শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এইডসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা 

মোঃ হাসান মোল্লা
  ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৬:০৬

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে এইডস-ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশ। এসব রোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে অবাধ চলাফেরা করায় এইডস ছড়িয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শুধু কক্সবাজার নয়, সারা দেশের মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এইডসে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁদের মতে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে এর চেয়েও বেশি এইডস রোগী আছে।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব শূন্য দশমিক আট শতাংশ আর বাংলাদেশেীদের মধ্যে এ হার শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশ। এর বাইরে এইচআইভি পজিটিভ হওয়ার পরেও তা লুকিয়া রাখার প্রবণতার কারণে দেশে এইচআইভি সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ইউএনএইডস’র তথ্যমতে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এইডস রোগের প্রাদুর্ভাব ০.০১ শতাংশের কম। সেই হিসেবে দেশে এইডস আক্রান্ত রোগীর আনুমানিক সংখ্যা ১৪ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম বলছে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৬১ জন এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এর মধ্যে মারা গেছে ১ হাজার ৫৮৮ জন। সংক্রামিত ব্যক্তিদের তুলনায় শনাক্তকরণের হার ৬৩ শতাংশ। সে হিসেবে এখনও ৩৭ শতাংশ রোগী শণাক্তকরণের বাইরে রয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যনেজার (ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়) মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, "রোহিঙ্গারা আমাদের মধ্যে ঝুঁকির অন্যতম কারণ। তাদের মধ্যে এইচআইভির প্রাদুর্ভাব ০.৮ শতাংশ; অন্যদিকে, বাংলাদেশিদের মধ্যে ০.০১ শতাংশের কম।"

রোহিঙ্গার পাশাপাশি আরও একটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন মোঃ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, "সংক্রমণ এখন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যে চলে আসছে। আমরা জানি, দৌলদিয়ায় যৌনপল্লীতে কয়েক হাজার মানুষ আছে, চাংখারপুলে শিরায় মাদকসেবী বেশ কয়েকজন আছে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো ১৭ কোটি। তাদের মধ্য থেকে এইডস রোগী খুঁজে বের করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।"

প্রতিবছর দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন করে এইচআইভি আক্রান্তের তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল কর্মসূচি। দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যফেরত অভিবাসী ও কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা বলছেন, কক্সবাজার এইডসের জন্য এখন চরম বিপজ্জনক এলাকা। রোহিঙ্গারা যে হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে তুলনায় শনাক্ত করা হচ্ছে খুবই নগন্য। প্রকৃত অর্থে আক্রান্তের সংখ্যা কত তা এ মূহুর্তে বলা মুশকিল। এইচআইভি এইডসের জীবাণু বহনকারীর সংখ্যা যে আরও অনেক বেশি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

খোঁজ নিযে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউসে ১০/১২ হাজার রোহিঙ্গা যাতায়াত রয়েছে। রোহিঙ্গা তরুণীরা দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। অধিকাংশ রোহিঙ্গা তরুণী অশিক্ষিত হওয়ায় তারা অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হচ্ছেন। ফলে কক্সবাজার ছাড়াও সারাদেশে এইডস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষেরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাস্থ্য সচেতন না হলে এইচআইভি এইডস মহামারী রূপ নিতে পারে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে