একবছরে পাল্টে গেল পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র

প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৩, ১৪:০৫

হুমায়ুন কবির, পাকুন্দিয়া ( কিশোরগঞ্জ)  প্রতিনিধি
ছবি-যাযাদি

সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনা অনিয়ম দুর্নীতি ও চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ব্যতিক্রম ছিল না। দ্রুত পাল্টে গেছে পাকুন্দিয়া হাসপাতালের সেই চিত্র। এক সময়ের ময়লা আর্বজনা ও দুর্গন্ধে ভরা যে হাসপাতালে ঢোকা ছিল দায়। এখন সেই হাসপাতাল ঝকঝকে তকতকে র্দুগন্ধমুক্ত।

আগে যেখানে প্রায়ই চিকিৎসকরা করতেন প্রাইভেট প্যাকটিস। এখন সকাল ৮টা বাজলেই তাদের ঢুকতে হচ্ছে হাসপাতালে। কেউ যাচ্ছেন রাউন্ডে, কেউবা রোগী দেখছেন আউটডোরে বা সরকারি চেম্বারে। এক নাগাড়ে থাকতে হচ্ছে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। ক’দিন আগেও ঔষধ কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ, ক্লিনিক, প্যাথলজি ওষুধের দোকানের দালালদের গায়ে ধাক্কা না খেয়ে ঢোকা যেত না সরকারি এ হাসপাতালে। এখন প্রায় দালাল মুক্ত এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। কিন্তু রাতারাতি সব অনিয়ম অব্যাস্থাপনা দূর করে দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার কারণ কি? সকলের প্রশ্ন কোন যাদুতে এমনটি হলো?

তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে এই উপজেলায় ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডাঃ নূর এ আলম খান। তিনি যোগদানের পর থেকে চিকিৎসা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তিনি যোগদানের পর এখন দ্বিগুণ মানুষ সেবা নিচ্ছেন। 

যদিও বর্তমানে এ উপজেলার ১৮০.৫২ বর্গকিলোমিটারের জনসংখ্যা আড়াই লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ৩১ জন ডাক্তারের মধ্যে আছে মাত্র ১৮ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট ১০ জনের মধ্যে আছে মাত্র ৩ জন। 

এই স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ৯শ' থেকে ১১শ' রোগী প্রতিদিন সেবা নিয়ে থাকেন। কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই প্রতিদিন জরুরি বিভাগের ১০০-১২০ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্ত চাপের রোগীকে বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হয়। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
 
আর ডাঃ নূর এ আলম খান যোগদানের পর পরই পাল্টে গেছে গোটা হাসপাতালের চিত্র। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সকল বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিজ-নিজ দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নূর এ আলম খান যোগদানের পর তাঁর একান্ত চেষ্টায় চালু করেছেন অপারেশন থিয়েটার, নতুন অ্যাম্বুলেন্স, এছাড়াও নিরাপত্তা ও অপরাধ রোধে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সর্বমোট ১৪ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আধুনিক দুটি জেনারেটর, নতুন ডেল্টা চেয়ার, ইনডোর সেন্টাল অক্সিজেন, রাতে হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য আলোর ব্যাবস্তা, এক্সরে মেশিন সাথে যুক্ত হয়েছে সাথে আধুনিক কেবিন একটি, এসি কেবিন একটি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত একটি এসি কেবিন চালু করেছেন।

এছাড়াও চালু করেন শিশুদের জন্য আইএমসি কর্ণার, এনসিডি কর্ণার, মায়েদের জন্য এএনসি কর্ণার, জরায়ু মুখের ক্যান্সার পরিক্ষার জন্য চালু হয়েছে ভায়া কর্ণার। স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রসাশন এবং জনপ্রতিনিধিদের অকুন্ঠ সহযোগিতায় তিনি সরকারি এ হাসপাতালে শতভাগ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য জিরো ট্রলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছেন। সে মোতাবেক দায়িত্ব অবহেলাকারীর বিরুদের কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। যে কারনে হাসপাতালের পরিস্কার পরিচ্ছন নিশ্চিত হয়েছে। চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারীরা সময় মত হাসপাতালে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ দিয়ে হাসপাতাল থেকে দালাল মুক্ত করার কার্যক্রম চলছে। যে কারনে গোটা হাসপাতালে চিত্রই এখন পাল্টে গেছে।

গত বছরের ৩০ জুলাই ( শনিবার)  সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতাল কমপ্লেক্সের ওটিতে উপজেলার সৈয়দগাঁও গ্রামের কাশেম মিয়ার স্ত্রী মিম (২০) নামের এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শুরু হয় সিজারিয়ান অপারেশন, এ পর্যন্ত ৪৮ টি সফল সিজারিয়ান অপারেশন হয়েছে। শুধু ফেব্রুয়ারী মাসের ২৭ দিনে ১০২ টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। 

সম্প্রতি বিনামূল্যে সিজারিয়ান অপারেশনে নবজাতক সন্তানের পিতা মোঃ কাশেম মিয়া বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সিজার করালে ১৫-২০ হাজার টাকা ব্যয় হতো। যা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এ সুযোগ পেয়ে তারা খুব খুশি।
বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন রোগীর ঠাসাঠাসি বহির্বিভাগে ৫ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে চিকিৎসকদের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা রোগীদের অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে ডাঃ নূর এ আলম খান বলেন, ভাল কাজ করতে গেলে বাধা আসবেই। তিনি দায়িত্ব নেওয়া আগে সেই বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া নিজের চাওয়া পাওয়া ত্যাগ করলে সব সময় ভাল কাজে সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি সর্বস্তরের পাকুন্দিয়াবাসীর সহযোগিতা নিয়ে এ হাসপাতালটিকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে প্রাথমিক সফলতা অর্জন করেছেন। তার সাথে আবাসিক মেডিকল অফিসার, স্থাস্থ্য বিভাগ ও সর্বস্তরের পাকুন্দিয়াবাসী অকুণ্ঠ সহযোগিতা করছেন।

যাযাদি/ এস