৮ মাসে ৮৭৭ নরমাল ডেলিভারি, খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দৃষ্টান্ত স্থাপন

প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭:১৯

মোঃ নুরনবী ইসলাম, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

এ বছরের ৮ মাসে ৮৭৭ জন গর্ভবর্তী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ মিলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে ২ সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৮৭৭ টি নরমাল ডেলিভারি করোনা হয়েছে। গত ২০২১ সালে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারী হয়েছে ১ হাজার ৩৮০ টি। হাসপাতালে এসে নরমাল ডেলিভারি করানোর সংখ্যা দিন দিন এভাবেই বাড়ছেই। অন্যদিকে প্রসব পূর্ববর্তী এএনসি সেবা নিয়েছে ৪ হাজার ৩১১ জন এবং প্রসব পরবর্তী পিএনসি সেবা নিয়েছে ১৫১১ জন। যার ফলে গত ৩ বছর ধরে স্বাস্থ্য সেবায় বিভাগের ২য় ও ৩য় ও জেলার প্রথম হয়েছিল খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এছাড়াও বেষ্ট ফিডিং কর্ণার, ওআরটি কর্ণার, অটিজম কর্ণার, এএনসি ও পিএনসি এবং কেএমসি কর্ণার চালুর মাধ্যমে হাসপাতালটিকে শিশুবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের উদ্যোগ সফলতা লাভ করায় এটি রংপুর বিভাগে মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতি মায়েদের রক্ষা এবং নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফগণ টিম ওয়ার্ক শুরু করেন। নরমাল ডেরিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে প্রসূতিদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন। এজন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক, চেয়ারম্যান-মেম্বার, ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সিলিং প্রদান করেন। এছাড়াও হটলাইনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ,বিনামূল্যে ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারতে প্রসূতিদের আগ্রহী করা হচ্ছে।   

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারী হওয়া ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নুরনাহার, নেউলা গ্রামের শেফালী খাতুন, গোয়ালডিহি গ্রামের রেজিনা খাতুনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের নরমাল ডেলিভারির শুরুতে ভয় লাগলেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠ কর্মী ও চিকিৎসকদের সাহসে হাসপাতালে এসে নিরাপদে স্বাভাবিক প্রসবে হয়েছে। এতে তারা একদিকে যেমন খরচ বাঁচলো অন্যদিকে প্রসবকারী মা সুস্থ থাকল। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করায় তারা অনেক খুশি।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.শামসুদ্দোহা মুকুল জানান, মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে এবং হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি নিরাপদ করতে দক্ষ মিডওয়াইফরা আছে যার ফলে নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে এবং দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে পাশাপাশি কোনো প্রকার অর্থও ব্যয় হয় না। পুরো উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের সরাসরি ও মোবাইল ফোনে খোঁজ-খবর নেওয়া হয় এবং প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী চিকিৎসা ও পরমার্শ প্রদান করা হয়। যার ফলে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে। তিনি আরো জানান, নরমাল ডেলিভারি হওয়ার পর সমাজ সেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় জন্ম নেয়া শিশুর জন্য জামা-কাপড়, মশারি ও ওই শিশুর মাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকলের সহযোগিতা পেলে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব সংখ্যা আরো কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।