চীন বানাচ্ছে আত্মঘাতী ড্রোনবাহী মনুষ্যবিহীন আকাশযান

প্রকাশ | ২০ মে ২০২৫, ১৪:২৯

যাযাদি ডেস্ক
চীনের জিউ তান আকাশ যান। ছবি: সংগৃহীত

ড্রোনবাহী উড্ডয়নক্ষম এমন এক আকাশযান তৈরি করছে চীন, যে  আকাশযান থেকে একসঙ্গে ১০০টি কামিকাজে (আত্মঘাতী) ড্রোন উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। 

জানা যায়, ‌‌‌‘জিউ তান’ নামের এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও দূরপাল্লার ইউএভি (আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেল) কামিকাজে ড্রোন ছাড়াও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বহন করতে সক্ষম।

চীনা রাষ্ট্র পরিচালিত গণমাধ্যমের বরাত দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, গত সপ্তাহে জিউ তানের চতুর্থ প্রোটোটাইপের কাঠামো তৈরি সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে সেটির ইনস্টলেশন ও পরীক্ষা চলছে। আগামী মাসেই এর প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন অনুষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে চীন তাদের বিমানবাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়াতে চাইছে।

শানজি আনম্যানড ইকুইপমেন্ট টেকনোলজি নামক চীনা প্রতিষ্ঠান  এই ‘জিউ তান’ আকাশযানটি তৈরি করেছে। 

গত বছরের নভেম্বরে দেশের বৃহত্তম ঝুহাই এয়ার শোতে এই আকাশযানটি প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয়। 

২৫ মিটার দীর্ঘ ডানার এই যান টানা ১২ ঘণ্টা উড়তে পারে এবং এর সর্বোচ্চ পাল্লা ৭ হাজার কিলোমিটার অর্থাৎ, এটি ৭ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে।

এটির টেক-অফ ওজন ১৬ টন অর্থাৎ, উড্ডয়নের সময় এটি সর্বোচ্চ ১৬ টন বা ১৬ হাজার কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারবে। যদিও বিমানটির নিজস্ব ওজন বাদ দিলে এটি সর্বোচ্চ ৬ হাজার কেজি পর্যন্ত বহন করতে পারবে। 

এই ওজনের মধ্যে নজরদারি প্রযুক্তি থেকে শুরু করে গোলাবারুদ পর্যন্ত যেকোনো কিছু বহনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

নতুন এই উড়োজাহাজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক—এটি একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক ড্রোন উৎক্ষেপণ করতে পারে, যা শত্রুপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানানো কঠিন করে তুলবে। 

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে এর একটি প্রতিরূপ দেখানো হয়েছে। ড্রোনের এই ঝাঁক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি এবং পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টার জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। 

চীন-তাইওয়ানের মধ্যে সংঘাত বাড়লে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে এই নতুন উড়োজাহাজ।

ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং মাঝারি পাল্লার আকাশ-থেকে-আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, যেমন পিএল-১২ এফ বহন করতেও পারে। এটি ভূমি থেকে ৪৯ হাজার ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় উড্ডয়নে সক্ষম। 

এর উচ্চ উচ্চতায় পৌঁছানোর ক্ষমতা এটিকে ভূমিভিত্তিক রাডার সিস্টেমের কাছে শনাক্ত করা কঠিন করে তুলবে এবং বিশ্বের অনেক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর দিয়ে উড়তে পারবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ড্রোন যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

বিশেষ করে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধে এর কেন্দ্রীয় ভূমিকার কারণে।
 
এরই মধ্যে চীন ড্রোনের ক্ষেত্রে বিশাল সক্ষমতা তৈরি করেছে। এ বছরের শুরুতে দেশটি টিপি ১০০০ নামে একটি ড্রোন পরীক্ষা করেছে, যা এক টনের বেশি পণ্য বহনে সক্ষম প্রথম মনুষ্যবিহীন পরিবহন বিমান। 

দেশটি এর আগেও দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান প্রণালির বিতর্কিত দ্বীপগুলির চারপাশে ডব্লিউজেড-৭ এবং এবং টিবি-০০১ স্করপিয়ন ড্রোনের মতো দীর্ঘস্থায়ী ড্রোন পরিচালনা করেছে।

জিউ তান চীনের আকাশপথে সক্ষমতা বাড়ানোর সর্বশেষ প্রচেষ্টা হতে পারে। এই ড্রোন যুক্তরাষ্ট্রের সক্ষমতার সঙ্গে টক্কর দিকে সক্ষম।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই ড্রোনবাহী আকাশযান দুটি আমেরিকান ড্রোন ‘আরকিউ-৪ গ্লোবাল হ্যক’ এবং ‘এমকিউ-৯ রিপারের’ সম্ভাব্য প্রতিযোগী হতে পারে। 

তবে এই দুটির কোনোটিই ড্রোনের ঝাঁক বহনে সক্ষম নয়। জিউ তান চীনের অস্ত্রাগারের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন, যা অন্য কারও নেই।