পুরো গাজা ধ্বংসস্তুপ, অক্ষত হামাসের ৮০ শতাংশ টানেল
প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৬
প্রায় চারমাস ধরে আকাশ, সাগর ও স্থলপথে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা করছে ইসরায়েল। প্রায় পুরো গাজা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্যে নির্বিচারে হামলা করছে ইসরায়েল। তবে হামাসের মূল শক্তি সেখানকার টানেলের এখনও ৮০ শতাংশই অক্ষত রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলার সত্ত্বেও হামাসের সুড়ঙ্গের জটিল নেটওয়ার্কের ২০ শতাংশও ক্ষতি হয়নি। এর ৮০ শতাংশ এখনও অক্ষত রয়েছে। আমেরিকান ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলি হামলা সত্ত্বেও হামাসের কয়েকশ কিলোমিটার সুড়ঙ্গের বেশিরভাগ অংশ এখনও সুরক্ষিত।
খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের জন্য হামাসের সিনিয়র নেতাদের বন্দী এবং ইসরায়েলি বন্দীদের উদ্ধারের জন্য টানেল নিষ্ক্রিয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা হামাস টানেলের সঠিক তথ্য জানেন না। তারা অনুমান করেন যে, টানেল সিস্টেমের ২০% থেকে ৪০% ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা অকার্যকর হয়ে গেছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত বা অব্যবহৃত টানেল উত্তর গাজা উপত্যকায় অবস্থিত। এখন ইসরায়েলকে হামাস নির্মূল বা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার যেকোনো একটি বিষয় ভাবতে হতে পারে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে কথা বলার একজন সিনিয়র ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন যে, খান ইউনিসের একটি টানেলে হামাসের কমান্ড সেন্টারে সিনওয়ারের পাশাপাশি কিছু বন্দী রাখা হয়েছে। সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং সামরিক বিশ্লেষকরা জোর দিয়েছিলেন যে সিনওয়ার এবং জিম্মিদের যে টানেলে রাখা হয়েছে সেখানে আক্রমণ করলে ইসরায়েলি জিম্মিদের মৃত্যু হতে পারে।
প্রতিবেদনে হাইলাইট করা হয়েছে যে, এই ঝুঁকির কারণে তেল আবিব প্রশাসন হামাস নেতা সিনওয়ারকে টার্গেট করা এবং ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি নিয়ে আলোচনার মধ্যে দ্বিধায় পড়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলায় এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার ৪২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলা বন্ধের কোনো আশা মিলছে না। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের এক মন্ত্রী বলছেন যে, গাজায় যুদ্ধ চলতে পারে এক প্রজন্ম ধরে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, গত একদিনে গাজায় নিহত হয়েছে অন্তত ১৬৫ জন আহতের সংখ্যা ২৯০। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন ৬৫ হাজার ৮৭ জন।
ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে যদি আরো অনেক বেশি ফিলিস্তিনি রাফায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এমন অবস্থায় সেখানে নাগরিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে গাজার ৮৫% জনসংখ্যা খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়া গাাজর ৬০% অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরায়েলের যুদ্ধ ১০ বছর বা এমনকি একটি পুরো প্রজন্ম স্থায়ী হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন নেতানিয়াহু সরকারের একজন সিনিয়র সদস্য। যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন, হুমকি নির্মূল করতে সময় লাগবে।
এদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হামাসের ব্যবহার করা অস্ত্রগুলোর অন্যতম উৎস ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
যাযাদি/ এস