মনের ভাবনা ভাষায় লিখে দেবে এআই !

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৫, ১৯:০৩

যাযাদি ডেস্ক
ছবি সংগৃহীত

মাথায় পরে নিতে হবে একটা হেলমেট। তার পরেই কি মন পড়তে পারবে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই)? মন পড়া কি এতই সহজ? মনের সব গোপন কুঠুরিতে জমা ভাবনা বুঝতে না পারলেও, মাথায় সেই মুহূর্তে কী ভাবনা আসছে, তা ছোট ছোট বাক্যে বা শব্দে বুঝিয়ে দিতে পারবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। 

এমনটাই দাবি করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এমন এক ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারের দাবি করেছেন তারা, যেটি মাথায় পরলেই নাকি মগজে কী চলছে, তা বোঝা যাবে।

ইলন মাস্কের ‘ব্রেন চিপ’-এ থেকে এই যন্ত্রটি নাকি ঢের গুণে ভাল, তেমনটাই দাবি সিডনির গবেষকদের। কারণ মাস্কের যন্ত্র খুলি ফুটো করে মস্তিষ্কে ঢোকাতে হয়, আর এই যন্ত্রটি মাথায় পরে নিলেই কাজ হয়। 

যন্ত্রটি ১২৮টি ইলেক্ট্রোড বসানো একটি টুপি। এর নাম ‘ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাম’ (ইইজি)। এই টুপিটির মধ্যে থাকবে সেন্সর ও রেকর্ড করার যন্ত্র। মস্তিষ্কে স্নায়ুর মধ্যে যে ভাবনাচিন্তার তরঙ্গ চলে, সেটিই রেকর্ড করবে যন্ত্রটি। তারপর ঠিক কম্পিউটার সফট্‌অয়্যারের মতো তা ‘ডিকোড’ করবে। 

অর্থাৎ, তরঙ্গটি বিশ্লেষণ করে দেখবে, সেই মুহূর্তে ওই ব্যক্তি ঠিক কী কী ভাবছেন বা বলতে চাইছেন, তার ভাবনার অর্থ বার করে তা ভাষায় লেখা হবে। অর্থাৎ, ভাবনাচিন্তার তরঙ্গকে শব্দে রূপান্তরিত করা হবে। 

এই লেখালিখির কাজটি করবে আরও একটি যন্ত্র, যার নাম ‘ডিঅয়েভ’। এই যন্ত্রটিও এআই টুল, যার কাজ ভাবনার অতলে গিয়ে অর্থ খুঁজে বার করা। এখানেই শেষ নয়। ভাবনা পড়া, তার অর্থ বার করা ও শেষে গিয়ে ভাষায় লেখা— এই তিনটি কাজ পরিচালনার জন্য যন্ত্রটিতে ‘ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ থাকবে। যে ভাষায় লেখা হবে, সেখানে যাতে ব্যকরণগত ত্রুটি না থাকে, তার জন্যই ওই ব্যবস্থা।

সিডনি ইউনিভার্সিটির গবেষক চার্লস ঝৌ যন্ত্রটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। হেলমেটটি পরিয়ে কে কী ভাবছেন, তা বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনও অবধি ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে সাফল্যও এসেছে বলে দাবি। 

গবেষক ঝৌ জানিয়েছেন, কারও যদি খুব খিদে পায় এবং সেটি তিনি বলতে না পারেন, তা হলে সেই মুহূর্তে তাঁর মস্তিষ্ক যে সঙ্কেত দেবে সেটিই পড়ার চেষ্টা করবে যন্ত্রটি। কোনও জটিল চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এখনও তার নেই, তবে ছোটখাটো ভাবনা, প্রতিক্রিয়ার অর্থ বার করে দিতে পারবে।

সামনের জন কী ভাবছেন, তা বুঝতে এই যন্ত্রের প্রয়োগ হবে না। কেবল মন পড়ার জন্যই এটি বানানো হয়েছে, তা-ও নয়। এটির ব্যবহার হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা কাজে। স্ট্রোকে পঙ্গু হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছেন এমন রোগী, অটিস্টিক শিশু যে মনের ভাব ব্যক্ত করতে পারছে না, তার চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হবে যন্ত্রটি। আবার যিনি জন্ম থেকে কথা বলতে পারেন না অথবা কোনও অসুখ বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছেন, তার স্পিচ থেরাপির জন্য যন্ত্রটি প্রয়োগ করা হতে পারে। জিনগত জটিল রোগ, অটোইমিউন রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও যন্ত্রটি ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। তবে এই গবেষণা চলছে। যন্ত্রটি কতটা নির্ভুল ভাবে কাজ করতে পারে, তা আরও বহু জনের উপর পরীক্ষার পরেই বোঝা যাবে।
সূত্র: আনন্দবাজার