এআইয়ের জয়, কর্মীদের কান্না—মাইক্রোসফটে ছাঁটাই ৯ হাজার
প্রকাশ | ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪৮

প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রযাত্রা অনেক সময় আনে আশার আলো, আবার কখনো তা ডেকে আনে জীবনের কঠিন বাস্তবতা।
তেমনই এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন মাইক্রোসফটের প্রায় ৯ হাজার কর্মী।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের পথে আরও গভীরভাবে এগিয়ে যেতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্মীবলের প্রায় ৪ শতাংশ ছাঁটাই করার।
মাইক্রোসফট বলছে, সংগঠনকে আরও ‘দক্ষ’ ও ‘খরচ-সাশ্রয়ী’ করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তবে এই দক্ষতার মূল্য দিতে হচ্ছে হাজার হাজার কর্মীকে, যাদের অনেকেই হয়তো বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন—নিরলস পরিশ্রম করেছেন, ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনেছেন।
প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, “বাজার পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের কোম্পানি ও টিমগুলোকে প্রস্তুত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।”
অথচ এই পরিবর্তনের অর্থই হচ্ছে হাজার হাজার পরিবারে অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক এবং বেকারত্বের দুশ্চিন্তা।
২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, মাইক্রোসফটে বৈশ্বিক কর্মীসংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার। বিশ্লেষকদের মতে, এই ছাঁটাই কেবল একটি কোম্পানির সিদ্ধান্ত নয়, বরং গোটা প্রযুক্তি খাতে এক পরিবর্তনশীল সময়ের প্রতিচ্ছবি।
গুগল, মেটা, অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো মাইক্রোসফটও এআই ও অটোমেশনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে—যা একদিকে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের কর্মসংস্থানকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের আরও বক্তব্য, ওপেনএআই-এর সঙ্গে মাইক্রোসফটের অংশীদারিত্ব এবং এআইভিত্তিক সেবায় বিপুল বিনিয়োগের ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যাপক অবকাঠামোগত খরচ বহন করতে হচ্ছে।
সেই খরচ সামাল দিতেই হয়তো কর্মীসংখ্যা কমানোর এই কৌশল বেছে নেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে যে প্রযুক্তিগত যুক্তি আছে, তা অস্বীকার করা যায় না। তবে ভুলে গেলে চলবে না, প্রযুক্তির অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি সেই মানুষগুলো, যারা আজ চাকরি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন।
একসময় যারা প্রতিষ্ঠানটির ‘হিউম্যান রিসোর্স’ ছিলেন, তারা আজ হিসেবের খাতায় শুধু ‘সংখ্যা’।
প্রযুক্তি এগিয়ে যাক, কিন্তু যেন মানবিকতাও পাশে থাকে। কারণ দিনশেষে প্রযুক্তির সাফল্য তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়—কোনো মানুষকে ছিটকে ফেলে নয়।