তেহরাণের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ইরান-যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ | ১১ মে ২০২৫, ১৪:৪৬

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যেই ইরানকে তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে বলছে। 

তবে তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান আলোচনার জন্য সহায়ক নয়। পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মতপার্থক্যেও মধ্যেও ফের আলোচনায় বসছে ইরান-যুক্তরাষ্ট। বেশ কিছু ‘রেড লাইন’ বা ‘সীমারেখা’ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকলেও তেহরান ও ওয়াশিংটন উভয়েই বলছে, তারা তাদের কয়েক দশকের বিরোধ ক‚টনৈতিকভাবে মিটিয়ে ফেলতেই আগ্রহী।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে যাচ্ছেন; তার আগে ওয়াশিংটন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। দুই পক্ষের আলোচনাকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে রোববার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ও ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ওমানি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে চতুর্থ দফার আলোচনায় বসছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বেশ কিছু ‘রেড লাইন’ বা ‘সীমারেখা’ নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকলেও তেহরান ও ওয়াশিংটন উভয়েই বলছে, তারা তাদের কয়েক দশকের বিরোধ ক‚টনৈতিকভাবে মিটিয়ে ফেলতেই আগ্রহী। নতুন পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছাতে এবং সামরিক সংঘাত এড়াতে এখন এই ‘রেড লাইন’ নিয়েই মধ্যস্থতাকারীদের ভাবতে হচ্ছে। 

উইটকফ বৃহস্পতিবার ব্রেইটবার্ট নিউজকে বলেছিলেন, ওয়াশিংটনের ‘রেড লাইন’ হচ্ছে ‘কোনো সমৃদ্ধকরণ নয়। অর্থ্যাৎ, সমৃদ্ধকরণ বন্ধ, পারমাণবিক অস্ত্রধর হওয়া যাবে না’। যার মানে দাঁড়াচ্ছে, ইরানকে তার নাতানজ, ফরদো ও ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা পুরোপুরি গুটিয়ে ফেলতে হবে। “এই বিষয়ে যদি রোববারের আলোচনায় ফলপ্রসূ কিছু না হয়, তাহলে এই আলোচনা চলতে পারে না এবং আমরা ভিন্ন পথ নেবো,” সাক্ষাৎকারে বলেছেন উইটকফ। ট্রাম্প এর আগে ক‚টনীতি ব্যর্থ হলে ইরানের ওপর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। 

উইটকফের এ মন্তব্যের জবাবে শনিবার আরাগচি বলেন, ইরান তার পারমাণবিক অধিকারের ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। “ইরান আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে, তবে এই আলোচনার লক্ষ্য যদি হয় ইরানের পারমাণবিক অধিকার সঙ্কুচিত করা, তাহলে আমি স্পষ্টভাবে বলছি. ইরান তার কোনো অধিকার থেকে একচুলও পিছিয়ে আসবে না,” বলেছেন তিনি। ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে আগ্রহী তেহরান, কিন্তু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ কিংবা মজুদকৃত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হস্তান্তরের মতো প্রসঙ্গ হচ্ছে ‘ইরানের রেড লাইন’, যা নিয়ে আলোচনায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। 

আলোচনায় অংশ নেওয়া ইরানি দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠ এক ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’ ও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো গুটিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে দাবি তা আলোচনায় অগ্রগতি আনার বদলে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। “প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে তার সঙ্গে আলোচনায় তারা যা বলছে তার মধ্যে পার্থক্য আছে,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন ওই কর্মকর্তা। রোববার আলোচনা শুরুর পর বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলেও মত তার। এই আলোচনা গত ৩ মে রোমে হওয়ার কথা থাকলেও ‘লজিস্টিকাল কারণে’ তা বাতিল করতে হয় বলে পরে ওমান জানিয়েছিল।

ইরান তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়েও কোনো ধরনের আলোচনায় রাজি নয়; পাশাপাশি কোনো চুক্তি হলে ট্রাম্প যে সেখান থেকে বেরিয়ে যাবেন না সে বিষয়েও নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তা চাইছে তারা। ফেব্রæয়ারি থেকে ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগে’ নিষেধাজ্ঞাসহ নানান পদক্ষেপ নেওয়া ট্রাম্প ২০১৮ সালে ওয়াশিংটনকে তার তিন বছর আগে তেহরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির করা পরমাণু চুক্তি থেকে বের করে আনেন এবং ইরানের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেন। 

তেহরান বারবার বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘শান্তিপূর্ণ’, পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর লক্ষ্য নেই তাদের। তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে ২০১৫ সালের চুক্তি থেকে বের করে নেওয়ার পর ইরানও চুক্তিতে দেওয়া নানান প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন শুরু করতে থাকে। ২০১৯ সাল থেকে নাটকীয়ভাবে বাড়াতে বাড়াতে ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৬০% পর্যন্ত বিশুদ্ধতার মাত্রায় নিয়ে গেছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে মোটামুটি ৯০ শতাংশ লাগে, বলছে জাতিসংঘের আনবিক শক্তি সংস্থা।


যাযাদি/আর