ইসরায়েলের ইরান অভিযানে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুদ্ধের আশঙ্কা
প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২৫, ০৮:০৩

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নতুন এক ভয়ঙ্কর মোড় নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইসরায়েল তার বিমানবাহিনীর মাধ্যমে ইরানের সামরিক এবং পারমাণবিক স্থাপনায় একযোগে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী একে ‘মেজর স্ট্রাইক’ বা ‘বৃহৎ আঘাত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই ঘটনার পর গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুশিয়ার করে বলেন, ‘যতক্ষণ প্রয়োজন, ততক্ষণ অভিযান চলবে’। তার ভাষ্য, “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের হুমকি দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। আমরা এবার চুপ থাকবো না। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ রক্ষায় এই অভিযান যতদিন প্রয়োজন ততদিন চলবে।”
তিনি বলেন, ইরান এখন শুধু ইসরায়েলের নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।
ইরান জানিয়েছে, হামলার পরপরই তেহরানের ইমাম খোমেইনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। রাজধানী তেহরানে বিমান হামলার শব্দে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, কিছু আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা বেশ কিছু ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এখনও স্পষ্ট নয়।
বিশ্ব গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলের আঘাতের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু গবেষণা ও সামরিক ঘাঁটিগুলো। যদিও ইরান বলছে, তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় কোনো বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।
তবে কিছু বিশ্লেষক বলছেন, ইসরায়েল চায় ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র অর্জনের পথে আর না বাড়ে। সেই কারণেই তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল নাতাঞ্জ ও ফোরদোর মতো স্থাপনা।
হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই হামলায় আমরা কোনোভাবেই জড়িত নই। তবে আমাদের ঘাঁটি বা সেনাদের ওপর ইরান হামলা চালালে আমরা চুপ থাকবো না।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছিলেন, ওয়াশিংটন তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক পথে আগাতে চায়। কিন্তু এই হামলার পর কূটনৈতিক চেষ্টাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘ মহাসচিব সংঘাতের দ্রুত অবসান চান, বলেছেন “মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে”।
রাশিয়া ও চীন ইসরায়েলের হামলার সমালোচনা করে একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলেছে।
সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখনো সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি তবে কূটনৈতিকভাবে উত্তেজনা হ্রাসে আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা কেবল ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। যদি ইরান পাল্টা হামলা করে, তবে সেটি সিরিয়া, ইরাক কিংবা লেবাননের মাধ্যমে আসতে পারে। হিজবুল্লাহ বা অন্যান্য প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমেও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে—অন্যথায় এই সংঘাত একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: পটভূমি ও ভবিষ্যৎ
২০১০ সাল থেকে ইসরায়েল বারবার ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে আসছে।
২০২0 সালে ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যায় ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলে দাবি করে তেহরান।
গত এক দশকে মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে ইরান ও ইসরায়েলের ছায়াযুদ্ধ চলছে—বিশেষত সিরিয়া ও লেবাননে।