ভারতে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী দুই নারী নেত্রী জামিন পেলেন

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২১, ১৮:১৫

যাযাদি ডেস্ক

 

ভারতে রাজধানী দিল্লিতে ২০২০ সালের মে মাসের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একদিন আগে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার সময় যে দু'জন নারী কর্মী গ্রেফতার হয়েছিলেন - তাদের জামিন দিয়েছে উচ্চ আদালত।

 

নাতাশা নারওয়াল এবং দেবাঙ্গনা কালিতাসহ আরো বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে একটি কঠোর সন্ত্রাস-দমন আইনে মামলা করা হয়েছিল।

 

‘প্রতিবাদ জানানোর অধিকারের সাথে সন্ত্রাসী কার্যক্রম গুলিয়ে ফেলার জন্য’ সরকারের সমালোচনা করেছে দু'জন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত দিল্লি হাইকোর্টের বেঞ্চ ।

 

মঙ্গলবার আদালত আসিফ ইকবাল তানহা নামে আরেকজন ছাত্র আন্দোলনকারীর জামিনও মঞ্জুর করেছে। তিনিও গত বছর মে মাসে দিল্লির দাঙ্গা শুরুর কয়েক দিন আগে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।

 

কড়া ভাষায় বর্ণিত এক আদেশে দিল্লি হাইকোর্ট বলেছে, ‘মনে হচ্ছে, ভিন্নমত দমনের তাড়নায় রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত প্রতিবাদের অধিকার এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভেদরেখা গুলিয়ে ফেলেছে। এ মানসিকতা বেগবান হলে তা হবে গণতন্ত্রের জন্য এক দু:খজনক দিন।’

 

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বা সিএএ-র বিরুদ্ধে ছাত্র ও অধিকারকর্মীদের বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন মিজ নারওয়াল ও মিজ কালিতা। সমালোচকদের অভিযোগ এ আইনটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক, তবে সরকার তা অস্বীকার করে।

 

এ আইনের বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভ সমাবেশগুলোর একটি অনুষ্ঠিত হচ্ছিল উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে - যেখানে মিজ নারওয়াল ও মিজ কালিতা অংশ নিয়েছিলেন।

 

এই বিক্ষোভের পাল্টা একটি রাজনৈতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল এর পরদিন - যাতে সিএএ-কে সমর্থন জানানো হয়। সেদিনই শুরু হয় হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ যা পরের কয়েকদিনে রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয়।

 

এতে নিহত হয়েছিলেন ৫৩ জন - যার অধিকাংশই মুসলিম।

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস মহামারিকে ব্যবহার করে ভিন্নমত দমনের অভিযোগ উঠেছে।

 

দেশটিতে অধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও বিক্ষোভকারীদের জেলে পাঠানোর জন্য ঔপনিবেশিক আমলের দেশদ্রোহিতা আইন ও সন্ত্রাসদমন আইনকে কাজে লাগানো হয়েছে - যাতে জামিন পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

 

নাতাশা নারওয়াল এবং দেবাঙ্গনা কালিতা - যাদের বয়স ৩০এর কোঠায় - দুজনই 'পিঞ্জরা তোড়' (খাঁচা ভাঙো) নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

 

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের মেয়েদের সন্ধ্যের মধ্যে ঘরে ফিরতে হবে - এমন একটি নিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে এর সূচনা হয়েছিল। তবে পরে এটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে এবং সংখ্যালঘু, দলিত, কৃষক ও শ্রমিকদের অধিকারের আন্দোলনে পরিণত হয়।

 

মিজ নারওয়ালকে এর আগে মে মাসে তিন সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়া হয়েছিল - তার পিতা সিপিএম নেতা মহাবীর নারওয়াল কোভিড-১৯ সংক্রমণ-পরবর্তী জটিলতায় মারা যাবার পর। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

 

যাযাদি/এসআই