'প্রলয়োল্লাস' কাঁপছে মধ্যপ্রাচ্য: বিশ্বজুড়ে আণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক!

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২৫, ১৮:২৪ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ১৮:২৯

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: যায়যায়দিন গ্রাফিক্স

এক মহাবিস্ফোরণ, অর্থাৎ 'বিগ ব্যাং' থেকে আমাদের এই পৃথিবীর জন্ম। কিন্তু মানবসভ্যতার সমাপ্তিও কি আরেকটি ভয়ংকর বিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই হবে? পুরাণকথিত ভস্মাসুরের মতো আত্মঘাতী মানুষই কি এই পরিণতির জন্য দায়ী হবে, যেখানে একদা আশীর্বাদ হয়ে আসা শক্তিই শেষমেশ অভিশাপে পরিণত হবে? মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক অস্থিরতা যেন ঠিক সেই ভয়ংকর পরিণতির দিকেই দ্রুত ধাবিত হচ্ছে।

বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েল একে অপরকে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রলয়োন্মাদনার সৃষ্টি করছে। এই আগুনে যেন আরও ঘি ঢালছে যুক্তরাষ্ট্র। পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA)। সংস্থাটির প্রধান মারিয়ানো গ্রসি জানিয়েছেন, ইরানের পরমাণু ঘাঁটিতে ইসরায়েলের হামলার পর তারা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির ওপর নিবিড় নজর রাখছেন। প্রয়োজনে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। 

প্রশ্ন উঠছে, তবে কি আমরা হিরোশিমা-নাগাসাকি বা চেরনোবিলের মতো দুঃস্বপ্নের স্মৃতি আবারও ফিরে দেখব? নাকি তার চেয়েও ভয়াবহ কোনো কিছুর সাক্ষী হতে চলেছে মানবসভ্যতা? সবচেয়ে বড় কথা, এতে লাভ কার?

মানুষ আসলে আত্মবিস্মৃত এক প্রাণী, অনেকটা 'গজনি' সিনেমার আমির খানের চরিত্রের মতো। যুদ্ধক্লান্ত পৃথিবীর ইতিহাস তার জ্বলন্ত প্রমাণ। মাত্র ৭৫ বছরেই আমরা কীভাবে ভুলে গেলাম 'লিটল বয়' এবং 'ফ্যাটম্যান' নামের দুটি পরমাণু বোমা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিকে কীভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল! হিরোশিমার ১ লাখ ৪০ হাজার এবং নাগাসাকির ৭৪ হাজার মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যুশোক কত সহজেই যেন আমরা হজম করে ফেলেছি! এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীকালে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের শিকার হয়ে হিরোশিমায় ২ লাখ ৩৭ হাজার এবং নাগাসাকিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করেছে। এমন দুঃস্বপ্ন ভুলে গিয়ে আজ দুটি রাষ্ট্র একে অপরকে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিচ্ছে! তাহলে কি মানুষই এই গ্রহের সবচেয়ে নির্বোধ প্রাণী? চেরনোবিলের কথাই বা কী করে ভুলি!

চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনা হিরোশিমা-নাগাসাকির ঘটনার মতো অত পুরনোও নয়। ১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনা। প্রাথমিকভাবে ৩১ জনের মৃত্যু হলেও, চেরনোবিলের বিষক্রিয়ায় ৩ লাখ ৪০ হাজার মানুষের জীবন নরক হয়ে উঠেছিল। এদের অধিকাংশই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হন বা বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন। 

সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, চেরনোবিল বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তা শুধু তৎকালীন রাশিয়ার অংশ ইউক্রেনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সুইজারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড, বেলারুশ, নরওয়ে, ইতালি, গ্রিস-সহ ইউরোপের ১২টি দেশে তেজস্ক্রিয় দূষিত পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছিল। মাইলের পর মাইল বিস্তৃত কৃষিজমি, অসংখ্য নদীর জল বিষাক্ত হয়ে ওঠে। সংলগ্ন বনাঞ্চলের প্রাণীরাও রেহাই পায়নি; তারাও ধীরে ধীরে যন্ত্রণাকাতর হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

বিস্ফোরণের ৩৯ বছর পরেও চেরনোবিল একটি মনুষ্যবর্জিত পরিত্যক্ত শহর। বিশেষজ্ঞদের মতে, চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের বিস্ফোরণটি ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমায় নিক্ষিপ্ত পরমাণু বোমার চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। বিস্ফোরণ-পরবর্তী বিষাক্ত মেঘ ইউক্রেন, রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে স্ক্যান্ডিনেভিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, এমনকি পূর্ব আমেরিকার আকাশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ভয়াবহ স্মৃতিগুলো থেকে শিক্ষা না নিলে, মানবসভ্যতা কি সত্যিই আরেকটি প্রলয়ের দিকে এগিয়ে যাবে?