​আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আবার আগুন, কী ঘটেছিল?

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:৫৪

যাযাদি ডেস্ক

 

 

রুশ গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের রুশ নির্মিত যেভেদযা অংশে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। মহাকাশ কেন্দ্রের ক্রুরা এই অংশে বসবাস করেন।

 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রটি পুরোনো হয়ে পড়ায় গত কয়েক বছরে সেখানে এরকম বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে। একজন রুশ কর্মকর্তা সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, এটির যন্ত্রপাতি এখন সেকেলে হয়ে পড়েছে এবং ঠিকমত কাজ করছে না। গত কয়েক বছরে এটি থেকে বাতাস বেরিয়ে যাওয়া, ইঞ্জিন বিকল হওয়া এবং এর কাঠামোতে ফাটল ধরার মতো ঘটনা ঘটেছে।

 

রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস অবশ্য পরে জানিয়েছে, মহাকাশ কেন্দ্রের সবকিছু পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।

 

সংস্থাটি জানিয়েছে, মহাকাশ কেন্দ্রের ব্যাটারিগুলো যখন চার্জ করা হচ্ছিল, তখন সেখানে ধোঁয়া দেখা যায়। তবে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পর ক্রুরা এখন তাদের 'নিয়মিত প্রশিক্ষণে' ফিরে গেছে।

 

বলা হচ্ছে, পোড়া প্লাস্টিকের গন্ধ শুরুতে মহাকাশ কেন্দ্রের রুশ নির্মিত অংশ থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল, পরে যুক্তরাষ্ট্রের অংশেও এই গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা জানিয়েছে আজ বৃহস্পতিবার পরের দিকে যে 'স্পেস ওয়াক' বা মহাকাশে বিচরণের কর্মসূচি ছিল, তা অপরিবর্তিত আছে।

 

সম্প্রতি যে 'নাউকা সায়েন্স মডিউলটি' আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছে দেয়া হয়েছে, দু'জন রুশ নভোচারী সেটি নিয়ে কাজ করবেন বলে কথা রয়েছে।

 

গত ১লা সেপ্টেম্বর একজন রুশ কর্মকর্তা ভ্লাদিমির সলোভিয়ভ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সেকেলে যন্ত্রপাতির কারণে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এমনভাবে বিকল হয়ে যেতে পারে যা আর ঠিক করা যাবে না।

 

মহাকাশ কেন্দ্রটির রুশ নির্মিত অংশের ইন-ফ্লাইট সিস্টেমের অন্তত ৮০ শতাংশ যন্ত্রপাতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছিলেন এনার্জিয়া নামের একটি মহাকাশ কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী মিস্টার সলোভিয়ভ। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের রুশ মডিউলগুলো তৈরি করেছে যেসব প্রতিষ্ঠান, তাদের মধ্যে এনার্জিয়া হচ্ছে নেতৃস্থানীয়।

 

তিনি আরও বলেছিলেন, রাশিয়ার যারিয়া কার্গো অংশে ছোটখাট ফাটল দেখা গেছে এবং সময়ের সঙ্গে এটির অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন তৈরি করা হয় ১৯৯৮ সালে। এটি ছিল রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের একটি যৌথ প্রকল্প। শুরুতে ১৫ বছর মেয়াদের জন্য এটি ডিজাইন করা হয়েছিল।

 

গত এপ্রিলে রাশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে জানিয়েছিলেন, মহাকাশ স্টেশনের পুরোনো লোহালক্কড়ের কারণে এমন ধরণের বিপর্যয় ঘটতে পারে, যার পরিণাম হয়তো আর উল্টানো যাবে না। তিনি বলেছিলেন, "আমরা এটা ঘটতে দিতে পারি না।"

 

রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস গত বছর বলেছিল, এসব কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনকে ২০৩০ সালের পর আর চালানো যাবে না।

 

গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আরেকটি দুর্ঘটনা হয়েছিল। তখন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাউকা মডিউলের জেট কোন আগাম সতর্কতা ছাড়াই চালু হয়ে যায়, এর ফলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন নাড়া খেয়েছিল।

 

রাশিয়া গত এপ্রিল মাসে জানায়, তারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাবে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ নিজেদের আলাদা মহাকাশ স্টেশন তৈরি করবে। তবে এর কোন কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে এখন সাতজন নভোচারী আছেন। এদের মধ্যে দুজন রাশিয়ার, তিন জন যুক্তরাষ্ট্রের, একজন ফ্রান্সের এবং একজন জাপানের।আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ক্রুরা ধোঁয়া এবং পোড়া প্লাস্টিকের গন্ধ পাওয়ার পর সেখানে স্মোক অ্যালার্ম বেজে উঠেছিল।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

 

যাযাদি/এসআই