পাল্টে যাচ্ছে ডিএনসিসি হাসপাতাল

রোগীদের সেবায় আসছে আধুনিক সব যন্ত্রাংশ

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২২, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২২, ০৯:০১

লাইজুল ইসলাম

আধুনিক নানা সরঞ্জামাদিতে সজ্জিত হয়ে আমূল পাল্টে যাচ্ছে ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল। করোনার প্রকোপ কমে গেলে এই হাসপাতালটি পরিপূর্ণ জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করা হবে। তখন সব ধরনের চিকিৎসাই চলবে এখানে। রোগীদের সেবায় সব ধরনের নতুন প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ আনার বিষয়ে জাপানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে উত্তর সিটি করপোরেশন। হাসপাতালটিকে আধুনিকায়ন করতে ইতোমধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিশ্বের সর্বশেষ আধুনিক যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে হাসপাতালটিকে আরও সমৃদ্ধ করার প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। যা অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। অনুমোদন পেলেই এটি নিয়ে কাজ শুরু করবে উত্তর সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মহাখালী কাঁচাবাজারের ছয়তলা বিশিষ্ট এক লাখ ৮০ হাজার ৫৬০ বর্গফুট আয়তনের ফাঁকা ভবনে এই হাসপাতাল চালু হয় করোনার রোগীর চিকিৎসায়। প্রথমদিকে মার্কেটটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার এবং বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার ল্যাব হিসেবে ব্যবহৃত হয়। করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কিছুদিন পর করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হয়। রাজধানীর মহাখালীতে গড়ে ওঠা ছয় তলা ভবনটি প্রায় ২২ বিঘা জায়গার ওপর তৈরি করা হয়। পুরো হাসপাতালটিতে শুধু করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য এক হাজারের বেশি শয্যা রয়েছে। এই হাসপাতালে আছে আইসিইউ সুবিধাসহ ২১২টি শয্যা। যার ১১২টি আইসিইউ এবং ১০০টি এইচডিইউ বা হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট। বিশেষ সুবিধাসহ আছে ২৫০টি শয্যা। এই শয্যাগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন দেওয়া রয়েছে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সুবিধা আছে ডেডিকেটেড ৪৮৮টি শয্যায়। এই শয্যাগুলোতে সিলিন্ডার এবং অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতলটির জরুরি বিভাগে ৫০টি শয্যা রয়েছে। এর পাশাপাশি ডায়ালাইসিস সুবিধাসহ ৪টি শয্যা রয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালটিতে চিকিৎসার কাজ পরিচালনা করার জন্য চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফসহ প্রায় দুই হাজার কর্মী রয়েছে। এই হাসপাতালে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর প্রায় ১৫০ জন চিকিৎসক ও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ কর্মীরা সহযোগিতা করছে। উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, জাপান সরকার এই হাসপাতালটি উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করতে উত্তর সিটি করপোরেশনকে প্রস্তুাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম হাসপাতালটিকে আধুনিক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনিই এই হাসপাতালটি আধুনিক করার জন্য প্রকল্প প্রস্তুত করতে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনায় একটি প্রকল্প প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে এই হাসপাতালটি আধুনিকায়ন করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। জাপানি সহায়তায় হাসপাতলটির কাজ হবে বলে ইতোমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। তাই প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে উত্তর সিটি করপোরেশন। সূত্র বলছে, এই হাসপাতালটি নিয়ে উত্তরের মেয়রের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। পুরো ভবন জুড়ে রোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হবে। ছয়তলা ভবনের পুরোটাই এমনভাবে প্রস্তুত করা হবে যাতে যে কোনো রোগীর চিকিৎসা এই হাসপাতালে হতে পারে। একটি প্রাইভেট হাসপাতালের চেয়েও যাতে ভালো চিকিৎসা ও সর্বাধুনিক মেশিনারিজ রাখার চিন্তা চলছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবেদুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালটি নিয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি। সরকার যখন যা নির্দেশনা দেবে সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে। এখনো হাসপাতালটিতে করোনা রোগীদের চিকিৎসার সিদ্ধান্ত আছে। পরবর্তীতে কী হবে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। তবে মেয়রের হাসপাতালটি নিয়ে বেশ আশাব্যঞ্জক পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি প্রথমে একটি কাঁচাবাজার হওয়ার কথা ছিল। পরে এটাকে আইসোলেশন সেন্টার বানানো হলো। এরপর করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এটাকে হাসপাতালে রূপান্তর করা হলো। কিন্তু এটাকে জেনারেল হাসপাতাল করাই উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান লক্ষ্য ছিল। এখন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা চলছে। এই প্যান্ডামিক অবস্থার পরিবর্তন হলে হাসপাতালটিকে জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করার চিন্তা আছে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, জাপান সহযোগিতা দিতে চেয়েছে। তবে আমরা এখনো এই বিষয়ে অনেক দূরে আছি। আগে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে। তারপর আমরা হাসপাতালটি আধুনিকায়নে কাজ শুরু করব। তবে এটা নিশ্চিত বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক হাসপাতাল হবে এটি। হাসপাতালটির প্রথম পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন বলেন, হাসপাতালটি হলে অত্র এলাকার মানুষ আর ঢামেক, সোহরাওয়ার্দীতে যাবে না। এতে মানুষের সময় বাঁচবে আর চিকিৎসাও বিকেন্দ্রিকরণ হবে। এই উদ্যোগ আগেই নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোভিড আসায় বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে এই এলাকাটি যেহেতু খুবই ঘনবসতিপূর্ণ তাই অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূল ভবনটি ৬ তলা। এর চেয়ে এটাকে আর বড় করা যাবে না। এর ফাউন্ডেশনই এটুকু। তবে হাসপাতালটির পাশে বহু জায়গা খালি আছে। বিশেষ করে পেছনে আরও একটি স্থাপনা বানানো যাবে। এতে করে হাসপাতালটি আরও বড় হবে। যদি হাসপাতলটির ৬ তলা ভবনে এখনই সংস্কার করে বিভিন্ন বিভাগ তৈরি করা হয়। তবে কমপক্ষে ৮৬০ জন রোগীকে ভর্তি করতে পারবে। আর যদি পেছনে আরও বড় করে তাহলে এটিকে দেশের সরকারি হাসপাতালের মধ্যে অন্যতম বড় হাসপাতালে পরিণত করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে জেনারেল হাসপাতালের তুলনায় রোগী সংখ্যা অনেক বেশি। অনেক রোগী বিভিন্ন রোগে একসঙ্গে আক্রান্ত হন। কিন্তু স্পেশালাইজড হাসপাতালে গিয়ে নির্দিষ্ট একটি রোগের চিকিৎসা পায়। বাকি রোগগুলোর চিকিৎসা পরে করে বা জেনারেল হাসপাতলে সিট পেলে চলে যায়। তাই এই হাসপাতালটি যদি জেনারেল হাসপাতালে পরিণত হয় তবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, প্রতি হাসপাতালেই আউটডোরে হাজার হাজার রোগী আসে। এই হাসপাতালটি হলেও এখানে রোগী আসবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থা কী হবে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এসব বিষয় এক্সপার্ট দিয়ে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে। তাহলে হয়তো বিবিধ সমস্যায় পড়বে না আগত রোগীরা। এই মুহূর্তে হাসপাতালটিতে কোভিড রোগী ভর্তি আছেন। সাধারণ সিট আছে ৫৫৪টি, যার সবগুলোই খালি। আইসিইউ আছে যার ২১২টি যার দুটিতে রোগী ভর্তি আছেন। বাকি সব খালি পড়ে আছে। এইচডিইউ আছে ২৮৮টি যার ২৬৬টি খালি পড়ে আছে। ভর্তি আছেন ২২ জন। সব মিলিয়ে হাসপাতালে রোগী আছেন ২৪ জন।