ধর্মীয় ভাবাবেগে যুদ্ধের নামকরণ: ইরানের ‘সত্য ওয়াদা’ বনাম ইসরাইলের ‘জাগ্রত সিংহ’
প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৫, ১৮:১৮ | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৫, ১৮:৪৪

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরাইল ও ইরানের সামরিক অভিযানে উঠে এসেছে ধর্মীয় প্রতীকের ব্যবহার। ইসরাইলের সাম্প্রতিক অভিযান যেখানে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ বা ‘জাগ্রত সিংহ’ নামে পরিচিত, সেখানে এর জবাবে ইরান তার পাল্টা অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’—বাংলায় যার অর্থ ‘তৃতীয় দফায় সত্য প্রতিশ্রুতি’।
দুই রাষ্ট্রের এই অভিযানের নামকরণ শুধুমাত্র কৌশলগত নয়, বরং তা সরাসরি জড়িয়ে আছে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবাদর্শের সঙ্গে। ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল তার অপারেশনের নাম নিয়েছে বাইবেল থেকে, আর ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার অভিযানের নাম রেখেছে কোরআনভিত্তিক ধর্মীয় প্রতিশ্রুতির প্রতীক হিসেবে।
কোরআনের আলোকে ‘সাচ্চা ওয়াদা বা সত্য প্রতিশ্রুতি’
ইসলামি পরিভাষায় ‘সাচ্চা ওয়াদা’ বা ‘ট্রু প্রমিস’ একটি গভীর বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধের প্রতীক। এটি এমন এক অঙ্গীকার, যা একজন মুসলমান পালন করতে বাধ্য, বিশেষ করে যখন তা ধর্ম, জাতি কিংবা দেশের স্বার্থে দেওয়া হয়। কোরআনের বিভিন্ন সূরায়—বিশেষত সূরা আল-মায়েদায়—প্রতিশ্রুতি রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে এবং এর ব্যত্যয়কে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এই নামকরণে মূলত তাদের দেশরক্ষা ও ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
‘জাগ্রত সিংহ’ কোথা থেকে?
অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভিযানের নাম ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নেওয়া হয়েছে হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ সংখ্যা ২৩:২৪ থেকে। সেখানে বর্ণিত আছে, “দেখো, একদিন মানুষ সিংহের মতো ঘুম ভেঙে উঠবে, যুবক সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে; যতক্ষণ না সে শিকার করে, সে থামবে না।”
এই বাইবেলীয় ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, ইসরায়েল তাদের অভিযানকে এক ধরনের ধর্মীয় দায়বদ্ধতা এবং আত্মরক্ষার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছে।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হামলার ঠিক আগের দিন জেরুজালেমের পবিত্র ওয়েস্টার্ন ওয়ালে গিয়ে প্রার্থনা করেন এবং একটি কাগজে লেখা বার্তা সেখানে গুঁজে দেন। এরপরই শুরু হয় ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’।
ধর্মীয় ব্যাখ্যায় নতুন মাত্রা
বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধের ময়দানে ধর্মীয় প্রতীকের এই ব্যবহার মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলছে। একদিকে বাইবেলীয় সিংহের ভবিষ্যদ্বাণী, অন্যদিকে কোরআনের ওয়াদা—দুই পক্ষই নিজ নিজ ধর্মীয় ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অবস্থানকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করতে চাইছে।
যদিও এই প্রতীকী নামকরণগুলো আপাতদৃষ্টিতে শুধুমাত্র কৌশলগত মনে হলেও, আসলে এর ভেতরে লুকিয়ে আছে দীর্ঘদিনের ধর্মীয় শত্রুতা ও রাজনৈতিক চাপানউতোরের প্রতিফলন।