মিয়ানমারে গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় জাতিসংঘের নিন্দা

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:১০

যাযাদি ডেস্ক

মিয়ানমারে বিক্ষোভে গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। দেশটির মান্দালয় শহরে গতকাল শনিবার পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিব নিন্দা প্রকাশ করলেন।

 

এদিকে গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই মিয়ানমারের জনপ্রিয় অভিনেতা লু মিনকে আটক করা হয়েছে। সরকারি পেশাজীবীদের বিক্ষোভে যোগ দিতে প্ররোচিত করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।

 

গতকাল শনিবার মান্দালয় শহরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ তাঁদের ওপর গুলি চালায়। সেখানে দুজন নিহত হয়েছেন। ২০ জন আহত হয়েছেন।

 

গত নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ওই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। আটক করা হয় এনএলডির নেতা সু চিসহ দলের শীর্ষ নেতাদের। সেই থেকে রাজপথে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।

 

সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে গতকালও মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে ইয়াঙ্গুন শহরে। এতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য ছাড়াও কবি, পরিবহনশ্রমিক ও অন্যান্য পেশার মানুষ অংশ নেন।

 

গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস টুইটে বলেন, ‘মিয়ানমারে চলমান মারাত্মক সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার, ভীতিপ্রদর্শন ও হয়রানির ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’

 

মিয়ানমারের জনপ্রিয় অভিনেতা লু মিনের স্ত্রী খিন সাবাই ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওতে জানান, পুলিশ তাঁদের বাড়িতে এসে লু মিনকে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘তাঁরা জোর করে দরজা খুলে ঢুকে লু মিনকে নিয়ে যান। তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, পুলিশ তা জানায়নি। আমি তাদের থামাতে পারিনি।’

 

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে, বিক্ষোভে যোগ দিতে সরকারি পেশাজীবীদের প্ররোচিত করার অভিযোগ রয়েছে ছয়জন তারকার বিরুদ্ধে। তাঁদের মধ্যে লু মিন ছিলেন। এই অভিযোগে লু মিনের দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। ইয়াঙ্গুনে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভে অংশ নেন লু মিন।

 

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জ মিন তুন এ বিষয়ে রয়টার্সকে কিছু জানাতে চাননি। গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিক্ষোভকারীরা সহিংস আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেন।

 

ইয়াঙ্গুনে গত শনিবার রাতে এক নৈশপ্রহরী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দ্য বার্মিজ সার্ভিস অব রেডিও ফ্রি এশিয়া বলেছে, পুলিশ তাঁকে গুলি করেছে। তবে কী কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা জানা যায়নি।

 

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘মিয়ানমারে চলমান মারাত্মক সহিংসতার নিন্দা জানাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার, ভীতিপ্রদর্শন ও হয়রানির ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।’

 

মিয়ানমারে নিহত বিক্ষোভকারী মিয়া থোতে থোকে খায়ংয়ের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশের গুলিতে আহত ওই বিক্ষোভকারী গত শুক্রবার নিহত হন। ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি গুলিতে আহত হয়েছিলেন। গতকাল শনিবার রাতেও মিয়ানমারে ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়।

 

জান্তা সরকার আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হচ্ছে ও নিন্দার মুখে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা দেশটির শীর্ষ জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিয়ানমার ইস্যুতে বৈঠকে বসবেন। মান্দালয়তে সহিংস ঘটনার পর গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

 

পর্যবেক্ষণকারী দল অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স বলছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৭০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রেলওয়ে কর্মী, সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন। আটকের পর থেকে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিকে আর দেখা যায়নি। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী ১ মার্চ সু চির বিরুদ্ধে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

 

যাযাদি/এসএইচ