স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে

রোগী সামলানো নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৭

লাইজুল ইসলাম

করোনায় মৃতু্য না বাড়লেও রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে দিগুণ। এখনো বলা যাচ্ছে না বাংলাদেশে করোনার কোন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে। তবে দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের উপস্থিতি আছে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোগী যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে ওমিক্রনের সামাজিক ট্রান্সমিশন হয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত রোগী হলে তাদের সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। তখন ভেঙ্গে পরতে পারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এতে মৃতু্য বাড়তে পারে। তাই নিজেকে বাঁচাতে নিজেরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ডিসেম্বরের শেষ ১৩ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪০৭ জন। আর মৃতু্য ছিল ২৩ জন। চলতি বছরের প্রথম ১৩ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ১২৫ জন আর মৃতু্য ৫১ জন। এই অবস্থায় জিনোম সিকোয়েন্স করে ৩৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩০ জন ঢাকার আর ৩ জন যশোরের। শনাক্তের সংখ্যা ৩১ ডিসেম্বর ছিল ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ আর ১৩ দিন পর ১২ দশমিক ০৩ শতাংশ। যদি হিসাব করে দেখা হয় তাহলে আক্রান্ত বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। আর মৃতু্য বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশে মৃতু্যর সংখ্যা আর আক্রান্তের সংখ্যা কত দাঁড়াবে তার কোনো হিসাব কারও কাছে নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেন, 'এভাবে রোগী বাড়লে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। অবস্থা বুঝে ইতোমধ্যে আরও ২০ হাজার বেড বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ওমিক্রনের সামাজিক ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।' বিএসএমএমইউয়ের কোভিড চিকিৎসক ডা. ফজলে রাব্বি বলেন, ওমিক্রন নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। যদি কারো টিকা নেয়া থাকে তবে বিশেষ কিছু হবে না। কিন্তু টিকা না নেয়া থাকলে চিন্তার বিষয় আছে। তাই সবাইকে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যাদের বিভিন্ন রোগ আছে তাদের অবশ্যই টিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, এখন হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের সবারই করোনা মাইল্ড পর্যায়ে। সবার ওমিক্রন না ডেল্টা করোনা হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না। আমরা এদের ভর্তি করতে চাইনি। কিন্তু সবাই ভয়ে ভর্তি হচ্ছে। আক্রান্তের সংখ্যা যা দেখা যাচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি রোগী আছে। টেস্ট করছে না বলে বোঝা যাচ্ছে না। ডা. রাব্বি বলেন, ইউরোপে গত দুই ঢেউয়ের তুলনায় এবার আক্রান্তের হার বেশি। কিন্তু মৃতু্য কম। আর যারা মারা যাচ্ছে তারা বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন। আমাদের দেশেও তাই হচ্ছে। টিকা নেয়া থাকলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে যদি সব কিছু হাতের বাইরে চলে যায় তবে সামাল দেওয়া কঠিন হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, 'কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে। কত জন এখন পর্যন্ত করোনার ওমিক্রন আক্রান্ত তা আমরা জানি না। ঢাকাতে সবচেয়ে বেশি ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন ও হয়েছে। করোনা রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ওনাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়তো এখন সহজ হচ্ছে। কিন্তু যখনই আয়েত্তের বাইরে চলে যাবে তখনই মৃতু্য বাড়তে থাকবে। তিনি আরও বলেন, 'প্রতি বিশ লাখে পয়েন্ট ওয়ান পারসেন্ট মারা গেলেও প্রতিদিন দুই হাজার মানুষ মারা যাবে। দেশে কত মানুষ আছে? তাহলে অবস্থাটা কি হতে পারে ধারণা করতে পারেন? এই অবস্থায় আমরা সচেতন না হলে কিছুই করার থাকবে না। তাই সবাইকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।' ডা. রোবেদ আমিন বলেন, 'ওমিক্রনের জন্য নতুন কোনো নিয়ম নেই। সব পুরান কথা। মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। বেশি ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। আর সবাইকে সচেতন হতে হবে নিজের জন্য।' জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আরেকটি ঢেউ মনে হয় চলে এসেছে। এই ঢেউয়ে যে কি হবে তা কেউ বলতে পারে না। পাশের দেশে প্রতিদিন দ্বিগুণ আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশেও আক্রান্ত বাড়ছে। মৃতু্য যদিও কম তবে এটা তো গত ১৪ দিন আগের কথা। আগামী ১৪ দিন পরে কি হবে কেউ বলতে পারে না। পরিবেশ খুব কঠিন। মৃতু্যপুরীতে পরিণত হবে দেশ।' তিনি আরও বলেন, 'যে ১১ দফা দেওয়া হলো তা কি কার্যকর হয়েছে। ১১ দফা দিয়ে আবার সেটার মধ্যে কাটা ছেঁড়া করা লাগল। আমি আগেই বলেছিলাম, মানুষের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হয় এসব করলে। সেই কাটাকাটি আবারও করা লাগলো। বাসে সব আসনে লোক নিয়ে চলবে। মানুষ তো মানছেই না কোনো নির্দেশনা।' অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'শুধু বললেই হবে না যে মাস্ক পরতে হবে। সেটা পরাতে বাধ্য করতে হবে। এটা তদারকি করবে কে সেটি বলা হয়নি এই বিধিনিষেধে। বাস্তবায়ন তো মন্ত্রণালয়ের একার দায়িত্ব না। অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার দায়িত্ব আছে। তাদের মধ্যে সমন্বয় দরকার। লকডাউন দিয়ে যে লাভ হয় না তা আমরা আগেই দেখেছি। সুতরাং মাস্ক পরার ওপর জোর দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি পালন না করলে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।'