ভারতের হুমকি মোকাবিলায় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মহলে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে
প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২৫, ১১:২১

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের সামনে ভারতের কর্মকাণ্ডের ফলে উদ্ভূত ‘আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি’ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন পাকিস্তানের একটি শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সোমবার (২ জুন) এই ব্রিফিং হয়। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিনিধি দলটি নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যাতে ‘ভারতীয় অপপ্রচার উন্মোচিত’ করা যায় এবং পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরা যায়। ডেনমার্ক, গ্রিস, পানামা, সোমালিয়া, আলজেরিয়া, গায়ানা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং স্লোভেনিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা সাক্ষাৎ করেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘে পরামর্শের জন্য সাবেক তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুই সাবেক পররাষ্ট্র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত দুই সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং একজন বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল রবিবার নিউইয়র্কে পৌঁছান।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন—পিপিপি চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি, হিনা রব্বানি খার, খুররম দস্তগীর, সেনেটর শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সাবজওয়ারি, বুশরা আনজুম বাট, এবং জালিল আব্বাস জিলানি ও তেহমিনা জানজুয়া।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের বিলাওয়াল বলেন, ‘ভারতের শহরাঞ্চল লক্ষ্য করে হামলা এবং সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি। গবেষণা বা প্রমাণ ছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সামরিক উত্তেজনায় পাকিস্তান একটি মেপে চলা, দায়িত্বশীল ও জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।’
‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত কেবল সংঘাত-পরবর্তী সমাধানে সীমাবদ্ধ না থেকে সংঘাত-পূর্ব প্রতিকার খুঁজে বের করা যাতে দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা যায়।’
প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের বলেন, ‘সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত হলে পাকিস্তানে পানি সংকট, খাদ্য সংকট ও পরিবেশগত ধ্বংস নেমে আসতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিনিধিরা পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বিলাওয়াল বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ হয়েছে।
ভারতের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মুখে পাকিস্তানের ‘নীতি নির্ধারিত ও দায়িত্বশীল অবস্থান’ তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সংযম, কূটনীতি, সংলাপ ও নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। ভারত সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘনের মাধ্যমে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে হওয়া দরকার।
পাকিস্তান সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করে এবং নিজেই একাধিকবার সীমান্তের বাইরে থেকে পরিকল্পিত সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েছে। আমরা সংঘাত চাই না, তবে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
এর আগে জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ভারতীয় আগ্রাসন নিয়ে আলোচনা করেন প্রতিনিধি দলটি।
বিলাওয়াল চীনা কর্মকর্তাকে পাকিস্তানের ‘দায়িত্বশীল আচরণ’ সম্পর্কে অবহিত করেন এবং ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার সময় চীনের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
এছাড়া প্রতিনিধি দল জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। তারা ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) রাষ্ট্রদূতদের সম্মিলিত অধিবেশনেও বক্তব্য রাখবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনপ্রণেতা, থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক বিশ্লেষক এবং শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রতিনিধি দলটি।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সৈয়দ তারিক ফতেমীর নেতৃত্বে আরও একটি প্রতিনিধি দল ২ জুন থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মস্কো সফর করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘এই সফরগুলোর উদ্দেশ্য হলো সাম্প্রতিক ভারতীয় আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা।’