চ্যাটজিপিটিতে যে পাঁচ তথ্য দেওয়া উচিৎ নয়!

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০২৫, ১২:৫৩

অনলাইন ডেস্ক
চ্যাটজিপিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছবি: সংগৃহীত

অফিসের কাজ, পড়াশোনা, ফেসবুকে ক্যাপশন ঠিক করা থেকে শুরু করে আমাদের মন খারাপের সঙ্গী এখন চ্যাটজিপিটি।

চ্যাটজিপিটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই বন্ধু এখন কেবল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নয়, গবেষণা, লেখালেখি ও প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত গ্রহণেও সাহায্য করছে। তবে এ ধরনের প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি কিছু ঝুঁকিও রয়েছ; বিশেষ করে যদি এসব ব্যবহার করা হয় অসচেতনভাবে। 

প্রযুক্তির এই যুগে তথ্যই বড় সম্পদ, তাই কোথায়, কখন, কার সঙ্গে কী তথ্য ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন, তা বোঝা জরুরি।

জেনে  নেয়া যাক যে পাঁচটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কখনোই চ্যাটজিপিটি বা অন্য কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবটের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়।

১. ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ তথ্য (পার্সোনালি আইডেন্টিফাইঅ্যাবল ইনফরম্যাশন বা পিআইআই)

ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ তথ্য বলতে বোঝায় এমন যেকোনো তথ্য, যা কারও পরিচয় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে বা বর্ণনা করে। যেমন ব্যবহারকারীর পূর্ণ নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও ই–মেইল। চ্যাটজিপিটি ইচ্ছাকৃতভাবে এসব তথ্য সংরক্ষণ করে না বটে, তবে সাইবার আক্রমণ বা তথ্য ফাঁসের মতো ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়। হ্যাকাররা এসব তথ্য ব্যবহার করে পরিচয় চুরি, ব্যাংক জালিয়াতির মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই নিজের পরিচয় ও আর্থিক নিরাপত্তা রক্ষা করতে এসব তথ্য এআইকে না দেওয়াই শ্রেয়।

২. আর্থিক ও ব্যাংকিং তথ্য

ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি, মোবাইল ব্যাংকিং পিন বা পেমেন্ট গেটওয়ে সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা বিপজ্জনক। আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো ভয়াবহ ফল ডেকে আনতে পারে।

ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটি, মোবাইল ব্যাংকিং পিন চ্যাটজিপিটির মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করাটা  বিপদদজ্জক।

৩. পাসওয়ার্ড ও লগইন তথ্য

এআইকে এ ধরনের তথ্য দিলে তা হ্যাক বা অবৈধ প্রবেশের জন্য সুযোগ করে দেয়। তাই প্রতিটি অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখা বাঞ্ছনীয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এসব তথ্য দিলে নিজের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।

৪. ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য

এআইয়ের চ্যাটবট ভাষা জানা প্রোগ্রামিং মডেল ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি মানুষের মতো বিবেক দিয়ে কিছু চিন্তা করে না বা প্রেক্ষাপট বোঝে না, ফলে গোপন বা সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য এআইয়ে ব্যবহার করলে তা অনিচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস হয়ে যেতেই পারে। চ্যাটবটে এ সব তথ্য দিলে পারিবারিক বা পেশাগত সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে। এমনকি তৈরি হতে পারে আইনি জটিলতাও।

৫. স্বত্বাধিকার বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি)

নিজের উদ্ভাবনী ধারণা, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, কোডিং বা ডিজাইন, আর্টওয়ার্ক এসব নিঃসন্দেহেই নিজের মেধাসম্পদ, যা আপনি লালন করেন। চ্যাটজিপিটিতে এসব তথ্য দিলে তা সংরক্ষিত ডেটা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, এমনকি অন্যের কাছেও পৌঁছে যেতে পারে। এতে আইনি সমস্যা, মেধাসম্পদের চুরি অথবা আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত কোনো ধরনের উদ্ভাবনী ধারণা বা পরিকল্পনা অথবা স্বত্বাধিকারযুক্ত কনটেন্ট  কখনোই এআইকে দেয়া ঠিক না।

তথ্যের সুরক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ

আজকের প্রযুক্তির জগতে তথ্য ফাঁস একটি বড় সমস্যা। সাইবার অপরাধীরা নিরাপত্তার দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে নিয়মিত এআইভিত্তিক প্ল্যাটফর্মে আক্রমণ চালায়।

বিশেষভাবে লক্ষ করা গেছে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে এক লাখেরও বেশি চ্যাটজিপিটি অ্যাকাউন্টের তথ্য উপাত্ত হ্যাক হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে বিক্রি হয়েছে ডার্ক ওয়েবে।

এই ঘটনাই বলে দেয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যতই কার্যকর ও ক্ষমতাশালী হোক না কেন, সঠিক, সচেতন ও দায়িত্বশীল ব্যবহার ছাড়া সবার নিরাপত্তা হুমকি হতে পারে।

সূত্র: অ্যাজাইলব্লু