আবেদন করেছিল। বেক্সিমকো, স্কয়ার ও এসকেএফকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে, বাকী সাতটি প্রতিষ্ঠানও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

মলনুপিরাভির কী?

মলনুপিরাভির একটি ট্যাবলেট বা বড়ি। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এই ওষুধটি দিনে দুইবার ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদেরকে দেয়া হয়। মূলত এই ওষুধটি ফ্লু এর চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অনুযায়ী, এই ওষুধটি রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেয়।

করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এটাই প্রথম ওষুধ যেটি শিরায় প্রয়োগ নয় বরং মুখে সেবন করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মার্ক, শার্প এন্ড ডোম (এমএসডি) এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস-এর তৈরি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এটিই মুখে খাওয়ার প্রথম ঔষধ।

যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে ওষুধটির চার লাখ ৮০ হাজার কোর্স কিনতে সম্মত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে যে, নভেম্বরেই এর প্রথম চালান আসবে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় গবেষণার আওতায় প্রাথমিকভাবে এই ওষুধটি টিকা নেয়া এবং না নেয়া-দুই ধরণের রোগীদেরকেই দেয়া হবে। তাদের থেকে পাওয়া তথ্যের বিশ্লেষণের পরই এই ওষুধটি সম্পর্কে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

রোগীর মধ্যে কোভিডের উপসর্গ দেখা দেয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ওষুধটি দেয়া গেলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়।

কিভাবে কাজ করে মলনুপিরাভির?

নতুন এই চিকিৎসায় ভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট এনজাইমকে লক্ষ্য করে কাজ করে। ওই এনজাইমটি ব্যবহার করে ভাইরাসটি নিজের মতো আরো ভাইরাস তৈরি করে সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

এই ওষুধটি ভাইরাসটির জেনেটিক কোডে একটি ত্রুটি তৈরি করবে যা ভাইরাসটিকে বিভাজিত হতে বাধা দেয়। যার কারণে দেহে ভাইরাসের পরিমাণ কমে যায় এবং এর কারণেই রোগের তীব্রতাও কমে যায়।

মার্ক বলছে, এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়ান্টের উপরও সমানভাবে কার্যকর হওয়ার কথা।

যুক্তরাজ্যের ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমএইচআরএ জানায়, এই ট্যাবলেটটি সেসব রোগীদের ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে যাদের মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ রয়েছে এবং কমপক্ষে একটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে যেমন স্থূলতা, বার্ধক্য, ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগ।

সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী জুন রাইন বলেন, "কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ওষুধটি নতুন হাতিয়ার হিসেবে যোগ হল।"

তিনি বলেন, "এটি এই রোগের জন্য বিশ্বের প্রথম অনুমোদিত অ্যান্টি-ভাইরাল যা শিরায় না দিয়ে মুখে খাওয়া যেতে পারে।"

"এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মানে কোভিড-১৯ একটি গুরুতর পর্যায়ে যাওয়ার আগেই হাসপাতালের বাইরেই এর মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব।"

কতটা কার্যকর?

বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, মলনুপিরাভির ওষুধটি কোভিডের চিকিৎসায় রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুহার অর্ধেক কমিয়ে আনতে পারে।

বিবিসি'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সম্প্রতি কোভিড আক্রান্ত ৭৭৫ জন রোগীর ওপর মলনুপিরাভিরের ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়েছে। এতে যা পাওয়া গেছে তা হলো:

•যাদের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ৭.৩% হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল

•যা ১৪.১ % রোগীকে দেয়া সাধারণ পিলের তুলনায় অর্ধেক।

•মলনুপিরাভির যাদেরকে দেয়া হয়েছিল তাদের কারো মৃত্যু হয়নি। তবে পরীক্ষায় অন্য ওষুধ রোগীদের মধ্যে আটজন কোভিড-এ মারা গিয়েছিল।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ফলাফলগুলি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত হয়েছিল এবং এখনও পিয়ার-রিভিউ বা পর্যালোচনা করা হয়নি।

তবে তথ্য-উপাত্ত থেকে যে বিষয়টি জানা যায় সেটি হচ্ছে ওষুধটির কার্যকারিতা পাওয়ার জন্য উপসর্গ দেখা দেয়ার পর পরই মলনুপিরাভির সেবন করতে হবে। এর আগে এরইমধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণা আশানুরূপ ফল না আসার কারণে স্থগিত করা হয়।

ওষুধটির অনুমোদনের নথিতে, এমএইচআরএ সুপারিশ করে যে, কোভিড পরীক্ষায় পজিটিভ আসার পর যত দ্রুত সম্ভব ওষুধটি সেবন শুরু করতে হবে। উপসর্গ দেখা দেয়া শুরু হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ব্যবহার শুরু করার পরামর্শ দেয়া হয়।

কিংস কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক পেনি ওয়ার্ড, যিনি এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেছেন: "যদি এই ফলাফল যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার উপরও একইভাবে কাজ করে, তবে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় এমন রোগীর সংখ্যা অর্ধেক হয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে যেতে পারে।"

"সম্ভবত মনে হচ্ছে যে এটি রোগের জটিলতার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য সীমাবদ্ধ রাখা হবে - উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বয়স্ক ব্যক্তি যারা হৃদরোগ, ফুসফুস বা কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারসহ অন্য রোগে ভুগছেন।"

যুক্তরাজ্য ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশও মলনুপিরাভির ক্রয়ে চুক্তি করেছে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

এই ওষুধটির খুব জটিল কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।

তিনি বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে স্বাভাবিক ধরণের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, মাথাব্যথা, বমি এবং মাথা ঝিমঝিম করার মতো হালকা থেকে মাঝারি ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

তবে এগুলো জটিল কিছু নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে এই ওষুধটি সেসব রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে যারা ১৮ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সুপারিশ ছাড়া কোন রোগীকে নিজে নিজে মলনুপিরাভির কিংবা অন্য কোন ঔষধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে