ট্রাম্পের নতুন চমক: অ্যাপেলকে টক্কর দিতে আনছে ‘ট্রাম্প মোবাইল’

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২৫, ১৮:৩৪

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: ট্রাম্প মোবাইল

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প অর্গানাইজেশন সম্প্রতি 'ট্রাম্প মোবাইল' নামে একটি নতুন মোবাইল পরিষেবা এবং ৪৯৯ ডলার মূল্যের একটি স্মার্টফোন বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে। রক্ষণশীল ভোক্তাদের জন্য মূলধারার টেলিকম পরিষেবাগুলোর বিকল্প তৈরি করাই এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।

ট্রাম্প অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, নতুন এই মোবাইল পরিষেবা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পরিচালিত কল সেন্টার ব্যবহার করবে এবং তাদের স্মার্টফোনটি দেশেই তৈরি হবে। রিয়েল এস্টেট, বিলাসবহুল হোটেল ও গলফ রিসোর্টের মতো ঐতিহ্যবাহী ব্যবসার বাইরে ট্রাম্প পরিবার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডিজিটাল মিডিয়া ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো নতুন উদ্যোগেও প্রবেশ করেছে।

প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন, তাহলে তিনি তাঁর ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ সন্তানদের কাছে হস্তান্তর করবেন। তবে, এটি সত্ত্বেও স্বার্থসংঘাত নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

বার্কলেসের মার্কিন মিডিয়া, কেব্‌ল ও টেলিকম গবেষণা বিভাগ এই উদ্যোগকে 'নজিরবিহীন' বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, একজন বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম বাণিজ্যিক ও নিয়ন্ত্রিত কোনো পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হওয়া আগে কখনো দেখা যায়নি। এখনো পর্যন্ত কোনো টেলিকম কোম্পানি ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সঙ্গে এমভিএনও (মোবাইল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর) চুক্তির ঘোষণা দেয়নি, ফলে 'ট্রাম্প মোবাইল' কোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

টেলিকম খাতটি অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় নীতিনির্ধারকদের প্রভাব এখানে অনেক বেশি। বর্তমান ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন (FCC) চেয়ারম্যান ব্রেন্ডন কার প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ভেরিজন এবং এটিঅ্যান্ডটির মতো বড় টেলিকম কোম্পানিগুলোর ওপর রাজনৈতিক চাপ ও নজরদারি বাড়তে পারে, বিশেষ করে যখন তারা নতুন চুক্তি বা নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় থাকবে। এসব কোম্পানির পূর্ববর্তী চুক্তিতে যদি 'মোস্ট ফেভারড নেশন' (এমএফএন) শর্ত থাকে, তবে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনকে দেওয়া বিশেষ সুবিধা অন্য কোম্পানিগুলোও দাবি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ডি এ ডেভিডসন অ্যান্ড কোম্পানির প্রযুক্তি গবেষণাপ্রধান গিল লুরিয়া বলেন, এই নতুন ওয়্যারলেস পরিষেবা ও হ্যান্ডসেট ট্রাম্প পরিবারের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়িক সম্প্রসারণের আরেকটি চেষ্টা। ট্রুথ সোশ্যাল, ডিজিটাল ও ক্রিপ্টো উদ্যোগের ক্ষেত্রেও একই কৌশল দেখা গেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক লরেন্স লেসিগের মতে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর পদকে পারিবারিক সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।

পিপি ফোরসাইটের টিএমটি বিশ্লেষক পাওলো পেস্কাতোরে মন্তব্য করেছেন, এই উদ্যোগে অনেক প্রশ্নের উদয় হয়েছে, বিশেষ করে টেলিকম কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক কতটা গভীর, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে, জ্যাকস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্রায়ান মুলবারি মনে করেন, এই ফোন অ্যাপলের বিরুদ্ধে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ এটি অনেক সস্তা। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের নাম যুক্ত থাকায় এটি বাড়তি মনোযোগ পাবে, যা বাজার প্রতিযোগিতার জন্য ভালো এবং শেষ পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের উপকারে আসবে।

সূত্র: রয়টার্স