শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন অধ্যায় শুরু

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ জানুয়ারি ২০২১, ২২:৪৯

যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের ঝঞ্ঝামুখর সময় পেছনে ফেলে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ (বুধবার) শপথ নিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন। এছাড়া ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ‘রানিংমেট’ কমলা হ্যারিসও। ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ট্রাম্পের চূড়ান্ত অসহযোগিতা আর সহিংসতার আশঙ্কার মধ্যেই শপথ নেন তারা।

সাধারণত প্রেসিডেন্টের অভিষেক হয়ে থাকে আনন্দ-উল্লাসমুখর পরিবেশে। হাজার হাজার মানুষ অভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপন করতে ওয়াশিংটনে জড়ো হয়। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারিতে কংগ্রেস ভবন ‘ক্যাপিটল হিলে’ ট্রাম্প সমর্থকদের ভয়াবহ হামলার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেদিকেই এবার বেশি মনোযোগ দিতে হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। ওয়াশিংটন ডিসিতে মোতায়েন রাখা হয়েছিল ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সেনা, বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশকিছু রাস্তা, উঁচু সব বেষ্টনী দিয়ে সুরক্ষিত করা হয় ক্যাপিটল ভবন, চলাফেরাতেও আরোপ করা হয় কড়াকড়ি।

জো বাইডেনের জন্য ট্রাম্প এমন এক দেশ রেখে গেছেন, যা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। ১৫০ বছরের ইতিহাসে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেশকে এতটা খারাপ অবস্থায় রেখে যাননি। জনগণের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তৈরি, রাজনৈতিক সহিংসতার পট প্রস্তুত করা, বর্ণবাদী কথাবার্তা এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী উগ্রবাদে হাওয়া দেওয়া, দলীয় মেরুকরণ বাড়ানোই কেবল নয়, করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাহাড়ও রেখে গেছেন তিনি।

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির আমলে বিশেষত শেষ সময়ের বিশৃঙ্খল দিনগুলোতে দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে চরম বিভক্তি এবং অগণতান্ত্রিক আচরণও দেখা গেছে। এসবই হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারির এই কঠিন সময়ের মধ্যেও।

মহামারিতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি নাজেহাল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ রোগের সংক্রমণ এবং মৃত্যু উভয় তালিকাতেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এক নম্বরে। মহামারি মোকাবিলায় ট্রাম্প প্রশাসনের যে লেজেগোবরে অবস্থা হয়েছে, তার খেসারত দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে ভারসাম্যহীনতা।

ট্রাম্পের অবজ্ঞার কারণে দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে বলে অভিযোগ আছে আগে থেকেই। তার ওপর দেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি যখন আরও মারাত্মক রূপ নিতে শুরু করে, তখন ট্রাম্প ছিলেন ‘ভোট কারচুপির’ প্রমাণহীন অভিযোগ এবং এ নিয়ে মামলা করায় ব্যস্ত।

দেশে কোভিড-১৯ টিকাদান শুরু হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের অবহেলায় এ কর্মসূচিতে সমন্বয়হীনতাও চোখে পড়ার মতো। ফলে টিকাদান কার্যক্রমও প্রত্যাশিত গতিতে এগোয়নি। এ কর্মসূচিতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের ধারেকাছেও নেই দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের দায়িত্ব নেওয়া বাইডেনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোভিড-১৯ মহামারি।

বাইডেনের আশঙ্কা ছিল, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় দেরি হলে দেশের মহামারি পরিস্থিতি খারাপ হবে। তার সেই আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্ধারের দায়ভার এখন বাইডেনের কাঁধেই চাপছে। কতটা সফলভাবে তিনি এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।

দেশের এ অবস্থায় মার্কিনিদের এরই মধ্যে ‘জাতি হিসেবে একজোট থাকার’ আহ্বান জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায়ই একটি কথা বলি। তা হলো, যদি আমরা একজোট থাকি, তবে আমাদের অসাধ্য কিছুই নেই। অতীতে কখনোই আমাদের একজোট হয়ে থাকা বর্তমান সময়ের মতো এতটা জরুরি হয়ে ওঠেনি।’

অন্যদিকে, নির্বাচনের পর শেষ বেলাতেও হার স্বীকার না করা ট্রাম্প তুলেছিলেন ভোট জালিয়াতির অভিযোগ। তাই ট্রাম্পের বিদায়েও স্বস্তি মিলবে না। বাইডেন দেশের ভেতরেই এখন যে সবচেয়ে বেশি বাধার মুখে পড়বেন, তা স্পষ্ট।

ক্যাপিটলের ওই ঘটনাকে উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প খুব সফলভাবে মার্কিনিদের মধ্যে বিভক্তি ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে দিতে পেরেছেন। ওই বীজ থেকে চারাও গজাতে শুরু করেছে। বিষবৃক্ষ হওয়ার আগেই বাইডেনকে সেই চারা উপড়ে ফেলতে হবে।

বাইডেন নির্বাচনে অনেক ব্যবধানে ট্রাম্পকে হারালেও ট্রাম্পের ঝুলিতেও ভোট নেহাত কম নেই। অর্থাৎ, ট্রাম্পের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে আস্থা রাখা ভোটারের সংখ্যাও খুব কম না। তাই ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখা এই জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিয়তই মোকাবিলা করে চলতে হবে বাইডেনকে।

এছাড়া ক্যাপিটলে হামলার ঘটনা ঘিরে ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বার অভিশংসনের আরেকটি বাজে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রক্রিয়া কেবল শুরু হয়েছে, শেষ কোথায় তা এখনো জানা নেই। অনেকে এ প্রক্রিয়ায় সমর্থন দিলেও বিরোধিতাও করছেন অনেকেই।

ট্রাম্পকে অভিশংসন দেশে বিভক্তি, অস্থিতিশীলতা আরও বাড়াবে বলে এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের এক সংখ্যালঘু নেতা কেভিন ম্যাককার্থি। নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সামনে এখন এটাও এক চ্যালেঞ্জ।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে