ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে গুপ্তহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
ইরানের রাজধানী তেহরানে হানিয়ার আবাসস্থলে হামলায় বুধবার ভোরে হানিয়ার সঙ্গে তার এক দেহরক্ষীও নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় প্রতিশোধ নিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি এবার সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ও ইসরায়েলে গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।
ইরানের রাজধানী তেহরানে এক হামলায় হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও তার একজন দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। হামাসের শীর্ষ নেতার এই হত্যাকাণ্ডে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
এদিকে মঙ্গলবার ইসরাইলি হামলায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হিজবুল্লাহ কমান্ডার শুকুর নিহত হয়েছেন। কারণ, শুকুর ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত গোলান হাইটসে আক্রমণের পেছনে ছিলেন বলে মনে করা হয়। সেই আক্রমণে ১২ জন শিশু-কিশোর মারা গিয়েছিল।
হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে চিহ্নিত করেছে আমেরিকা, জার্মানিসহ কয়েকটি দেশ। ওই ঘটনার পর ইসরাইল হানিয়াকে তাদের একজন 'টার্গেট' বলে জানায়। এখনো পর্যন্ত হানিয়ার মৃত্যু নিয়ে ইসরাইল কোনো কথা বলেনি, তবে অভিযোগের আঙুল তাদের দিকেই রয়েছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, হানিয়ার হত্যার তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য- বিষয়ক গবেষক কেলি পেটিলো বলেছেন, এই দুই হত্যাকাণ্ডের প্রভাব গোটা অঞ্চলের ওপর পড়বে। তিনি বলেছেন, ঠিক কী প্রভাব পড়বে তা এখনই বলা কঠিন, তবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকা উচিত।
এই গবেষক বলছেন, হানিয়ার মৃত্যুর পর ইসরাইল হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে শেষ করে দিল। এই রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন মধ্যপন্থি। কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির চেষ্টা করছে, তাতে হানিয়ার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
কেলির মতে, এখন সামরিক শাখার নেতারা আরও বেশি করে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন পাবেন। তারাও বলতে পারবেন, হানিয়া আলোচনার রাস্তায় গিয়েছিলেন। তার কী হাল হলো তা দেখা যাচ্ছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় ধাক্কা
চীনও একটা প্রয়াস করছিল। তারা ১৪টি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর মধ্যে আলোচনার ব্যবস্থা করেছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা কে শাসন করবে, তা নিয়ে একটা মতৈক্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। হানিয়ার মৃত্যু তাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
এছাড়া হামাস যাদের বন্দি করে রেখেছে, তাদের মুক্তির ব্যাপারেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
জেরুসালেমে হিব্রু ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাইমন উলফগ্যাং বলেছেন, হানিয়ার মৃত্যুর প্রভাব কী হবে, তা এখনই আন্দাজ করাটা কঠিন। তবে বন্দিমুক্তি নিয়ে আলোচনা একেবারে শেষ পর্যায়ে ছিল। এই হত্যাকাণ্ড তার ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে।
হিজবুল্লাহ ও ইরানের ওপরও প্রবল চাপ
কেলি পেটিলো বলেছেন, শুকুর ছিলেন হিজবুল্লাহর দুই নম্বর নেতা। ফলে তার হত্যার পর হিজবুল্লাহ প্রত্যাঘাত করতে চাইবে। তার মতে, হিজবুল্লাহ ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত বাড়বে তাই নয়, হিজবুল্লাহ নব উদ্যমে এই সংঘাতের মধ্যে নিজেদের জড়াতে পারে।
সাইমন উলফগ্যাং বলেছেন, বহু বছর ধরে হিজবুল্লাহ ও হামাসকে সমর্থন করছে ইরান। তেহরানে হানিয়ার মৃত্যু ইরানকে ধাক্কা দেওয়ার মতো ঘটনা। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন প্রেসিডেন্টের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় এটা ঘটলো। এটাও দেখানো হলো, ইরান তার অতিথিকেই নিরাপত্তা দিতে পারে না।
পেটিলো বলেছেন, ইরানের মাটিতে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তাই ইরান এখন প্রত্যাঘাত করতে চাইবে। তাদের দিকে এখন নজর থাকবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে
যাযাদি/ এস