হামলায় যুক্তরাষ্ট্র যোগ দিলে ‘সমুচিত জবাব দেবে’ইরান 

প্রকাশ | ১৮ জুন ২০২৫, ১৭:৩৮

যাযাদি ডেস্ক
ছবি সংগৃহীত

ইসরায়েলের সামরিক হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নিলে ইরান যে সমুচিত জবাব দেবে ওয়াশিংটনকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘে তেহরানের রাষ্ট্রদূত আলি বাহরেনি।

বুধবার জেনিভাতে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বাহরেনি জানান, ইসরায়েল যা করছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের সহযোগীই মনে করছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘ইরান একটি রেড লাইন ঠিক করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সেটি অতিক্রম করে তাহলে আমরা জবাব দেবো।’ তবে কী কী কাজকে তেহরান ‘উসকানি’ বিবেচনা করে পাল্টা জবাব দেবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি।

শুক্রবার ইসরায়েল আচমকা ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর গত ছয়দিন ধরে দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে আকাশপথে একের পর এক হামলা, পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

তেল আবিব বলছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় তারা এ হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে।

অন্যদিকে তেহরান বলছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায় না। তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।

তার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেছেন।

বাহরেনি বলেন, ‘ট্রাম্পের মন্তব্য পুরোপুরি অযৌক্তিক এবং অত্যন্ত বৈরি। আমরা এগুলো উপেক্ষা করতে পারি না। ট্রাম্প যা বলছেন সে ব্যাপারে আমরা সজাগ। এটা আমরা আমাদের গণনা এবং মূল্যায়নের মধ্যে রাখবো।’  

যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইসরায়েল অভিমুখ যাওয়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করাসহ অন্যান্য উপায়ে তেল আবিবকে পরোক্ষ সহায়তা করছে। তরে এরই মধ্যে তারা মধ্যপ্রাচ্যে অনেক যুদ্ধবিমান নিয়ে এসেছে বলে তিন মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন।

জাতিসংঘে ইরানের এ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে (ইরানের সামরিক বাহিনী) জোরাল, আনুপাতিক ও যথোপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, যখন প্রয়োজন হবে তখন আমরা জবাব দেবো।’ 

এদিকে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী এহসান খান্দুজি হরমুজ প্রণালীতে ইরানের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, এমন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত যেন ইরানিদের অনুমতি ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ জলসীমা দিয়ে কোনো ট্যাংকার বা এলএনজিবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করতে না পারে।

তেহরান এর আগে বারবারই পশ্চিমা চাপ মোকাবেলায় সরু হরমুজ প্রণালী আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে, তবে কখনোই তা কার্যকর করেনি।

‘এই নীতি (হরমুজ প্রণালী আটকে দেওয়া) কার্যকর করা গেলে তা মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। এটি কার্যকরে দেরি হওয়ার অর্থই হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা’ মঙ্গলবার এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন খান্দুজি।

এ প্রসঙ্গে মন্তব্য চাইলেও ইরানের তেল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সাড়া পায়নি রয়টার্স।

খান্দুজি ইরানের আগের সরকারে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মন্ত্রী ছিলেন। তার সঙ্গে ইরান প্রশাসনের কট্টরপন্থিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

ওমান এবং ইরানের মধ্যে অবস্থিত হরমুজ প্রণালী সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক ও কুয়েতের মতো উপসাগরীয় তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির জন্য প্রধান রপ্তানি রুট।

বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে যত জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়, তার প্রায় ২০%, অর্থ্যাৎ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল, এই প্রণালীটি দিয়ে যায়। জলসীমাটির সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানটি মাত্র ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত।