পাঁচ লাখ বছর আগেই মানুষ গুহা বেছে নিয়েছিল

প্রকাশ | ২০ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৪

যাযাদি ডেস্ক

প্রায় ৫০ বছর আগে পোল্যান্ডের একটি গুহায় পাওয়া গিয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক কালের পাথরের তৈরি কিছু যন্ত্র। সম্প্রতি জানা গেছে, এসব যন্ত্রের বয়স চার লাখ ৫০ হাজার বছর থেকে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার বছর। অর্থাৎ, এ অঞ্চলে এর আগে যত প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন পাওয়া গেছে, এটি তার সব থেকে পুরোনোগুলোর একটি। 

‘টানেল উইলকি’ নামের ওই গুহাটি বহুদিন ধরেই গবেষকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে। এই গুহায় এক সময় মানুষের আদি প্রজাতিরা থাকত, তা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন গবেষকরা। তবে ঠিক কত বছর আগে এবং কোন প্রজাতি থাকত, তা এতদিন অস্পষ্ট ছিল।

‘সায়েন্স অ্যালার্ট’র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেহেতু পাথরের যন্ত্রগুলোর বয়স জানা গেছে, এখন সহজেই জানা যাবে- কারা এগুলো তৈরি করেছিল। এগুলো গবেষণা করে সে সময়কার মানুষদের বিষয়েও বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে। মধ্য ইউরোপে এই মানুষরা কীভাবে এসেছিল, তা সম্পর্কেও জানা যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাথরের যন্ত্রগুলোর যে বয়স, তাতে বোঝা যাচ্ছে- বিলুপ্ত মানব প্রজাতি হোমো হাইডেলবার্গেনসিস এগুলো তৈরি করেছিল। হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের থেকেই পরবর্তী সময়ে নিয়ান্ডারথাল ও আধুনিক মানুষ এসেছে। নিয়ান্ডারথালরা যদিও আজ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ধারণা করা হয়, আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্সই নিয়ান্ডারথালদের হত্যার মাধ্যমে বিলুপ্ত করে দিয়েছে।

পোল্যান্ডের ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক ম্যালগোরজাটা কোট বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য বিশ্লেষণের একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় দিক। আমরা এখন হোমো হাইডেলবার্গেনসিসের বেঁচে থাকার বিষয়টি পরীক্ষা করতে পারব এবং তারা এই প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছিল, তাও এখন বুঝতে পারব।’

১৯৬০-এর দশকে টানেল উইলকি গুহাটির সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর ২০১৬ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা আবারও সাইটটিতে ফিরে আসেন। 
প্রাথমিকভাবে এখানে ১১ হাজার ৭০০ বছর থেকে ৪০ হাজার বছর পূর্বের নানা উপাদান পাওয়া যায়। কিন্তু ওয়ারশ ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউদিও বার্তো দেখতে পান, সাইট থেকে উদ্ধার করা প্রাণীর হাড়গুলো ৪০ হাজার বছরের চেয়েও পুরনো।

এরপরই ২০১৮ সালে কোট ও তার দল গুহাটিতে গবেষণা শুরু করে। তারা বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা উপাদানের বিভিন্ন স্তরগুলো যত্ন সহকারে পরীক্ষা করে এবং বিশ্লেষণের জন্য আরও হাড়ের উপাদান সংগ্রহ করেন। তখন তারা দেখতে পান, ওপরের স্তরগুলোতে প্রকৃতপক্ষে প্রাণীদের হাড় রয়েছে, যারা শেষ প্লাইস্টোসিন ও হোলোসিনে বাস করত। কিন্তু নিচের স্তরটি স্পষ্টভাবে পুরনো ছিল। এতে অর্ধ মিলিয়ন বছর আগে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি প্রজাতির হাড় রয়েছে। যেমন, ইউরোপীয় জাগুয়ার, প্যানথেরা গোম্বাজোজেনসিস; মোসবাচ নেকড়ে (আধুনিক ধূসর নেকড়ের পূর্বপুরুষ) এবং ডেনিঞ্জারের ভালুক। এছাড়া পাওয়া যায় পাথরের তৈরি ছুরি।

একটি গুহায় সেই সময়ের নিদর্শন খুঁজে পাওয়া, কোটের মতে খুবই অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, ‘আমরা অবাক হয়েছিলাম, অর্ধ মিলিয়ন (পাঁচ লাখ) বছর আগেই মানুষ থাকার জন্য গুহাকে বেছে নিয়েছিল। কারণ, আশ্রয়ের জন্য গুহা সেরা জায়গা ছিল না। আর্দ্রতা ও নিম্ন তাপমাত্রার কারণে সেখানে থাকা কঠিন হওয়ার কথা। তবে এটিও ঠিক যে, গুহা হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক আশ্রয়। এটি একটি বদ্ধ স্থান, যা নিরাপত্তার অনুভূতি দেয়। আমরা এমন চিহ্ন খুঁজে পেয়েছি, যাতে ধারণা করা যায়, ওই সময়ই মানুষ আগুনের ব্যবহার করেছিল। আর এর মাধ্যমেই তারা এই গুহার আর্দ্রতা ও অন্ধকার দূর করত।’

যাযাদি/ এস