বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিরল ঘটনা, পাকিস্তানে প্রকাশ্যে তোষাখানার উপহার

যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৩:৫৪
পাকিস্তানের তোষাখানার কিছু সংগ্রহ

পাকিস্তানের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য, আমলা, বিচারক ও সেনা কর্মকর্তারা তোষাখানার নিয়ম ভেঙে নামমাত্র মূল্যে বিদেশি উপহারসামগ্রী নিজেদের কাছে রেখেছেন। স্বচ্ছতা আনতে এসব তথ্য এখন প্রকাশ করছে দেশটির সরকার।

গত বছর জাতীয় অ্যাসেম্বলি থেকে ইমরানকে বহিষ্কার করে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের অভিযোগ, ইমরান তোষাখানার উপহার কিনে নেওয়ার কথা গোপন করেছেন। জেলা ও দায়রা আদালতে এই নিয়ে মামলাও চলছে। তারপরেই তোষাখানায় দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানে বিতর্ক আর আলোচনায় তোষাখানার উপহার। বিদেশি এসব উপহার নিয়েছিলেন দেশটির বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টসহ আরও অনেকেই। এবার স্বচ্ছতা আনতে ২০০২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ও সরকারী পদধারীদের বিদেশি উপহারের বিবরণ প্রকাশ করে দেশটির সরকার।

প্রধানমন্ত্রী পদে থাকাকালে ইমরান খান অনেক উপহার পেয়েছিলেন। সেগুলো তোষাখানায় জমা না দিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলো তাঁর সমালোচনা করেন। কেউ কেউ মামলার হুমকি দেন, এমনকি পরোয়ানাও জারি হয় ইমরানের। অথচ এই একই অপরাধ করেছেন পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোটের হেভিওয়েট অনেক নেতাই।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ছাড়াও তোষাখানা থেকে বিদেশি উপহার নিয়েছিলেন দেশটির বর্তমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টসহ আরও অনেকেই।

দেশের সরকার ও বিদেশি রাষ্ট্র থেকে সরকারি প্রতিনিধিরা যে উপহার পান, তাই জমা করা হয় তোষাখানায়। কয়েক দিন আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছিলেন, এই তোষাখানার নথি প্রকাশে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে সরকার। তারপরেই প্রকাশিত হলো নথি।

৪৪৬ পাতার এ নথিতে ২০০২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তোষাখানায় যা যা উপহার জমা পড়েছে, তা রয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টরা ওই সময়কালে যা যা উপহার পেয়েছেন, তা-ও রয়েছে নথিতে।

ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুসারে, প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি, প্রয়াত সামরিক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাফরুল্লাহ খান জামালি, সিনেট চেয়ারম্যান সাদিক সানজরানি, অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, শেখ রশিদ আহমেদ, খুরশিদ কাসুরি, আবদুল হাফিজ শেখ, জাহাঙ্গীর তারিন, শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং ড. আতাউর রহমানসহ রয়েছে আরও অনেকের নাম।

২০২৩ সালে নতুন পাক সরকারের প্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা বিভিন্ন দেশ থেকে ৫৯টি উপহার পেয়েছেন। সরকারি নথিতে লেখা রয়েছে, ২০২২ সালে সরকারি প্রতিনিধি, কর্মকর্তারা ২২৪টি উপহার পেয়েছেন। ২০২১ সালে তাদের পাওয়া উপহারের সংখ্যা ১১৬। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ১৭৫ আর ২০১৫ সালে সংখ্যাটা ছিল ১৭৭। ২০১৪ সালে ৯১টি উপহার জমা পড়েছে তোষাখানায়।

সাবেক পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, ইউসুফ রাজা গিলানি, রাজা পারভেজ আশরাফ, ইমরান খান, নওয়াজ শরিফ ক্ষমতায় থাকার সময় বিদেশি রাষ্ট্র থেকে কী কী পুরস্কার পেয়েছিলেন, তাও লেখা রয়েছে নথিতে।

প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় উপহার পাওয়া কিছু জিনিস পরে দাম দিয়ে কিনে নিয়েছিলেন ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবি। অভিযোগ, জিনিসগুলোর যা দাম ছিল, তার থেকে অনেক কম টাকা দিয়ে সেগুলো কিনেছিলেন তিনি। সরকারের প্রকাশ করা নথিতে সেই তথ্যও রয়েছে।

তোষাখানার নথি থেকে জানা গেছে, প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ পাকিস্তানি মুদ্রার সোনা ও হীরা বসানো ঘড়ি তোষাখানা থেকে কিনে নিয়েছিলেন ইমরান। তিনিই ঘড়িটি পেয়েছিলেন। এর আগে বা পরে কোনো পাক প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট বা কোনো মন্ত্রী এত দামী উপহার পাননি। অভিযোগ, আসল দামের থেকে অনেক কম দামে ইমরান কিনেছিলেন সেটি।

ঘড়িতেই শেষ নয়। ৫৬ লাখ পাকিস্তানি মুদ্রার কাফলিংক, ১৫ লাখ পাকিস্তানি মুদ্রার পেন, ৮৭ লাখ পাকিস্তানি মুদ্রার আংটিও কিনে নিয়েছিলেন ইমরান। এগুলো তিনি উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। হীরের ঘড়িসহ ওই জিনিসগুলো পরে মাত্র ২ কোটি পাকিস্তানি মুদ্রার বিনিময়ে কিনে নিয়েছিলেন তিনি। সেই নিয়েই তৈরি হয় বিতর্ক।

পাকিস্তান তেহরিক ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান আরও একটি ঘড়ি কম দামে কিনে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ঘড়িটির দাম ছিল প্রায় ৩৮ লাখ ৮০ হাজার পাকিস্তানি মুদ্রা। ইমরান মাত্র ৭ লাখ ৫৪ হাজার পাকিস্তানি মুদ্রায় সেই ঘড়ি কিনে নিয়েছিলেন।

১৯৭৮ সালে এই তোষাখানা স্থাপন করে পাকিস্তান। নিয়ম হয়, সরকারি কর্মকর্তা থেকে আমলা, সংসদের প্রতিনিধিরা যা উপহার পাবেন, তা তোষাখানায় জমা করতে হবে। ১০ হাজার পাকিস্তানি মুদ্রার কম দামি জিনিস শুধু নিজের কাছে রাখতে পারবেন সরকারি প্রতিনিধি, মন্ত্রী ও আমলারা।

দেশটির সংবাদপত্র ডন দাবি করেছে, উপহারের দামের একটা অংশ মিটিয়ে দিলে তা নিজের কাছে রাখতে পারেন সরকারি প্রতিনিধি। তবে দামের কত অংশ, তা স্পষ্ট নয়।

যদিও বার বার সেই নিয়ম ভাঙা হয়েছে পাকিস্তানে। সব থেকে বেশি অভিযোগ উঠেছে ইমরানের বিরুদ্ধে। ভোটে মনোনয়ন জমা করার সময় যে হলফনামা দিয়েছিলেন তিনি, তাতে ওই সব উপহার কেনার উল্লেখ ছিল। তারপরেই নড়েচড়ে বসে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। তদন্ত শুরু করে। এরপরেই কম দামে উপহার কেনার কথা প্রকাশ্যে আসে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে