পর্বতের নিচে গোপন পারমাণবিক ঘাঁটি: ইরানের ‘ফোর্ডো’ ঘিরে নতুন উদ্বেগ

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২৫, ১৬:৩৩

বিশেষ প্রতিনিধি
সংগৃহীত

ইরানের পবিত্র নগরী কোম-এর নিকটবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে একটি গোপন ও শক্তিশালী পারমাণবিক স্থাপনা—ফোর্ডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট। স্যাটেলাইট চিত্র ও আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে, এটি বর্তমানে ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, স্থাপনাটির প্রধান হলগুলো মাটির ৮০ থেকে ৯০ মিটার নিচে অবস্থিত, যা আধুনিক যুদ্ধবিমান বা বাঙ্কার-ধ্বংসী বোমা দিয়েও সহজে ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

 

সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে:

  • পর্বতের মধ্যে প্রবেশ করা পাঁচটি সুড়ঙ্গ

  • একটি বিশাল সহায়ক কাঠামো

  • চারপাশে উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত এলাকা

 

ইসরায়েলি হামলার সম্ভাবনা ও বাস্তবতা: ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানে একাধিক আঘাত হেনেছে। তবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ফোর্ডো এখনো অক্ষত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েল হয়তো এই স্থাপনাটি আঘাত করতে সক্ষম হয়নি, অথবা কৌশলগত কারণে হামলা করেনি।

পারমাণবিক বোমার আশঙ্কা: বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, এই ঘাঁটি থেকেই ইরান দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করতে পারে, বিশেষ করে বর্তমানে তাদের ইউরেনিয়াম মজুদের যে পরিমাণ রয়েছে তা পর্যাপ্ত।

২০০৯ সালের উন্মোচন ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: ২০০৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন এক যৌথ বিবৃতিতে ফোর্ডো স্থাপনাটির অস্তিত্ব প্রকাশ করেন।

ওই সময় ওবামা বলেন “এই স্থাপনাটির আকার এবং কার্যক্রম শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যের সঙ্গে মেলে না।”

ঘোষণার কিছুদিন আগে ইরান নিজেই IAEA-কে জানায় যে তারা একটি নতুন ফুয়েল এনরিচমেন্ট স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনায় আছে—যদিও ফোর্ডোর নির্মাণ কাজ তখন কয়েক বছর ধরেই চলছিল।

তেহরানের অবস্থান ও চাপে মিত্ররাও:  ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রাশিয়া ও চীনের মতো মিত্র দেশগুলোও এই স্থাপনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।


বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ফোর্ডো কেন্দ্রটি বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির আশঙ্কা, ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিলতা — সব মিলিয়ে ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।