খাদ্য সংগ্রহে গিয়ে গাজায় প্রাণ গেল ছয় সন্তানের বাবার
প্রকাশ | ০৩ জুন ২০২৫, ১২:২৫

দক্ষিণ গাজার নাসের হাসপাতালে গতকাল সোমবার (২ জুন) শোকের ছায়া নেমে আসে। কয়েক ডজন মানুষ হোসাম ওয়াফির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে জড়ো হন। ছয় সন্তানের বাবা হোসাম রাফাহতে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্য সংগ্রহে গিয়ে প্রাণ হারান।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মাধ্যমে জানা যায়, রবিবার (১ জুন) ভোরে রাফাহতে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি গুলিতে ৩১ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন হোসাম ওয়াফিও।
তার মা নাহলা ওয়াফি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘সে তার মেয়েদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছিল, আর ফিরে এলো মৃতদেহ হয়ে।’
হোসাম তার ভাই ও ভাগ্নেকে সঙ্গে নিয়ে রাফাহর নবনির্মিত একটি ত্রাণকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। পরিবারের দাবি, এ সময় তাদের লক্ষ্য করে ড্রোন থেকে গুলি ছোড়া হয়। তার মা বলেন, ‘তারা কেবল ময়দা কিনতে গিয়েছিল।
কিন্তু ড্রোন এসে তাদের ওপর হামলা চালায়।’ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর ২টা থেকে ৪টার মধ্যে রাফাহর আল-আলম জংশনে হাজার হাজার মানুষ ত্রাণ সংগ্রহের আশায় ভিড় জমান। ঠিক সেই সময়েই শুরু হয় গুলিবর্ষণ।
নাসের হাসপাতালের উঠানে হোসামের ছোট মেয়েরা সাদা কাফনে মোড়ানো তাদের বাবার মৃতদেহকে চুমু দিচ্ছিল।
হোসামের চাচা আলী ওয়াফি বলেন, সে গিয়েছিল এক টুকরো রুটির জন্য। আর এখন আমরা তাকে কবর দিচ্ছি। তাকে তো বাচ্চাদের খাওয়াতে হতো।
যদিও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানেটেরিয়ান ফাউন্ডেশন, যারা বিতরণকেন্দ্র পরিচালনা করে, দাবি করেছে এমন কোনো হামলা ঘটেনি। সেনাবাহিনী বলেছে, ভোরের আগে রাফাহ বিতরণকেন্দ্র থেকে এক কিলোমিটার দূরে তারা ‘সতর্কতামূলক গুলি’ ছুড়েছিল মাত্র।
রাফাহর এই ঘটনার পর রেড ক্রসের ফিল্ড হাসপাতালে ১৭৯ জন আহত ব্যক্তি আসেন, যাদের মধ্যে ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আইসিআরসি জানায়, আহতরা সবাই খাদ্য সংগ্রহে গিয়েছিলেন এবং বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ বা ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন।
জাতিসংঘ বলছে, গাজা উপত্যকার পুরো জনসংখ্যা এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে। এটি একটি মৌলিক মানবিক অধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ, যা ইসরায়েলি সামরিক কৌশলেরই অংশ বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা (ওএইচসিএ) মধ্য গাজার নেটজারিম করিডরে একটি বিতরণকেন্দ্রের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় বিশাল জনতা একটি করিডরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ চিৎকার করছে, আবার কেউ অভিযোগ করছে- খাবারের প্যাকেট চুরি গেছে।