প্রসূতি রোগীদের আস্থা বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবায়
প্রকাশ | ০২ মে ২০২৩, ১৪:০২
বাঁশখালীতে প্রসূতি রোগীদের আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পঞ্চাশ শয্যার সরকারি এ হাসপাতালটি এখন অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সেবা দিচ্ছে রোগীদের। প্রসূতিদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ উপহার সামগ্রী ও বিনামূল্য ঔষধ সামগ্রী।
দীর্ঘদিন পর এখানেই হচ্ছে সিজারিয়ান অপারেশন। এছাড়াও স্বাভাবিক ডেলিভারি তো হচ্ছেই। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগের রোগীদের অনেক ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যুক্ত হয়েছে অপারেশন থিয়েটার ও উন্নত প্রযুক্তির নানা সেবা। যা আগে উপজেলার কোন হাসপাতালে ছিল না।
জানা যায়, ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যার বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ২০২২ সালের আগষ্টে চালু হয় অপারেশন থিয়েটার। এতে মাত্র এক বছরেই হাজারেরও অধিক নরমাল ডেলিভারী, সিজারিয়ানসহ প্রসূতি মায়ের সন্তান প্রসব করাতে সক্ষম হয়েছে হাসপাতালটি। হাসপাতালে প্রসূতিদের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা ওষুধের প্যাকেটও ও নানা সামগ্রী।
সিজারিয়ন ও স্বাভাবিক প্রসূতিরা হাসপাতালে ভর্তি হতেই সুন্দর প্যাকেটে মোড়ানো উপহারের ন্যায় ওষুধ সামগ্রী তাদের হাতে তুলে দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। যে প্যাকেটে একজন প্রসূতির চিকিৎসার যাবতীয় ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী রয়েছে। যাতে কোনো প্রসূতিকেই ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে না হয়। বর্তমানে হাসপাতালটিতে রয়েছে গাইনি ও সার্জারির জন্য পৃথক দুটি অপারেশন থিয়েটার ও আধুনিক সুসজ্জিত চারটি ডেলিভারি অবজারভেশন কক্ষ ও সেইফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন ইউনিট।
শুধু প্রসূতি মায়ের চিকিৎসাই নয়, বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার রোগীরা এখানে সেবা গ্রহণ করে থাকেন প্রতিদিন। আউটডোরেও রোগীর কমতি নেই। গড়ে ৮০০-৯০০ রোগী আউটডোরে চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণ করছেন নিয়মিত।
রোগ নির্ণয়ে অধিকাংশ রক্ত পরীক্ষা, ২৪ ঘণ্টা ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ডিজিটাল এক্স-রে, জিন এক্সপার্ট মেশিনে যক্ষ্মা নির্ণয়সহ মাইনর অপারেশন ও বিনামূল্য চিকিৎসা। এছাড়াও এইচডি ও নাইট ভিশিন ৩২টি সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে হাসপাতালের নিরাপত্তা।
কালীপুরের বাসিন্দা জমির উদ্দীন বলেন, ‘গত ৬দিন ধরে হাসপাতালে আছি। গত পরশু আমার স্ত্রী এখানে ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। গত ৬দিনে আমার শুধুমাত্র ২১’শ টাকা খরচ হয়েছে। তাও ব্যাক্তিগতভাবে। বলতে গেলে এখন এ হাসপাতালটি প্রসূতি রোগীদের জন্য নিরাপদ ও আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠেছে। আমরা এখন কোন রকম ভয়-ভীতি ছাড়া চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারি।’
শেখেরখীল ইউনিয়নের বাসিন্দা হাসিনা বেগম বলেন, ‘গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে বাঁশখালী সরকারী হাসপাতালে একসাথে জমজ সন্তান দিই। যখন আমার স্বামী ওখানে নিয়ে যাচ্ছিল তখন ভয়ে ছিলাম। পাড়া প্রতিবেশীরাও ওখান যেতে বারণ করছিল। তবে হাসপাতালে গিয়ে ধারণাটাই পাল্টে যায়। ওখানে এত ভালো চিকিৎসা সেবা পেয়েছি তা বলা বাহুল্য। এখনো আল্লাহর রহমতে ডাক্তারদের প্রচেষ্টায় আমার দুই সন্তান সুস্থ রয়েছে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. দিদারুল হক সাকিব বলেন, আমরা যত সম্ভব চেষ্টা করি রোগীদের সব চেয়ে ভালো স্বাস্থ্য সেবাটা দিতে। আগে হাসপাতালে তেমন কোন উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। বর্তমানে হাসপাতালে মাননীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অপারেশন থিয়েটারসহ উন্নত মানের নানা চিকিৎসাসেবা চালু হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে দিন দিন রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে প্রসূতি রোগী।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার জানান, ‘হাসপাতালে যোগদানের পরে প্রসূতি রোগীদের সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডাক্তার ও নার্সদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করি। পরর্বতী এ টিমের মাধ্যমে গত তিন বছরে দুই হাজারেও অধিক নরমাল ডেলিভারীসহ ১৮ সিজারিয়ান ডেলিভারী করা হয়। তাছাড়া করোনাকালীন ভ্যাকসিন, চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এছাড়া অপারেশন থিয়েটারসহ নানা চিকিৎসাসেবা চালু করা হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মাননীয় সিভিল সার্জন মহোদয়ও খুবই আন্তরিক। যখন সে সময়ে হাসপাতালের জন্য যা চাইছি তখন তিনি সাথে সাথে তা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আশা করি সবার সহযোগিতায় আগামীতেও বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
যাযাদি/ এস