আবারও ভুল! ইয়েমেনে আটকে পড়ছে আমেরিকা
প্রকাশ | ২৪ মে ২০২৫, ১৮:৪৯

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আফগানিস্তান একটি দগদগে ক্ষত। এক সময় সোভিয়েত সেনা সরাতে আফগান মুজাহিদিনকে শক্তি জুগিয়েছিল ওয়াশিংটন, কিন্তু সেই দানবই পরে তার দিকে ছোবল হেনেছে। প্রায় দুই দশক ধরে অর্থ, অস্ত্র ও সৈন্যপ্রাণ বিসর্জন দিয়েও আফগান ভূমি শেষমেশ ফাঁকা হাতে ছাড়তে হয়েছে আমেরিকাকে।
তবে আফসোসের বিষয়, সেই কঠিন অভিজ্ঞতা থেকেও ওয়াশিংটন যেন কোনো শিক্ষা নেয়নি। এবার নতুন যুদ্ধমঞ্চ ইয়েমেন। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দরিদ্র এই দেশটিতে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ইসরায়েলের ওপর হুথিদের দফায় দফায় হামলা ও আক্রমণাত্মক বার্তার জবাবে, ওয়াশিংটন গত মার্চ থেকে সরাসরি সামরিক পদক্ষেপে নামে।
ড্রোন হামলা, যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে তাণ্ডব শুরু করলেও কৌশলী হুথিরা পাল্টা প্রতিরোধে উঠে পড়ে লাগে। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, ইতিমধ্যে ৭টি মার্কিন রিপার ড্রোন হুথিরা ভূপাতিত করেছে, প্রতিটির বাজারমূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মার্কিন এফ-৩৫ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কয়েকবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল, যার ফলেই ব্যয়বহুল ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা বেড়ে যায়।
এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট যুদ্ধবিমান দুটিও জলসীমায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে পড়ে। হুথিদের কৌশলী প্রতিরোধ, ধারাবাহিক মিসাইল হামলা ও সেনাদের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ৬ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বিমান হামলা সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওমানের মধ্যস্থতায় হুথিদের সঙ্গে গোপন আলোচনায় বসে ওয়াশিংটন। পরবর্তীতে হুথি নেতারা ঘোষণা দেন, তারা লোহিত সাগর, বাব আল-মান্দেব ও এডেন উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে আর হামলা চালাবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র আবারও একটি ভিন্ন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় গিয়ে আটকে পড়েছে—যেখানে উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে সব কিছু সমাধান করা সম্ভব নয়। স্থানীয় প্রতিরোধ, ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক সহানুভূতির অভাবে, ইয়েমেন হয়ে উঠছে এক নতুন ‘আফগানিস্তান’, যেখানে জয় নয়, কৌশলী সমঝোতাই একমাত্র পথ।
এখন প্রশ্ন, ওয়াশিংটন কি এবার সত্যিই অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেবে? নাকি ইয়েমেনও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হবে আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যর্থ যুদ্ধের প্রতিচ্ছবি?