​আফগানিস্তানে ১০ লাখ শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে!

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:২৯

যাযাদি ডেস্ক

 

শীত আসার আগেই আফগানিস্তানের লাখ লাখ মানুষের খাবার ফুরিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

 

তিনি বলেছেন, তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানো না গেলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে প্রায় ১০ লাখ শিশু মারাও পড়তে পারে।

 

সোমবার জেনিভায় জাতিসংঘের এক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আফগান সংকট নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি এসব বলেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।

 

গুতেরেস বলেন, ‘তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশটিতে দারিদ্র্যের হার হু হু করে বাড়ছে। জনসাধারণের জন্য থাকা সাধারণ সরকারি পরিষেবাগুলো ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধে অনেকে ঘরহারাও হয়েছেন।’

 

‘কয়েক দশকের যুদ্ধ, দুর্ভোগ আর নিরাপত্তাহীনতার পর তারা (আফগান) সম্ভবত তাদের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ের মুখোমুখি,’ বলেছেন তিনি।

জাতিসংঘের এ মহাসচিব বলেছেন, এখন প্রতি ৩ আফগানের একজন জানেন না, পরের বেলার খাবার কোথায় মিলবে।

 

সোমবার জেনিভাসময় সন্ধ্যার দিকে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গুতেরেস জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানে ১০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের জরুরি সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

 

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড আফগানিস্তানে খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাতে করা নতুন তহবিলে ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 

জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, আফগানিস্তানের শিশুদের ঝুঁকিই এখন সবচেয়ে বেশি।

 

‘কোনোমতে বেঁচে থাকতে দেশটির প্রায় এক কোটি ছেলে-মেয়ে মানবিক ত্রাণের উপর নির্ভরশীল। চলতি বছরই অন্তত ১০ লাখ শিশু ভয়াবহ পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হতে পারে এবং চিকিৎসা ছাড়া মারা পড়তে পারে,’ বলেছেন জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েতা এইচ ফোর।

 

ঝড়ের গতিতে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্য তালেবান যোদ্ধারা দেশের সিংহভাগের নিয়ন্ত্রণে নিলেও তার আগে থেকেই খরার কারণে সৃষ্ট খাদ্য সংকট মোকাবেলায় আফগানিস্তানকে হিমশিম খেতে হচ্ছিল।

 

দুর্যোগের কারণে দেশটি ৪০ শতাংশ ফসল হারিয়েছে বলে অনুমান বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির। গমের দাম বেড়ে গেছে ২৫ শতাংশ। দাতা সংস্থাগুলোর মজুদে থাকা খাবারও চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফুরিয়ে যেতে পারে।

 

যুদ্ধের দুর্ভোগ, জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা- এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তালেবান ক্ষমতাসীন হওয়ায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তা। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে গত কয়েক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অনেক কর্মীই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি ছেড়ে পালিয়েছেন। যারা আছেন, তালেবানের নিয়মকানুনে তারাও যে কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই।

 

জেনিভায় সম্মেলনে জাতিসংঘ প্রথমে আফগানিস্তানে জরুরি সহায়তা বাবদ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ৬০ কোটি ৬০ লাখ ডলার চেয়েছিল; কেবল অর্থেই যে সব হবে না, তাও স্বীকার করে নিয়েছিল তারা। দাতা সংস্থার কর্মীরা যেন নিরাপদে আফগানিস্তানের যে কোনো জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারে, তালেবানকে তার নিশ্চয়তা দিতেও চাপ দিচ্ছে তারা।

 

বৈঠকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানে জরুরি সহায়তার যে আশ্বাস দেয়, তা জাতিসংঘের চাহিদা অতিক্রম করে যায়।

 

তালেবান দাতা সংস্থার কর্মীদের আফগানিস্তানে অবাধে কাজ করতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ‘তা যথেষ্ট নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা মিশেল ব্যাশেলেট।

 

কট্টর ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকেই আফগানিস্তান একটি ‘নতুন ও বিপজ্জনক পর্বে’ প্রবেশ করেছে, বলেছেন তিনি।

 

‘তালেবান নারীর অধিকার সমুন্নত রাখার আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে নারীদের ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে,’ বলেছেন তিনি।

 

দাতা সংস্থার কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে তালেবানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতির অধিক কিছু নেওয়া উচিত, জেনিভায় মানবাধিকার কাউন্সিলকে ব্যাশেলেট এমনটাই বলেছেন। 

 

যাযাদি/এসআই