রোগী বাড়লেই পরিধি বাড়বে

বন্ধ হবে না করোনা ফিল্ড হাসপাতাল

প্রকাশ | ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:১৯

লাইজুল ইসলাম

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কোভিড ফিল্ড হাসপাতালটিতে বর্তমানে ২৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। যতদিন কোভিড থাকবে, ততদিন এই হাসপাতাল চলতে থাকবে বলে জানিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রয়োজন হলে হাসপাতালটির পরিধি আরও বড় করা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বড় করলেই হবে না, চিকিৎসার মানও বৃদ্ধি করতে হবে। অক্সিজেন ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র আরও বৃদ্ধি করতে হবে। মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দ্রম্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আওতাধীন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অডিটোরিয়ামে নির্মিত ৩৯৭ শয্যার ফিল্ড হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ৭ আগস্ট। তখন জানানো হয়, এই হাসপাতালটি ৩৯৭ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল হলেও রোগী বাড়লে ৬০০ এবং পরে ১ হাজার বেডে উন্নীত করা হবে। ৩৯৭ বেডের মধ্যে ৪০টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ও ৪০টি হাইডিপেনডেন্সি ইউটিন (এইচডিইউ) সুবিধা আছে। হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয় করোনা রোগীদের দ্রম্নত চিকিৎসা সেবা দিতে। সেই সময় করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছিল বলেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অডিটোরিয়ামটিকে করোনার ফিল্ড হাসপাতালে রূপান্তরিত করে এবং উদ্বোধনের দিন থেকেই রোগী ভর্তি করা শুরু করে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক সেসময় বলেন, প্রত্যেকটি বেডে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আইডিইউ ও এইচডিইউ বেড আছে। এখানো সম্পূর্ণ নতুন করোনা রোগীদের ভর্তি করা হবে। কোনো হাসপাতাল ছেড়ে এখানে আসলে তাকে ভর্তি করা হবে না। তবে যদি কোনো হাসপাতাল রেফার করে তবে তাকে ভর্তি করা হবে। বর্তমানে হাসপাতালটি একেবারেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এত বিশাল হাসপাতালটির মাত্র একটি ফ্লোর ব্যবহার হচ্ছে। প্রথম তলায় মাত্র ২৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন কিছু চিকিৎসক ও নার্সরা। তবে দ্বিতীয়তলা একেবারেই শূন্য পড়ে আছে। হাসপাতালটির সামনে একজন ক্লিনারের সঙ্গে কথা হয়। নাম-পরিচয় গোপন করার শর্তে তিনি বলেন, 'হাসপাতালের ভিতরের সব সিটের মধ্যে বালুর আস্তরণ পড়ে যাচ্ছে। লোকবল কম থাকায় সব কিছু পরিষ্কার করে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু রোগী কম তাই লোকজনেরও আশা-যাওয়া খুবই কম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বেশি একটা নজর দেয় না বলে জানান তিনি।' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালটির অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাজমুল করিম মানিক যায়যায়দিনকে জানান, হাসপাতালটি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। সামনে দিনগুলোতে যদি করোনা রোগী বৃদ্ধি পায় তবে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। এখানে বর্তমানে যা রোগী আছে তা খুবই কম। এত বড় হাসপাতালে মাত্র ২৫-২৬ জন রোগী খুবই কম। তাদের দেখভালের জন্য আমরা চিকিৎসক ও নার্সদের রোটেশন করে ডিউটি দিচ্ছি। তথ্য মতে, হাসপাতালটির জন্য একশ' বিশজন নার্স ও ষাটজন চিকিৎসক প্রস্তুত করা হয়েছিল। তাদের বিএসএমএমইউয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে এখানে ডিউটি করতে দেওয়ার চিন্তা করেছিল প্রশাসন। তবে করোনা কমে যাওয়ায় তা আর করা হয়নি। তবে এখনো সেই তালিকা হাতে আছে। যখনই বাড়তে থাকবে তখনই চিকিৎসক ও নার্স-স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ডিউটি দেওয়া হবে। এছাড়া আরও জানা গেছে, হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউয়ের জন্য আলাদা চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী নির্ধারণ করা হয়েছিল। তাদেরও একটি তালিকা হাতে আছে। যখনই দরকার পড়বে তাদের ডাকা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালটির অতিরিক্ত পরিচালক ডা. নাজমুল করিম মানিক যায়যায়দিনকে জানান, হাসপাতালটি যেহেতু করা হয়েছে, তাই দ্রম্নত সময়ের মধ্যে বন্ধও করা হবে না। এই হাসপাতালের জন্য আমাদের লোকবল প্রস্তুত আছে। যখনই দরকার হবে তখনই তারা কাজ শুরু করবে। করোনার প্রথম দিকে আমরা অনেক কিছুই বুঝিনি। পুরো বিশ্বই কিছু বুঝেনি। এখন কিছুটা বোঝা যাচ্ছে। তাই যখন সরকার আমাদের নির্দেশনা দিবে তখনই আমরা কাজে নেমে পড়ব। এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মানিক বলেন, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা বর্তমানে এখানে রোটেশন করে কাজ করছে। তবে তারা সংখ্যায় খুবই কম। কারণ রোগীও তো কম। আর দুই ফ্লোরের একটি মাত্র ব্যবহার হচ্ছে। খালি পড়ে থাকলে কিছুটা আস্তরণ পড়বেই। তবে অনেক দিন ধোয়ামুছা করা হয় না তা ঠিক নয়। সব সময়ই এগুলো দেখভাল করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন যায়াযায়দিনকে বলেন, হাসপাতালটি নিয়ে আমাদের এই মুহূর্তে কোনো চিন্তাভাবনা নেই। যেমন আছে তেমনই আপাতত থাকবে। তবে যদি করোনা বৃদ্ধি পায় তবে হাসপাতালটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামী ছয় মাস অন্তত এটা বন্ধ করা নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তা-ভাবনা আপাতত নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল পরিচালক ডা. ফরিদ মিয়া যায়যায়দিনকে বলেন, হাসপাতালটি এখনো চলমান আছে। সব শয্যা প্রস্তুত আছে। পরে থেকে হয়তো বালু জমতে পারে। সেটাও বেশি না। কারণ আমরা এই হাসপাতালটির প্রতি আলাদা নজর রেখেছি। তাছাড়া বিএসএমএমইউ প্রশাসন এটা নিয়ে সজাগ আছে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালটি করোনা বৃদ্ধি পেলে পূর্ণরূপে শুরু হবে। এখন হয়তো রোগী নেই। তাই ছোট আকারে চলছে। এখানে এক হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে, যা ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালের চেয়ে অনেক বড়। করোনা রোগী বাড়লেই হাসপাতালটি ব্যবহার শুরু হবে। পড়ে থেকে আইসিইউয়ের যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে ডা. ফরিদ বলেন, কোনো যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে না। সব কিছুই তদারকি করছে। সব যন্ত্রাংশ চালু আছে। যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টরা দেখভাল করছে। এই হাসপাতালসহ দেশের সব হাসপাতালকে বলা আছে, যখনই রোগী বাড়বে তখনই সবাই মিলে কোভিড অতিমারি মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার প্রায় পাঁচশ'জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। ইতোমধ্যে ৭ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খরব নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।